কলকাতার বাইপাসের ধারে বুধবার সকালে আচমকা দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল একটি প্লাস্টিকের গোডাউন। গোডাউনের ভিতর মজুত ছিল প্রচুর দাহ্য পদার্থ। মুহূর্তের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে আগুন। স্থানীয়দের অভিযোগ, বিস্ফোরণের মতো শব্দ শুনেই প্রথমে তাঁরা বাইরে বেরিয়ে এসে কালো ধোঁয়া দেখতে পান। এরপর খবর দেওয়া হয় দমকলকে।
কালো ধোঁয়ায় ঢেকে গেল এলাকা, দমবন্ধ পরিস্থিতি
প্লাস্টিকের গোডাউনে আগুন লাগায় চারপাশে ঘন কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায় গোটা এলাকা। শ্বাসকষ্টের আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। অনেকে বাড়ি ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসেন। ছুটোছুটি শুরু হয়। আগুন লাগার জায়গাটি ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় পরিস্থিতি হয়ে পড়ে আরও ভয়াবহ। শিশু ও বৃদ্ধদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
আগুন নিয়ন্ত্রণে ৮টি ইঞ্জিন, যুদ্ধকালীন তৎপরতা দমকলের
খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দমকলের ৮টি ইঞ্জিন। দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রচেষ্টা শুরু করেন দমকলকর্মীরা। টানা কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় পরিস্থিতি আংশিক নিয়ন্ত্রণে আনেন তাঁরা। তবে আগুন সম্পূর্ণভাবে নেভাতে সময় লাগবে বলেই জানানো হয়েছে। আশপাশে অন্য কোনও দাহ্য পদার্থ মজুত রয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কী ছিল গোডাউনে? তদন্তে নেমেছে দমকল ও পুলিশ
স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই গোডাউনে প্রচুর প্লাস্টিক, রং, কেমিক্যাল জাতীয় দ্রব্য মজুত ছিল। দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। গোডাউনের মালিক ঠিক কার, সেখানে কী ধরনের অনুমতি নিয়ে এই বিপজ্জনক দ্রব্য রাখা হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ ও দমকল কর্তৃপক্ষ। অনুমান করা হচ্ছে, শর্ট সার্কিট থেকেই এই অগ্নিকাণ্ড।
প্রাণহানির খবর না থাকলেও ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা
এই মুহূর্তে কোনও প্রাণহানির খবর নেই। তবে প্লাস্টিক, রাসায়নিক দ্রব্য ও অন্যান্য সামগ্রী ভস্মীভূত হওয়ায় লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভিতরে কেউ আটকে পড়েছেন কি না, তা নিশ্চিত হতে গোডাউনের ভেতরে অনুসন্ধান চালাচ্ছে উদ্ধারকারী দল। স্থানীয়দের অভিযোগ, এই ধরনের বিপজ্জনক সামগ্রী মজুত থাকা সত্ত্বেও কোনও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না।
প্রশাসনের তরফে সতর্কবার্তা, এলাকা ঘিরে নিরাপত্তা
আপাতত ঘটনাস্থলের চারপাশ ঘিরে ফেলেছে পুলিশ ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। আশেপাশের বাড়িগুলিতে বিদ্যুৎ সংযোগ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এলাকাবাসীকে আতঙ্কিত না হয়ে শান্ত থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান ও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে কলকাতা পুরসভা।
আগুন নেভার পর কী ব্যবস্থা? নজরে প্রশাসন
আগুন সম্পূর্ণ নেভার পর গোটা এলাকা জীবাণুমুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। প্লাস্টিক ও রাসায়নিক দ্রব্য পুড়ে যাওয়ায় পরিবেশ দূষণের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। ভবিষ্যতে এই ধরনের প্লাস্টিক গোডাউন কোথায়, কীভাবে রাখা যায়, সেই নিয়েও কড়া নির্দেশিকা আসতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলছে পুরসভার এক শীর্ষ আধিকারিকের কাছ থেকে।