আয়কর বিভাগের কড়া নজরদারি: এআই ব্যবহার করে সন্দেহজনক লেনদেন চিহ্নিত

আয়কর বিভাগের কড়া নজরদারি: এআই ব্যবহার করে সন্দেহজনক লেনদেন চিহ্নিত

আয়কর বিভাগ আজকাল ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন দাখিলের শেষ তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫-এর আগে তাদের কড়াকড়ি বাড়িয়েছে। এখন বিভাগ নোটিশ পাঠানোর ক্ষেত্রেও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অর্থাৎ এআই-এর সাহায্য নিতে শুরু করেছে। যে অ্যাকাউন্ট বা রিটার্নে গরমিল বা তথ্যে অমিল পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলোর ওপর তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে করদাতাদের এআই ভিত্তিক স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমে নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

এআই থেকে সাহায্য পাওয়া যাচ্ছে, দ্রুত সন্দেহজনক লেনদেন ট্র্যাক করা হচ্ছে

আয়কর বিভাগ এখন সনাতন পদ্ধতির বাইরে গিয়ে ডিজিটাল সিস্টেমের মাধ্যমে লেনদেন পর্যবেক্ষণ করছে। ব্যাংক, মিউচুয়াল ফান্ড, ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট এবং ক্রেডিট কার্ড লেনদেনের ডেটা সরাসরি ট্যাক্স সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত। যখনই কোনো বড় বা সন্দেহজনক লেনদেন হচ্ছে, সিস্টেম সেটা ট্র্যাক করে নিচ্ছে এবং যদি সেই সম্পর্কিত তথ্য আইটিআর-এ না পাওয়া যায়, তাহলে এআই অ্যালার্ট ট্রিগার করে দিচ্ছে।

ব্যাংক লেনদেনের সঙ্গে সরাসরি নোটিশের সম্ভাবনা

ব্যাংকগুলোকে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, যদি কোনো ব্যক্তির সেভিংস অ্যাকাউন্টে বছরে ১০ লক্ষ টাকা বা তার বেশি জমা হয়, তাহলে তার ওপর একটি রিপোর্ট তৈরি করে ট্যাক্স বিভাগে পাঠাতে হবে। এই ধরনের ক্ষেত্রে যদি সেই জমার তথ্য আপনি আপনার ট্যাক্স রিটার্নে না দিয়ে থাকেন বা তার উৎস স্পষ্ট না হয়, তাহলে আয়কর বিভাগের নজর আপনার ওপর পড়তে পারে।

একইভাবে, যদি আপনি কোনো একটি আর্থিক বছরে আপনার কারেন্ট অ্যাকাউন্টে ৫০ লক্ষ টাকা বা তার বেশি জমা করেন, তাহলে ব্যাংক সেই ডেটা ট্যাক্স ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে শেয়ার করে।

ক্রেডিট কার্ডের বিল ভরার ওপরও নজর রাখা হয়

যদি আপনি বার্ষিক ১ লক্ষ টাকার বেশি ক্রেডিট কার্ডের বিল ক্যাশে ভরেন, বা ১০ লক্ষ টাকার বেশি অন্য কোনো উপায়ে পরিশোধ করেন, তাহলে এই তথ্য আয়কর বিভাগের কাছে পৌঁছতে পারে। এই লেনদেনগুলোর ডিটেইল যদি রিটার্নের সঙ্গে না মেলে, তাহলে নোটিশের ঝুঁকি থাকে।

আত্মীয়ের কাছ থেকে পাওয়া টাকার ওপরও পড়তে পারে নজর

অনেক সময় লোকেরা তাদের আত্মীয়দের কাছ থেকে বড় অঙ্কের টাকা ট্রান্সফার করান। যদি কোনো ব্যক্তি একবারে বা বছরে ১০ লক্ষ টাকার বেশি উপহার বা অন্য কোনো রূপে পান এবং সেই তথ্য সঠিকভাবে আয়কর রিটার্নে না দেওয়া হয়, তাহলে সেটিও নোটিশের কারণ হতে পারে। বিভাগ জানার অধিকার রাখে যে এত বড় অঙ্কের টাকা কেন এবং কীভাবে ট্রান্সফার করা হয়েছে।

