অ্যাডমিট কার্ড ডাউনলোডে ধাক্কা টেন্টেড প্রার্থীদের আবেদন বাতিল করল এসএসসি

অ্যাডমিট কার্ড ডাউনলোডে ধাক্কা টেন্টেড প্রার্থীদের আবেদন বাতিল করল এসএসসি

হঠাৎ চমক অ্যাডমিট কার্ড ডাউনলোডে

বহস্পতিবার রাত থেকেই প্রার্থীরা লগ ইন করতে শুরু করেছিলেন এসএসসি–র ওয়েবসাইটে। প্রত্যাশা ছিল হাতে মিলবে দ্বিতীয় এসএলএসটি–র প্রভিশনাল অ্যাডমিট কার্ড। কিন্তু অনেকেই লগ ইন করে দেখলেন ভিন্ন চিত্র। সেখানে স্পষ্ট বার্তা— তাঁদের আবেদন বাতিল। কারণ হিসেবে উল্লেখ, তাঁরা ২০১৬ সালের প্রথম এসএলএসটি পরীক্ষায় ‘টেন্টেড’ প্রার্থী হিসেবে চিহ্নিত। এই আকস্মিক ঘটনায় কার্যত হতবাক হলেন বহু চাকরিপ্রার্থী।

বিপুল সংখ্যক প্রার্থীর জন্য অ্যাডমিট কার্ড আপলোড

তবে সব আবেদন যে বাতিল হয়েছে তা নয়। কমিশন জানিয়েছে, মোট ৫ লক্ষ ৮০ হাজার প্রার্থীর প্রভিশনাল অ্যাডমিট কার্ড বৃহস্পতিবার রাতেই ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে। কিন্তু সেই তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন কয়েকশো ‘টেন্টেড’ প্রার্থী। যাঁরা অনেক দিন ধরে নিয়োগ দুর্নীতির মামলার ছায়ায় আচ্ছন্ন ছিলেন, তাঁদের কপালেই পড়েছে সবচেয়ে বড় ধাক্কা।

নিয়োগ দুর্নীতি মামলার রায়েই খারিজের সিদ্ধান্ত

২০১৬ সালের নিয়োগ দুর্নীতির মামলা এখনও অমীমাংসিত। সেই সময় প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। এদের মধ্যে ১৭,২০৬ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। আদালতের নির্দেশে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের মডিফিকেশন অ্যাপ্লিকেশনে ১৫,৪০৩ জনকে আপাতত চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজ চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যাঁরা শূন্য পেয়েও নিয়োগপত্র হাতে পেয়েছিলেন কিংবা র‍্যাঙ্ক জাম্প করেছিলেন, তাঁদের ক্ষেত্রে কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে এসএসসি।

১,৮০০ প্রার্থীকে লক্ষ্য করে কড়া পদক্ষেপ

বাকি প্রায় ১,৮০০ জন প্রার্থীর মধ্যে যাঁরা র‍্যাঙ্ক জাম্প বা মেয়াদোত্তীর্ণ প্যানেলের সুযোগে চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদেরই এবার অ্যাডমিট কার্ড বাতিল করেছে এসএসসি। ফলে স্পষ্ট, নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে যাঁরা টেন্টেড, তাঁদের বিরুদ্ধে এবার বাস্তব পদক্ষেপের পথে হাঁটল কমিশন। আদালতের রায়কেও সঙ্গে রেখেছে তারা।

কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের প্রভাব

প্রসঙ্গত, গত বছর কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের বেঞ্চ ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের রায় দিয়েছিল। কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল— চাল থেকে কাঁকর আলাদা করা সম্ভব হয়নি, তাই গোটা প্যানেলকেই খারিজ করতে হয়েছে। কমিশনের নতুন পদক্ষেপ সেই রায়েরই ধারাবাহিকতা। তবু কমিশনের চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

