দিল্লি থেকে ফিরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দিলীপ ঘোষ জানিয়ে দিলেন, ২১ জুলাই তিনি থাকবেন খড়্গপুরের সভায়—তৃণমূলের শহিদ মঞ্চে নয়। বিজেপি ছাড়ার জল্পনায় কার্যত দাঁড়ি টানলেন তিনি।
দলবদলের জল্পনায় উত্তাল বঙ্গ রাজনীতি, ২১ জুলাই কী করবেন দিলীপ?
গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই রাজ্য রাজনীতিতে আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন দিলীপ ঘোষ। বারবার উঠছিল প্রশ্ন, বিজেপি ছাড়ছেন? ২১ জুলাই কি বড় কোনও রাজনৈতিক মঞ্চে চমক দেবেন? এমনকি জল্পনা চলছিল, সেই দিনেই কি তৃণমূলের শহিদ মঞ্চে দেখা যাবে দিলীপ ঘোষকে? রাজনৈতিক শিবিরের চায়ের আড্ডা থেকে টেলিভিশনের প্রাইমটাইম, একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল—“দিলীপ ঘোষ কোন দলে যাচ্ছেন?” অথচ শনিবার বিকেলে তিনি নিজের মুখে সব জল্পনার ইতি টানলেন।
দিল্লি থেকে ফিরে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি, চূড়ান্ত জানালেন দিলীপ
শনিবার বিকেলে দিল্লি থেকে কলকাতায় ফিরেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রাক্তন সাংসদ। সাফ জানিয়ে দিলেন, “২১ তারিখ আমি খড়্গপুরে থাকব। সেদিন একটা বড় সভা হবে। বাংলায় রাজনৈতিক হিংসায় শহিদ হওয়া বিজেপি কর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সেই সভার আয়োজন করা হয়েছে।” অর্থাৎ, ২১ জুলাই দিলীপ ঘোষ থাকবেন না কোনও নতুন দলে, বরং থাকবেন খাঁটি বিজেপির কর্মসূচিতে। তিনি নিজেই জানিয়ে দিলেন, ওই দিন তিনি থাকবেন না তৃণমূলের শহিদ মঞ্চে, বরং থাকবেন দলের শহিদদের স্মরণে আয়োজিত সভায়।
দিলীপের দিল্লি সফর: চমক না দলের ‘ডিসিপ্লিন’?
দিলীপ ঘোষকে আচমকা দিল্লিতে ডাকা হয়েছিল দলের সর্বভারতীয় সভাপতির নির্দেশে। তখন জল্পনা আরও চাঙা হয়েছিল—তবে কি দিলীপকে 'সামাল' দিতে চাইছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব? দিলীপ বলছেন, দলের সংগঠন সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। জেপি নাড্ডা বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন। বলেছেন, ভালোভাবে কাজ করতে হবে। তাঁর দাবি, এর মধ্যে কোনও চাপ বা সতর্কবার্তা ছিল না, বরং এটি ছিল স্বাভাবিক সাংগঠনিক বৈঠক। দিলীপ জানান, যখন সর্বভারতীয় সভাপতি ডাকেন, তখন সেটা তো অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। সেভাবেই গিয়েছিলাম।
প্রধানমন্ত্রীর সভায় অনুপস্থিতি, বিতর্কের আগুনে ঘি ঢালছিল
দুর্গাপুরের সভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এলেন, কিন্তু সেখানে দেখা গেল না দিলীপ ঘোষকে—এ দৃশ্যই কার্যত ঘৃতাহুতি দিয়েছিল রাজনৈতিক জল্পনায়। অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, দিলীপ ঘোষ হয়তো আর বিজেপির ‘বিশ্বাসভাজন’ নন। যদিও দিলীপ নিজেই বলছেন, আমি বুঝতে পারছিলাম না আমাকে কোথায় রাখা হবে, কী ভূমিকা দেওয়া হবে। এই পরিস্থিতিতে আমার যাওয়া উচিত নয় বলেই মনে হয়েছিল। শেষমেশ, যখন সর্বভারতীয় সভাপতি আমাকে ডেকেছিলেন, তখনই ঠিক করেছিলাম দিল্লি যাব।
দিলীপের খড়্গপুর সিদ্ধান্ত, বার্তা শুধু রাজনীতির জন্য নয়, দলেও
২১ জুলাইয়ের দিনে শহিদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে খড়্গপুরে সভা করার সিদ্ধান্ত নিছক রাজনৈতিক নাটক নয়, এটা যেন দিলীপের নিজের দলে নিজের জায়গা ‘ক্লেইম’ করার বার্তা। তৃণমূলের শহিদ দিবসের ঠিক পাল্টা সময়েই বিজেপি কর্মীদের জন্য সভা—এটাই প্রমাণ করে, এখনও রাজ্যে দিলীপ ঘোষ নিজের মতো করে লড়াই চালাতে চাইছেন। এবং দল ছাড়ার জল্পনায় তিনি আর থাকতে রাজি নন।