‘অপরাজিতা বিল’ রাষ্ট্রপতির কাছে আটকে গেল! ধর্ষণবিরোধী কঠোর আইনের ভবিষ্যৎ কি এখন অনিশ্চিত

‘অপরাজিতা বিল’ রাষ্ট্রপতির কাছে আটকে গেল! ধর্ষণবিরোধী কঠোর আইনের ভবিষ্যৎ কি এখন অনিশ্চিত

রাষ্ট্রপতির দ্বার থেকে ফিরল 'অপরাজিতা বিল' — রাজনৈতিক বার্তা না কি আইনগত প্রশ্ন?

রাজ্য সরকার যেভাবে ‘অপরাজিতা বিল’ পাশ করে ধর্ষণবিরোধী লড়াইয়ে কড়া অবস্থান নিয়েছিল, তার ভবিষ্যৎ আপাতত অনিশ্চিত। কারণ, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু বিলটি ফেরত পাঠিয়েছেন। সূত্র বলছে, বিলের বিভিন্ন ধারা নিয়ে প্রশ্ন তুলে স্পষ্ট ব্যাখ্যা চেয়েছে রাষ্ট্রপতি ভবন। উল্লেখযোগ্য, এই বিলটি তৈরি হয়েছিল কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের মর্মান্তিক ঘটনার পর। একে কেন্দ্র ও রাজ্যের আইনি ও রাজনৈতিক সংঘাতের নতুন অধ্যায় বলেই দেখছে মহল।

মুখ্যমন্ত্রীর কড়া বার্তা থেকে বিধানসভা পেরোনো — ‘অপরাজিতা বিল’-এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

২০২৪ সালের আগস্টে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, ধর্ষণের মত জঘন্য অপরাধ রুখতে রাজ্য সরকার কড়া পদক্ষেপ নিতে চলেছে। সেই ধারাবাহিকতায় বিশেষ অধিবেশন ডেকে বিধানসভায় পাশ হয় ‘অপরাজিতা বিল’। আইন অনুযায়ী, বিলটি রাজ্যপালের অনুমোদনের পর রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের জন্য পাঠানো হয়। কিন্তু দীর্ঘ অপেক্ষার পরও অনুমোদন না মেলায় উদ্বেগ তৈরি হয় প্রশাসনে। এখন রাষ্ট্রপতির দপ্তর থেকে প্রশ্নের ফিরতি চিঠি আরও জটিলতা সৃষ্টি করল।

 কী কী প্রশ্ন তুলেছে রাষ্ট্রপতির দপ্তর? কোথায় ধরা পড়ল অসামঞ্জস্য?

নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাষ্ট্রপতি ভবনের বক্তব্য অনুযায়ী বিলের কয়েকটি প্রস্তাবিত ধারা অতিরিক্ত কঠোর ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, BNS 2023-এর ধারা ৬৪ অনুযায়ী, ধর্ষণের ন্যূনতম সাজা ১০ বছর থেকে বাড়িয়ে সরাসরি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের প্রস্তাব করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির দপ্তর মনে করছে, এই সাজা ‘proportionality in sentencing’-এর নীতির পরিপন্থী হতে পারে। আবার ১৬ ও ১২ বছরের নিচের ধর্ষণের শাস্তিতে শ্রেণি বিভাজন না রাখার প্রস্তাবও আপত্তির জায়গা হয়ে উঠেছে।

কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের নতুন টানাপড়েন, আইন নয় রাজনীতি?

তৃণমূল সূত্রের দাবি, এই বিল নিয়ে আগেই তৃণমূল সাংসদদের একটি প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে অনুরোধ জানিয়েছিলেন বিলটিকে দ্রুত অনুমোদন দেওয়ার জন্য। রাষ্ট্রপতির তরফে তখন আশ্বাসও দেওয়া হয়েছিল বলে শোনা যায়। কিন্তু এখন রাষ্ট্রপতির চিঠি ফেরত আসায়, প্রশ্ন উঠছে — এটি কি নিছক আইনগত আপত্তি, না কি কেন্দ্র ও রাজ্যের সম্পর্কের টানাপড়েনের প্রতিফলন? তৃণমূলের একাংশ বলছে, রাজনৈতিকভাবে রাজ্যের আইন প্রণয়ন ক্ষমতাকে খর্ব করার চেষ্টার ফল এই বাধা।

রাজ্য সরকারের কী পদক্ষেপ? রাজভবনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন

এই মুহূর্তে রাজ্য সরকারের তরফে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না এলেও, নবান্ন সূত্র বলছে, রাজভবনকে বিলটি নিয়ে রাষ্ট্রপতির প্রশ্নগুলির যথাযথ ব্যাখ্যা দিতে বলা হবে। এই প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ বলছে, রাজভবনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির দপ্তরের এমন অবস্থান গ্রহণ আদতে কেন্দ্রের অবস্থানকে প্রতিষ্ঠা করছে এবং তা ভবিষ্যতে রাজ্য-কেন্দ্র সংঘাত বাড়াতে পারে।

Leave a comment