বাড়ির ভাড়া এবং এফডি থেকে পাওয়া সুদের রিপোর্টিং জরুরি

অনেক করদাতা আছেন যারা বাড়ি ভাড়া দেন কিন্তু সেই থেকে হওয়া আয় ট্যাক্স রিটার্নে অন্তর্ভুক্ত করেন না। এখন বিভাগ এই ধরনের আয়ও ট্র্যাক করছে। একইভাবে ফিক্সড ডিপোজিট থেকে হওয়া সুদের আয়ও যদি আপনি উপেক্ষা করে থাকেন, তাহলে সিস্টেম সেটা ধরে ফেলে এবং এই গরমিল আপনার জন্য সমস্যার কারণ হতে পারে।

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কিভাবে পুরো ডেটা প্রোফাইল তৈরি করছে

এআই প্রযুক্তির অধীনে বিভাগ আপনার প্যান নম্বরের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত তথ্য এক জায়গায় যোগ করছে। এতে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, সম্পত্তি ক্রয়, মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ, শেয়ার মার্কেট লেনদেন, লোনের তথ্য এবং আপনার বিগত বছরের ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই পুরো প্রোফাইল থেকে যদি কোনো কার্যকলাপ না মেলে বা গরমিল দেখা যায়, তাহলে অ্যালার্ট তৈরি হয় এবং সেই অনুযায়ী নোটিশ পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়।

বাজার থেকে কেনাকাটা বা অনলাইন খরচও হতে পারে কারণ

আজকাল ডিজিটাল পেমেন্ট এবং অনলাইন খরচ স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু যদি আপনি ক্রমাগত বড় বড় খরচ করছেন, দামি গ্যাজেট কিনছেন বা বিলাসবহুল হোটেলে থাকছেন এবং আপনার রিটার্নে এই সবের কোনো হিসাব না পাওয়া যায়, তাহলে এটিও ট্যাক্স ডিপার্টমেন্টের নজরে আসতে পারে। বিশেষ করে যদি আপনার টিডিএস না কাটে এবং তা সত্ত্বেও আপনি বড় খরচ করেন, তাহলে বিভাগ আপনার কাছে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে।

অনেক করদাতাকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে, ডিপার্টমেন্টের অ্যালার্ট মোড

সম্প্রতি আয়কর বিভাগ হাজার হাজার করদাতাকে নোটিশ পাঠিয়েছে, যেখানে তাদের ব্যাংকিং এবং বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে। বেশিরভাগ মামলাই সেই সব লোকেদের যাদের লেনদেনের তথ্য তাদের আইটিআর-এ দেখা যাচ্ছিল না। বিভাগের নজর এখন পুরোপুরি ডেটা অ্যানালিটিক্স এবং এআই-এর উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে।

শুধু আয় নয়, খরচের ওপরও বাড়ানো হয়েছে নজর

এখন আয়কর বিভাগ শুধু আপনার আয়ের উপরই নয়, আপনার খরচের ওপরও নজর রাখছে। তাই যে কোনো বড় খরচ করার আগে, তার সঠিক তথ্য এবং প্রমাণ রাখুন, যাতে কোনো জিজ্ঞাসাবাদের পরিস্থিতিতে জবাব দেওয়া যেতে পারে।

আগামী দিনে বাড়বে নজরদারি

১৫ সেপ্টেম্বরের আইটিআর ডেডলাইন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে আয়কর বিভাগের নজরদারি আরও কঠোর হতে চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে যাদের রিটার্ন ফাইলিং অসম্পূর্ণ রয়েছে, বা যাদের ফর্ম 26AS এবং AIS ডেটাতে পার্থক্য রয়েছে, তারা অ্যালার্ট পেতে শুরু করেছেন। এআই ভিত্তিক নোটিশ সিস্টেম আগামী সময়ে আরও দ্রুত হতে পারে।

Leave a comment