দিল্লিতে ডেঙ্গুর প্রকোপ: লক্ষণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা

দিল্লিতে ডেঙ্গুর প্রকোপ: লক্ষণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা

দিল্লিতে বর্ষা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রোগের প্রকোপ বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে ডেঙ্গু, যা প্রতি বছর এই সময়ে তার ডানা বিস্তার করে, এবারও রাজধানীতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুসারে, দিল্লিতে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুর ২৭৭টি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে, যেখানে ম্যালেরিয়ার ১২৪টি এবং চিকুনগুনিয়ার ১৮টি মামলা সামনে এসেছে। এই পরিসংখ্যান স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে এখন আর গাফিলতির সময় নেই।

গত বছর ডেঙ্গুতে ১১ জন প্রাণ হারিয়েছেন, এবং এ বছরও যদি সময় থাকতে সতর্কতা অবলম্বন না করা হয়, তবে এই সংখ্যা আরও ভয়াবহ হতে পারে। ডেঙ্গু একটি ভাইরাল সংক্রমণ, যা এডিস ইজিপ্টি মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। এই মশা দিনের বেলা কামড়ায় এবং জমে থাকা পরিষ্কার পানিতে বংশবৃদ্ধি করে। এমতাবস্থায়, আমাদের এর লক্ষণগুলি বোঝা, সচেতন থাকা এবং সময় মতো চিকিৎসা করানো জরুরি।

ডেঙ্গু কী এবং কীভাবে ছড়ায়?

ডেঙ্গু একটি মশা বাহিত ভাইরাল জ্বর, যা বিশেষভাবে বর্ষাকালে ছড়ায়। যখন কোনো ডেঙ্গু সংক্রামিত মশা কোনো সুস্থ ব্যক্তিকে কামড়ায়, তখন ভাইরাস তার শরীরে প্রবেশ করে এবং কয়েক দিনের মধ্যেই লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে। ডেঙ্গু চার ধরনের ভাইরাস থেকে ছড়াতে পারে – DENV-1, DENV-2, DENV-3 এবং DENV-4। একবার সংক্রমিত হওয়ার পরে দ্বিতীয়বার যদি আলাদা প্রকারের ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে, তবে ডেঙ্গু আরও বিপজ্জনক রূপ নিতে পারে, যাকে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বলা হয়।

ডেঙ্গুর প্রধান লক্ষণ

ডেঙ্গুর লক্ষণ শুরুতে সাধারণ ভাইরাল জ্বরের মতোই মনে হতে পারে, তবে এই লক্ষণগুলিকে হালকাভাবে নেওয়া ভারী হতে পারে। আসুন জেনে নেওয়া যাক কোন লক্ষণগুলি ডেঙ্গুর দিকে ইঙ্গিত করে:

  • তীব্র জ্বর (৩৮-৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে বেশি) যা ২ দিনের বেশি সময় ধরে থাকে
  • মাথাব্যথা, বিশেষ করে কপাল এবং চোখের পিছনে
  • পেশী এবং জয়েন্টগুলোতে তীব্র ব্যথা (একে ব্রেক বোন ফিভারও বলা হয়)
  • ক্ষুধামন্দা, বমি বমি ভাব এবং বমি
  • ত্বকে লাল ফুসকুড়ি বা র‍্যাশ
  • অত্যধিক ক্লান্তি এবং দুর্বলতা
  • শ্বাস নিতে অসুবিধা বা কাশি
  • পেটে তীব্র ব্যথা বা ক্রমাগত অস্বস্তি

যদি এই লক্ষণগুলির মধ্যে ৩টি বা তার বেশি দেখা যায়, তবে অবিলম্বে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।

কখন পরিস্থিতি গুরুতর হতে পারে?

ডেঙ্গুর গুরুতর ক্ষেত্রে রক্তের প্লেটলেট সংখ্যা দ্রুত কমতে শুরু করে, যার ফলে রক্ত জমাট বাঁধে না এবং শরীরে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ শুরু হতে পারে। যদি সময় মতো চিকিৎসা না করা হয় তবে এটি প্রাণঘাতীও হতে পারে। গুরুতর ডেঙ্গুর লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • মাড়ি বা নাক থেকে রক্ত ​​পড়া
  • প্রস্রাব বা মলে রক্ত
  • বেহুঁশ হওয়া বা মাথা ঘোরা
  • হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া
  • শ্বাস দ্রুত চলা

এই পরিস্থিতিকে মেডিকেল ইমার্জেন্সি হিসেবে ধরা হয় এবং অবিলম্বে হাসপাতালে ভর্তি করা জরুরি।

ডেঙ্গু কিভাবে নির্ণয় করা হয়?

ডেঙ্গু সন্দেহ হলে ডাক্তার সাধারণত রক্তের পরীক্ষা করান। এতে মূলত নিম্নলিখিত পরীক্ষাগুলি করা হয়:

  • NS1 অ্যান্টিজেন টেস্ট – শুরুর ৫ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু শনাক্ত করে
  • IgM এবং IgG অ্যান্টিবডি টেস্ট – সংক্রমণের পরের নিশ্চিতকরণের জন্য
  • CBC টেস্ট (কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট) – প্লেটলেট এবং শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা দেখার জন্য

এই পরীক্ষাগুলির ভিত্তিতে ডাক্তার সঠিক চিকিৎসা নির্ধারণ করেন।

ডেঙ্গু প্রতিরোধের উপায়

ডেঙ্গুর কোনো বিশেষ টিকা বা অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নেই। এর চিকিৎসা লক্ষণগুলির উপর ভিত্তি করে করা হয়। তাই প্রতিরোধই সেরা উপায়:

  • ঘর এবং আশেপাশে জল জমতে দেবেন না, বিশেষ করে কুলার, ফুলদানি, পুরনো টায়ার, বালতি ইত্যাদিতে
  • দিনের বেলা ফুল হাতা পোশাক পরুন
  • মশার হাত থেকে বাঁচতে মশারী এবং রেপেলেন্ট ব্যবহার করুন
  • জানালা এবং দরজায় জাল লাগান
  • জ্বর হলে নিজে থেকে ওষুধ খাবেন না, বিশেষ করে ব্যথানাশক (যেমন আইবুপ্রোফেন) খাবেন না

ডেঙ্গু হলে কী করবেন?

যদি ডেঙ্গু ধরা পড়ে, তবে আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই, তবে ডাক্তারের পরামর্শে সম্পূর্ণ বিশ্রাম নেওয়া জরুরি। ঘরোয়া যত্নে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি জরুরি:

  • প্রচুর তরল পান করুন – যেমন ডাবের জল, স্যুপ, ইলেকট্রল
  • ভারসাম্যপূর্ণ খাবার খান, এবং শরীরকে দুর্বল হতে দেবেন না
  • জ্বরের জন্য শুধুমাত্র প্যারাসিটামল খান (ডাক্তারের পরামর্শে)
  • প্লেটলেট কমতে শুরু করলে সময়মতো হাসপাতালে যান

দিল্লিতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে, এবং এখন সতর্কতা অবলম্বন করার সময়। আপনি বা আপনার পরিচিত কেউ যদি ডেঙ্গুর লক্ষণ অনুভব করেন, তবে দেরি না করে পরীক্ষা করান। লক্ষণগুলি উপেক্ষা করা নিজের এবং নিজের পরিবারের স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।

Leave a comment