কুণাল ঘোষ বনাম অভয়ার বাবার মামলা সিজিও সেটলমেন্ট অভিযোগ ঘিরে বিস্ফোরণ

কুণাল ঘোষ বনাম অভয়ার বাবার মামলা সিজিও সেটলমেন্ট অভিযোগ ঘিরে বিস্ফোরণ

নোটিসের সময়সীমা শেষ, এবার আদালতের দ্বারস্থ কুণাল

কলকাতা রাজনীতির অঙ্গনে ফের শোরগোল। আরজি কর নির্যাতিতার বাবার বিরুদ্ধে এবার মানহানির মামলা ঠুকে দিলেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ। এর আগেই তিনি নিজের আইনজীবী অয়ন চক্রবর্তীর মাধ্যমে আইনি নোটিস পাঠিয়েছিলেন। চারদিনের সময়সীমা শেষ হওয়ার পর বুধবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে মামলার আবেদন জানান কুণাল।

সিজিও সেটলমেন্ট ইস্যুতে অভিযোগের পাল্টা জবাব

অভিযুক্ত বাবার বক্তব্য ছিল, সিবিআই টাকা খেয়ে তদন্ত নষ্ট করেছে এবং রাজ্য সরকারের টাকায় কুণাল ঘোষ সিজিওতে গিয়ে সেটলমেন্ট করেছেন। এই মন্তব্যকেই কড়া ভাষায় প্রত্যাখ্যান করেছেন কুণাল। তিনি জানান, ”অভয়ার বাবার প্রতি পূর্ণ সম্মান রেখেও বলতে বাধ্য হচ্ছি, এ ধরনের বক্তব্য আইনের চোখে মানহানি।” তাই বাধ্য হয়েই মামলা।

সোশ্যাল মিডিয়ায় বিস্ফোরক পোস্ট

ঘটনার শুরু কয়েকদিন আগেই। কুণাল ঘোষ নিজের এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে লেখেন, ”আমি আইনজীবীর মাধ্যমে অভয়ার বাবাকে নোটিস পাঠিয়েছি। আশা করি কাল বা পরশু হাতে পৌঁছাবে। ওঁকে চারদিন সময় দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে ক্ষমা না চাইলে আদালতেই প্রমাণ দিতে হবে।” সেই সতর্কবার্তা এখন বাস্তবে রূপ নিল।

ব্যাঙ্কশাল আদালতে আইনি লড়াইয়ের সূচনা

বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যাঙ্কশাল আদালতে মামলা দায়ের করেন কুণাল। অভিযোগ, নির্যাতিতার বাবার বেপরোয়া মন্তব্য তাঁর রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত মর্যাদাকে আঘাত করেছে। আইনজীবী অয়ন চক্রবর্তী আদালতে জানান, প্রমাণ ছাড়া এ ধরনের অভিযোগ রটনা ছাড়া আর কিছু নয়। আদালত এখন মামলার শুনানির তারিখ নির্ধারণ করবে।

অভয়ার পরিবারের অবস্থান ও নবান্ন অভিযান

প্রসঙ্গত, গত ৯ অগাস্ট অভয়ার মৃত্যুর এক বছর পূর্তি উপলক্ষে তাঁর পরিবার নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছিল। বিজেপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ—শুভেন্দু অধিকারী-সহ একাধিক নেতা-নেত্রী সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তবে ‘অভয়া মঞ্চ’-এর মতো সংগঠন আলাদা পথে আন্দোলন করে। এই রাজনৈতিক সংযোগ নিয়েই কুণাল প্রশ্ন তুলেছিলেন।

কুণালের অভিযোগ: রাজনৈতিক দলের প্রভাবে পরিবার

কুণাল ঘোষ স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ”অভয়ার বাবা-মা বিজেপির প্রভাবে আন্দোলনের পথে হাঁটছেন। তাঁদের যন্ত্রণা আমি বুঝি, সহমর্মিতা জানাই। কিন্তু রাজনৈতিক দলের ইশারায় মন্তব্য করলে সত্যিটা বিকৃত হয়।” তিনি দাবি করেন, এসব অভিযোগ রাজনৈতিক মহল থেকে শেখানো কথা।

বিজেপির যুক্তি: ন্যায়বিচারের লড়াই

অন্যদিকে, বিজেপির তরফে দাবি করা হচ্ছে, অভয়ার পরিবার ন্যায়বিচারের জন্যই আন্দোলনে নেমেছেন। দলের নেতাদের উপস্থিতি ছিল সহমর্মিতা দেখানোর উদ্দেশ্যে। তাঁদের মতে, তৃণমূল এই আন্দোলনকে রাজনৈতিক রঙ লাগানোর চেষ্টা করছে। তবে বিজেপির কোনও বক্তব্যেই কুণাল ঘোষ নরম হননি।

তৃণমূল শিবিরে কুণালের অবস্থান

রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূলও কুণালের পাশে দাঁড়িয়েছে। দলের একাংশের বক্তব্য, কুণাল ঘোষকে ব্যক্তিগতভাবে আঘাত করার চেষ্টা হয়েছে। তাঁর মর্যাদাহানি ঠেকাতেই তিনি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের উসকানিতে কেউ যদি বেপরোয়া মন্তব্য করে, তার জবাব আইনের মাধ্যমে দেওয়াই উচিত।

অভয়ার মৃত্যুর বর্ষপূর্তিতে নতুন বিতর্ক

গত বছরের আগস্টে রাজ্যজুড়ে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল অভয়ার মৃত্যু। তার বর্ষপূর্তিতে পরিবারের আন্দোলন আবার রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে এসে পড়ে। এখন কুণালের মামলার কারণে পুরো ঘটনাই আরও জটিল রূপ নিচ্ছে। সমাজকর্মী মহল থেকে শুরু করে আইন বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, এ লড়াইয়ের প্রভাব শুধু আদালত নয়, রাজনীতির ময়দানেও পড়বে।

সামনে কী হতে পারে?

সবশেষে প্রশ্ন—এই মামলার ভবিষ্যৎ কী? আদালতের সিদ্ধান্তই ঠিক করবে, নির্যাতিতার বাবার মন্তব্য মানহানির আওতায় পড়ে কি না। অন্যদিকে, রাজনৈতিক মহলও তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখছে। কারণ এই মামলা শুধু ব্যক্তি বনাম ব্যক্তি নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে রাজনীতি, আবেগ এবং ন্যায়বিচারের প্রশ্ন।

Leave a comment