দিল্লিতে আত্মহত্যার একটি মর্মান্তিক ঘটনা সামনে এসেছে, যেখানে এই প্রথম হিলিয়াম গ্যাস ব্যবহার করে কেউ জীবন দিয়েছেন। ২৫ বছর বয়সী চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ধীরজ কানসাল রাজধানীর বারখাম্বা রোডে অবস্থিত একটি পেয়িং গেস্ট হাউসে আত্মহত্যা করেছেন। পুলিশের মতে, দিল্লিতে হিলিয়াম গ্যাস দিয়ে আত্মহত্যার এটি প্রথম ঘটনা। ধীরজ হরিয়ানার কারনালের বাসিন্দা ছিলেন এবং গুরুগ্রামের একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। তিনি ২০ জুলাই থেকে বাঙালি মার্কেটের একটি গেস্ট হাউসে ছিলেন।
ফেসবুকে সুইসাইড নোট পোস্ট করে জীবন দিলেন
আত্মহত্যা করার আগে ধীরজ ফেসবুকে একটি সুইসাইড নোটও পোস্ট করেছিলেন, যাতে তিনি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে তার মৃত্যুর জন্য অন্য কেউ দায়ী নয়। তিনি আরও লিখেছিলেন যে যদি তার ফেসবুক পোস্ট মুছে ফেলা হয়, তবে ঘরে পাওয়া সুইসাইড নোটটি তার চিন্তাভাবনা স্পষ্ট করার জন্য যথেষ্ট হবে। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে যখন ২৮ জুলাই তার চেকআউটের সময় পেরিয়ে যায় এবং গেস্ট হাউসের ঘর থেকে তীব্র দুর্গন্ধ আসতে শুরু করে। খবর পেয়ে পুলিশ, এফএসএল এবং দমকল বিভাগের দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। ধীরজের মরদেহ বিছানায় পড়ে ছিল, তার মুখে হিলিয়াম সিলিন্ডারের পাইপ লাগানো ছিল এবং মুখ মাস্ক ও প্লাস্টিক দিয়ে ঢাকা ছিল যা টেপ দিয়ে গলার কাছে আটকানো ছিল। ঘটনাস্থল থেকে একটি সিলিন্ডার, মাস্ক ও গ্যাস মিটার উদ্ধার করা হয়েছে।
পুরো পরিকল্পনা করে আত্মহত্যা
পুলিশের তদন্তে জানা গেছে যে ধীরজ আত্মহত্যার পুরো পরিকল্পনা আগে থেকেই করেছিলেন। তিনি মেহরৌলির মহিপালপুর এলাকায় একটি পিজি-তে থাকতেন এবং একটি অনলাইন ওয়েবসাইট থেকে হিলিয়াম গ্যাস অর্ডার করেছিলেন। এরপর ইচ্ছাকৃতভাবে বারখাম্বা রোডে অবস্থিত গেস্ট হাউসে এসে আত্মহত্যা করেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তার মোবাইল এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক গ্যাজেট উদ্ধার করেছে, যা তদন্ত করা হচ্ছে।
ধীরজের পারিবারিক পটভূমিও তার মানসিক অবস্থাকে প্রভাবিত করেছিল। পুলিশ জানতে পেরেছে যে ধীরজের বাবা ২০০৩ সালে মারা যান, এরপর তার মা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। তার কোনো ভাই-বোন ছিল না এবং তিনি দীর্ঘদিন ধরে একা জীবন যাপন করছিলেন। গুরুগ্রামের কোম্পানিতে তার কাকার সহায়তায় তিনি চাকরি পেয়েছিলেন।
আত্মহত্যার পদ্ধতিতে হতবাক
এই ঘটনাটি আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে কারণ সাধারণত হিলিয়াম গ্যাস পার্টি বা সাজসজ্জার জন্য বেলুন ফোলাতে ব্যবহার করা হয়, কিন্তু ধীরজ এটি জীবন দেওয়ার জন্য ব্যবহার করেছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, হিলিয়াম গ্যাস শ্বাস নেওয়ার সময় শরীরে অক্সিজেনের স্থান দখল করে, যার ফলে কয়েক মিনিটের মধ্যে শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যু হয়। বর্তমানে পুলিশ মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে এবং ঘটনার সব দিক থেকে তদন্ত করা হচ্ছে।