প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ লর্ড মেঘনাদ দেশাইয়ের প্রয়াণ

প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ লর্ড মেঘনাদ দেশাইয়ের প্রয়াণ

প্রখ্যাত ব্রিটিশ-ভারতীয় অর্থনীতিবিদ এবং সাংসদ লর্ড মেঘনাদ দেশাই ৮৫ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন। ভারত-ব্রিটেন সম্পর্ককে শক্তিশালী করতে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁকে স্মরণ করে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।

Lord Meghnad Desai: ব্রিটিশ-ভারতীয় অর্থনীতিবিদ এবং চিন্তাবিদ লর্ড মেঘনাদ দেশাই মঙ্গলবার ৮৫ বছর বয়সে মারা গেছেন। দেশাই ছিলেন একজন বিদ্বান যিনি কেবল অ্যাকাডেমিক জগতেই নন, রাজনীতি এবং বিশ্ব আলোচনাতেও গভীর ছাপ ফেলে গেছেন। ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে সম্পর্ককে নতুন দিশা দিতে তাঁর ভূমিকা সর্বদা স্মরণীয় থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী মোদীর শ্রদ্ধাঞ্জলি

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লর্ড দেশাইকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁকে "ভারত ও ব্রিটিশ সমাজের মধ্যে একজন চিন্তাশীল সেতু" বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, দেশাই সর্বদা ভারত ও ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতীয় মূল্যবোধের পরিচয়কে শক্তিশালী করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, "মেঘনাদ দেশাইজির প্রয়াণে আমি শোকাহত। তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট চিন্তাবিদ, লেখক এবং অর্থনীতিবিদ। ভারত-ব্রিটেন সম্পর্ককে শক্তিশালী করতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।"

গুজরাট থেকে লন্ডন পর্যন্ত যাত্রা

লর্ড দেশাই ১৯৪০ সালে গুজরাটের বরোদায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ভারতে তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং পরে আমেরিকার পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স (LSE)-এ যোগদান করেন, যেখানে তিনি চার দশক ধরে অধ্যাপনা করেন। তাঁর পাণ্ডিত্য এবং শিক্ষণ শৈলী তাঁকে বিশ্বব্যাপী অ্যাকাডেমিক সম্প্রদায়ে একটি বিশিষ্ট স্থান করে দিয়েছে।

হাউস অফ লর্ডসে ভারতীয় কণ্ঠস্বর

১৯৯১ সালে, মেঘনাদ দেশাইকে লেবার পার্টির পক্ষ থেকে ব্রিটেনের হাউস অফ লর্ডসে একজন পিয়ার (Peer) হিসেবে মনোনীত করা হয়। এটি কেবল তাঁর অ্যাকাডেমিক অবদানই ছিল না, বরং ভারতীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব স্বরূপ হিসেবেও তাঁর স্বীকৃতি ছিল। তিনি সেখানে ভারত সম্পর্কিত বিষয়গুলিকে সোচ্চারভাবে তুলে ধরতেন এবং ভারত-ব্রিটেন সম্পর্ককে নতুন চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গি দিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতেন।

গণতান্ত্রিক আলোচনা ও স্বাধীন চিন্তার প্রতীক

লর্ড দেশাই তাঁর স্বাধীন রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং গণতান্ত্রিক আলোচনায় সক্রিয় ভূমিকার জন্য পরিচিত ছিলেন। তিনি কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শের দ্বারা আবদ্ধ ছিলেন না এবং স্বাধীনভাবে চিন্তা করার অভ্যাসের কারণে তিনি অনেকবার তাঁর দলের থেকে ভিন্ন মতামতও রেখেছেন।

একজন বিপুল লেখক ও চিন্তাবিদ

মেঘনাদ দেশাই ছিলেন একজন লেখক যিনি কেবল অর্থনীতিই নয়, রাজনীতি, সংস্কৃতি এবং ভারতের উন্নয়ন যাত্রার উপরও বিস্তারিত লিখেছেন। তাঁর লেখায় ভারতের সমসাময়িক পরিস্থিতি, বিশ্ব অর্থনীতির প্রেক্ষাপট এবং ভারতের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলির গভীর বিশ্লেষণ পাওয়া যায়।

সংসদে গান্ধী স্মারকের পিছনেও ছিল দেশাইয়ের অবদান

হাউস অফ লর্ডসের সদস্য লর্ড রামি রেঞ্জার লর্ড দেশাইকে "সম্প্রদায়ের একটি স্তম্ভ" বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন যে দেশাই ব্রিটিশ সংসদ ভবনে মহাত্মা গান্ধীর মূর্তি স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। রেঞ্জার তাঁকে একজন নেতা হিসাবে স্মরণ করেছেন যিনি সর্বদা ভারতীয় মূল্যবোধ এবং সংস্কৃতিকে সম্মান জানানোর জন্য কাজ করেছেন।

ভারত সরকার মেঘনাদ দেশাইয়ের বহুবিধ অবদানকে স্বীকৃতি দিয়ে তাঁকে পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত করেছিল। এই সম্মান তাঁর অ্যাকাডেমিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক অবদানের সাক্ষ্য বহন করে।

Leave a comment