লখনউতে সাইবার প্রতারণা চক্রের পর্দাফাঁস, যার যোগসূত্র দুবাইয়ের সঙ্গে জড়িত। পুলিশ ১৬ জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে এবং ১.০৭ কোটি টাকা নগদ, ল্যাপটপ, জাল নথি এবং ৭৯টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করেছে। এই চক্রটি অনলাইন বেটিং অ্যাপের মাধ্যমে লোকেদের প্রতারিত করত। মূল অভিযুক্ত দুবাই থেকে এই চক্রটি পরিচালনা করত।
লখনউ: উত্তর প্রদেশের রাজধানী লখনউ আবারও একটি বড় সাইবার অপরাধ চক্রের পর্দাফাঁসে কেঁপে উঠেছে। পুলিশ কুরসি রোডে অবস্থিত স্মৃতি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে পরিচালিত একটি হাইটেক সাইবার জালিয়াতি চক্রের পর্দাফাঁস করেছে। এই চক্রের যোগসূত্র দুবাই পর্যন্ত বিস্তৃত। মূল চক্রের পান্ডা দুবাইতে বসে পুরো নেটওয়ার্কটি পরিচালনা করত, যেখানে ভারতে উপস্থিত তার সহযোগীরা অনলাইন গেমিং এবং বেটিং অ্যাপের মাধ্যমে লোকেদের প্রতারিত করত। চক্রটি এ পর্যন্ত প্রায় ১০০ কোটি টাকার সাইবার প্রতারণা করেছে। পুলিশ এই মামলায় ১৬ জন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে।
ছয় মাস ধরে চলছিল প্রতারণার আখড়া
গুডম্বা থানা এলাকার স্মৃতি অ্যাপার্টমেন্টে ছয় মাস আগে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। এখানে বসবাসকারী ১৬ জন লোককে দেখতে সাধারণ যুবক মনে হলেও, আসলে তারা সবাই একটি সুপরিকল্পিত সাইবার চক্রের সদস্য ছিল। অভিযুক্তরা সবাই ছত্তিশগড় ও গুজরাটের বাসিন্দা, যারা লখনউকে প্রতারণার কেন্দ্র বানিয়েছিল।
টেলিগ্রামের মাধ্যমে পাতা হতো জাল
চক্রের সদস্যরা টেলিগ্রাম অ্যাপের মাধ্যমে সারা দেশের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করত। তাদের অনলাইন জুয়া, গেমিং এবং 'লোটাস' নামক অবৈধ বেটিং সাইটে খেলার জন্য যুক্ত করা হতো। প্রথমে অল্প পরিমাণ অর্থ জেতার লোভ দেখিয়ে তাদের বিশ্বাস অর্জন করা হতো। কোনো ব্যবহারকারী যখন বড় অঙ্কের টাকা লাগাত, তখন তাকে ইচ্ছাকৃতভাবে খেলায় হারিয়ে দেওয়া হতো এবং তার টাকা আত্মসাৎ করা হতো।
প্রতারণার পরে ভুক্তভোগীদের ব্লক করে দিত
ভুক্তভোগীরা যখন তাদের টাকা ফেরত চাইত বা তোলার চেষ্টা করত, তখন চক্রের সদস্যরা তাকে টেলিগ্রাম চ্যানেল থেকে ব্লক করে দিত। এরপর ভুক্তভোগীর সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ করা সম্ভব হতো না। প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত অর্থ ভাড়া করা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করা হতো এবং এটিএম থেকে তুলে हवाला চ্যানেলের মাধ্যমে পাঠানো হতো।
হাওয়ালা নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাঠানো হতো
প্রতারণার টাকা লেনদেন করার কাজটি খুব সুপরিকল্পিতভাবে করা হতো। চক্রের সদস্যরা ফ্ল্যাটে নগদ টাকা রাখত, তারপর হাওয়ালার মাধ্যমে গুজরাট, ছত্তিশগড় এবং অন্যান্য রাজ্যের ব্যবসায়ীদের কাছে পাঠিয়ে দিত। সেখান থেকে এই টাকা ধীরে ধীরে দুবাইতে পৌঁছাত, যেখানে চক্রের মূল পান্ডা বসে থাকত।
পুলিশের বড়সড় উদ্ধার
চক্রের আস্তানায় অভিযান চালানোর সময় পুলিশ বিপুল পরিমাণে ইলেকট্রনিক ও আর্থিক ডেটা জব্দ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে:
- ১ কোটি ৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা নগদ
- ২টি নোট গণনার মেশিন
- ৩টি ল্যাপটপ
- ৭৯টি এটিএম কার্ড
- ১৩টি চেক বই, ২২টি পাসবুক
- ৫৪টি মোবাইল ফোন, ২টি ট্যাবলেট
- ১৪টি জাল আধার কার্ড
- টোকেন হিসাবে ব্যবহৃত পুরনো নোট
পুলিশের মতে, এই নোটগুলি (১, ৫, ১০ টাকার) হাওয়ালা নেটওয়ার্কে টাকা ট্র্যাক করার কোড হিসেবে ব্যবহার করা হতো।
দুবাইতে বসে আছে মূল পান্ডা
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা প্রকাশ করেছে যে চক্রটি একজন ব্যক্তি দুবাই থেকে পরিচালনা করছে, যে প্রযুক্তিগতভাবে খুবই দক্ষ এবং চক্র পরিচালনার জন্য বিশেষ সফ্টওয়্যার ব্যবহার করে। পুলিশ এখন সেই ব্যক্তির পরিচয় জানার চেষ্টা করছে এবং শীঘ্রই ইন্টারপোলের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পুলিশ কমিশনারের সতর্কবার্তা
লখনউয়ের পুলিশ কমিশনার এই পুরো অপারেশন সম্পর্কে তথ্য দেওয়ার পাশাপাশি জনসাধারণকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তি যেন অপরিচিত টেলিগ্রাম গ্রুপ, ওয়েবসাইট বা অ্যাপের মাধ্যমে টাকা বিনিয়োগ না করে এবং কোনো প্রলোভনে পা না দেয়। সাইবার প্রতারণার জাল দেখতে খুব আকর্ষণীয় লাগতে পারে, তবে এর শেষ পরিণতি অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং অনুশোচনা।
পুলিশ এখন এই ঘটনাটিকে জাতীয় স্তরে ছড়িয়ে থাকা সাইবার প্রতারণার একটি অংশ হিসেবে দেখছে। সাইবার সেল ও এটিএস দলগুলো ক্রমাগত তদন্তে নিযুক্ত রয়েছে। চক্রের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম ও নথিপত্রের ফরেনসিক পরীক্ষা করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই চক্রের আরও অনেক সদস্য সারা দেশে ছড়িয়ে থাকতে পারে।