নতুন নোটিসে স্পষ্ট উল্লেখ

এসএসসি ১৪ অগস্ট রাতে দ্বিতীয় এসএলএসটি–র প্রভিশনাল অ্যাডমিট কার্ড প্রকাশ করে নোটিস জারি করে। তাতে স্পষ্ট বলা হয়, যাঁদের আবেদন বাতিল হয়েছে, তাঁরা ওয়েবসাইটে গিয়ে বাতিলের কারণ জানতে পারবেন। ফলে আর কোনো বিভ্রান্তি থাকল না। এর মধ্য দিয়েই বোঝা গেল, একাধিক প্রার্থীকে সরাসরি ‘অযোগ্য’ ঘোষণা করা হয়েছে।

নজিরবিহীন পদক্ষেপ বলে দাবি

রাজ্যের স্কুলশিক্ষা দপ্তরের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, অ্যাডমিট কার্ড সংক্রান্ত এমন নোটিস আগে কখনও দেখা যায়নি। সাধারণত প্রার্থীরা কার্ড ডাউনলোড করে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন। কিন্তু এবার কমিশন খোলাখুলি জানিয়ে দিয়েছে, টেন্টেড বা অযোগ্যদের অ্যাডমিট কার্ডই জারি করা হবে না। এ পদক্ষেপ তাই বেনজির।

মামলার পথ বন্ধ করতেই কমিশনের কৌশল?

নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্তদের অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে আদালতে লড়াই চালাচ্ছেন। মামলাকারী প্রার্থীদের একাংশের মতে, এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে কমিশন এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চাইছে। আদালতে এতদিন রাজ্য ও কমিশন দাবি করেছে— সফল প্রার্থীদের শারীরিক যাচাই না করলে অযোগ্যদের শনাক্ত করা সম্ভব নয়। এবার প্রভিশনাল অ্যাডমিট কার্ড বাতিল করে কমিশন বলতে পারবে, দুর্নীতিতে অভিযুক্তদের আগেই বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে ভবিষ্যতের মামলার রাস্তা কার্যত বন্ধ হয়ে যাবে।

এখনও শেষ হয়নি যাচাই প্রক্রিয়া

তবে এখানেই থেমে থাকছে না কমিশন। নোটিসে স্পষ্ট বলা হয়েছে— আইন, বিধি ও আদালতের রায় মেনে শারীরিক কিংবা অনলাইন ভেরিফিকেশন চলবে। এমনকি কাউন্সেলিং পর্যায় পর্যন্ত প্রার্থীদের যোগ্যতা যাচাই অব্যাহত থাকবে। অর্থাৎ ‘টেন্টেড’ প্রার্থীদের ধরার প্রক্রিয়া এখনও চলছে। এটি শুধু প্রথম ধাপ।

প্রার্থীদের অনিশ্চয়তা আরও গভীর

এ ঘটনায় একদিকে যেমন স্বচ্ছতা আনার দাবি করছে কমিশন, অন্যদিকে বহু প্রার্থী কার্যত দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। যাঁরা এতদিন ধরে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, হঠাৎ করেই তাঁদের স্বপ্ন ভেঙে গেল। আবার যাঁরা কার্ড ডাউনলোড করতে পেরেছেন, তাঁরাও অনিশ্চয়তায় ভুগছেন— পরবর্তী ভেরিফিকেশন পার হতে পারবেন কি না।

ভবিষ্যতের দিক নির্দেশ

নিয়োগ দুর্নীতি মামলার আঁধারে যে রাজ্যের চাকরি সংক্রান্ত ব্যবস্থায় গভীর সংকট তৈরি হয়েছে, তা ফের একবার স্পষ্ট হল। প্রভিশনাল অ্যাডমিট কার্ড বাতিলের এই পদক্ষেপ অনেকের কাছে স্বস্তি হলেও, আক্রান্ত প্রার্থীদের কাছে এটি ভয়াবহ ধাক্কা। এখন দেখার বিষয়, আদালত এবং কমিশনের এই যৌথ পদক্ষেপে ভবিষ্যতের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা কতটা নিশ্চিত হয়।

Leave a comment