ইয়েমেনে ভারতীয় নার্স নিমিষা প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড স্থগিত: 'ব্লাড মানি'-র মাধ্যমে মুক্তির আশা

ইয়েমেনে ভারতীয় নার্স নিমিষা প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড স্থগিত: 'ব্লাড মানি'-র মাধ্যমে মুক্তির আশা

ইয়েমেনে ভারতীয় নার্স নিমিষা প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড স্থগিত করা হয়েছে। ভারত সরকার আইনি সহায়তা প্রদান করেছে এবং এখন 'ব্লাড মানি'-র মাধ্যমে ক্ষমা পাওয়ার আশা করা হচ্ছে।

Nimisha Priya: ইয়েমেনে ভারতীয় নার্স নিমিষা প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ডাদেশের মামলায় ভারত সরকার তার অবস্থান স্পষ্ট করেছে। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানিয়েছেন যে সরকার এই বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখছে এবং নিমিষা প্রিয়াকে সম্ভাব্য সকল প্রকার সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। আপাতত, ইয়েমেনের আদালত তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ স্থগিত করেছে, যা তার পরিবার এবং শুভানুধ্যায়ীদের জন্য কিছুটা হলেও স্বস্তি এনেছে।

'ব্লাড মানি'-ই শেষ রাস্তা

ইসলামিক আইন অনুযায়ী, নিমিষা প্রিয়াকে বাঁচানোর একমাত্র উপায় হল "ব্লাড মানি"। এই আইন অনুসারে, মৃতের পরিবারকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করা যেতে পারে, যার বিনিময়ে তারা অভিযুক্তকে ক্ষমা করতে পারে। এই প্রক্রিয়াটি ইয়েমেনে আইনত বৈধ এবং অতীতেও অনেক মামলায় এর ব্যবহার হয়েছে।

সরকারের পক্ষ থেকে আইনি সহায়তার ব্যবস্থা

বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে যে ভারত সরকার নিমিষা প্রিয়ার জন্য আইনি সহায়তা নিশ্চিত করেছে। তার জন্য একজন যোগ্য আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে, যিনি ইয়েমেনের স্থানীয় আইন অনুসারে তার পক্ষে লড়ছেন। এর পাশাপাশি, মন্ত্রক তার পরিবারকে আইনি প্রক্রিয়ার বিষয়ে নিয়মিত তথ্য দিচ্ছে এবং স্থানীয় প্রশাসনের সাথেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে।

কয়েকটি বন্ধু দেশের সাথেও যোগাযোগ রাখছে ভারত

রণধীর জয়সওয়াল আরও জানিয়েছেন যে ভারত সরকার কয়েকটি বন্ধু দেশের সাথে যোগাযোগ রাখছে, যারা ইয়েমেনের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। এই দেশগুলির মাধ্যমে এই চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে বিষয়টির সমাধান সংবেদনশীলতা ও মানবিকতার ভিত্তিতে করা যায়। যদিও এই দেশগুলির নাম প্রকাশ করা হয়নি, তবে এই প্রচেষ্টা সরকারের আন্তরিকতাকে প্রমাণ করে।

ভারতে মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন

এই মামলা নিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্টেও একটি আবেদন করা হয়েছিল। আদালতে কেন্দ্র সরকার স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে যেহেতু এই মামলাটি অন্য দেশের বিচার ব্যবস্থার সাথে জড়িত, তাই সরকারের ভূমিকা সীমিত। তা সত্ত্বেও, সরকার কূটনৈতিক ও আইনি স্তরে ক্রমাগত সক্রিয় রয়েছে।

ভারতীয় দূতাবাসের সক্রিয় ভূমিকা

ভারতের বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে যে ইয়েমেনে ভারতীয় দূতাবাস স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে ক্রমাগত যোগাযোগ রাখছে। দূতাবাসের সহায়তায় নিমিষা প্রিয়ার পরিবারকে ইয়েমেনের আইন ও বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, দূতাবাস মৃতের পরিবারের সাথে নিমিষা প্রিয়ার পরিবারের আলোচনায় সহায়তা করেছে। এই আলোচনা "ব্লাড মানি"-র মাধ্যমে একটি পারস্পরিক সমঝোতায় পৌঁছানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

কে এই নিমিষা প্রিয়া?

কেরালার বাসিন্দা নিমিষা প্রিয়া একজন প্রশিক্ষিত নার্স। পড়াশোনা শেষ করার পর তিনি চাকরির সূত্রে ইয়েমেন গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি তলত আবোদ মেহদি নামের এক ইয়েমেনি নাগরিকের সাথে একটি ক্লিনিক শুরু করেন। কিন্তু কিছু সময় পর মেহদি তার সাথে অর্থনৈতিক ও শারীরিক শোষণ করতে শুরু করে। অভিযোগ, সে নিমিষার পাসপোর্ট ও অন্যান্য কাগজপত্র জোর করে কেড়ে নিয়েছিল।

মামলার তদন্ত റിപ്പോர்ட் অনুসারে, নিমিষা তার পাসপোর্ট ফেরত পাওয়ার জন্য তলত মেহদিকে অজ্ঞান করার ইনজেকশন দিয়েছিলেন। দুর্ভাগ্যবশত, এই প্রক্রিয়ায় তার মৃত্যু হয়। এরপর ইয়েমেনের আদালত নিমিষা প্রিয়াকে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে এবং তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।

Leave a comment