শাসকদলে গোষ্ঠী সংঘর্ষ মালদহে তৃণমূল কর্মী খুনে তপ্ত রাজনৈতিক মহল

শাসকদলে গোষ্ঠী সংঘর্ষ মালদহে তৃণমূল কর্মী খুনে তপ্ত রাজনৈতিক মহল
সর্বশেষ আপডেট: 30-11--0001

ইংরেজবাজারের লক্ষীপুর এলাকায় এক সামাজিক অনুষ্ঠানে তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী আবুল কালাম আজাদের রক্তাক্ত খুনে তীব্র আলোড়ন ছড়িয়েছে গোটা মালদহ জুড়ে। মৃত ব্যক্তি ছিলেন স্থানীয় রাজনৈতিক বলয়ের অন্যতম প্রভাবশালী মুখ। অভিযোগের তির তৃণমূলেরই এক পঞ্চায়েত সদস্য মাইনুল শেখের দিকে। এই ঘটনায় দলের অভ্যন্তরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ফের সামনে আসায় নেতাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। জনমানসে প্রশ্ন— দলীয় কাঠামোর মধ্যেই কি এবার নিরাপত্তাহীন কর্মীরা?

অনুষ্ঠান বাড়িতেই মৃত্যু আবুল কালামের, খুনে অভিযুক্ত তৃণমূল সদস্য

মর্মান্তিক এই খুনের ঘটনা ঘটে লক্ষীপুর এলাকার একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে, যেখানে উপস্থিত ছিলেন বহু স্থানীয় মানুষ। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, আচমকা গণ্ডগোল শুরু হয় ও তার মধ্যেই ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মারা পড়েন আবুল কালাম। পুলিশ তদন্তে নেমে ঘটনায় সরাসরি যুক্ত থাকার অভিযোগে কাজিগ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য মাইনুল শেখ ও তার তিন সঙ্গীকে গ্রেপ্তার করে। ধৃতদের বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে এবং তাদের পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

খুনের পর শোকবিহ্বল পরিবারে বিধায়কের উপস্থিতি, কড়া বার্তা দলীয় নেতা-নেত্রীদের

রবিবার দুপুরে নিহতের গ্রামে পৌঁছন মানিকচকের বিধায়ক সাবিত্রী মিত্র। শোকস্তব্ধ পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি আশ্বাস দেন, এই ঘটনার পূর্ণ বিচার না হওয়া পর্যন্ত তিনি ব্যক্তিগতভাবে লড়াই চালিয়ে যাবেন। একইসঙ্গে তিনি দলের অন্যান্য নেতাদের সতর্ক করে বলেন— যদি কেউ অভিযুক্তের পাশে দাঁড়ায়, তা হলে তাকেও দল থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। দল কাউকে রক্ষা করবে না।

"আবুল কালাম ছিলেন দলের স্তম্ভ", বললেন বিধায়ক

বিধায়কের মতে, আবুল শুধু একজন সংগঠক ছিলেন না, ছিলেন দলের ভিতের অন্যতম স্তম্ভ। পঞ্চায়েত এলাকায় তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতায় দল ব্যাপক শক্তি অর্জন করেছিল। তাঁর অকাল মৃত্যু শুধু পরিবার নয়, গোটা দলের পক্ষেই এক অপূরণীয় ক্ষতি। বিধায়কের কথায়, আবুলের প্রয়াণ আমাদের শিরদাঁড়ায় ঘা। দলের অনেক কর্মীর অনুপ্রেরণা ছিলেন তিনি।

দলে অপরাধীর ঠাঁই নেই! সতর্কবার্তা তৃণমূল বিধায়কের

মানিকচকের বিধায়কের কড়া বার্তা— "তৃণমূলের গায়ে কালিমা লাগাতে পারে, এমন কোনও নেতাকে দলে রাখা হবে না। যদি কেউ অপরাধীকে আড়াল করার চেষ্টা করে, দল তার বিরুদ্ধেও কঠিন পদক্ষেপ নেবে। অপরাধী যত বড় নেতা হোক, তাকে রেয়াত করা হবে না।"

প্রেমঘটিত বিবাদের জেরেই খুন? পুলিশের দাবি ঘিরে নতুন বিতর্ক

পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে, এই খুনের পেছনে পারিবারিক সম্পর্কের জটিলতা কাজ করেছে। পুলিশ সূত্রের দাবি, মৃত আবুল কালামের স্ত্রীর সঙ্গে ধৃত মাইনুল শেখের ছেলের একটি বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তা নিয়েই দুই পরিবারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চাপা উত্তেজনা চলছিল, যা শেষমেশ এই ভয়ঙ্কর পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়।

দোষীদের দ্রুত সাজা ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি পরিবারের

মৃত তৃণমূল কর্মীর পরিবার দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তুলেছে। তাঁরা অভিযোগ করেছেন, অভিযুক্তরা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রশাসনের কিছু অংশ নাকি শুরুতে গড়িমসি করছিল। তবে এখন তাঁরা বিধায়কের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতিকে আশার আলো হিসেবে দেখছেন।

দলের ভাবমূর্তি বাঁচাতে কঠোর পদক্ষেপের পথে শাসকদল

সাবিত্রী মিত্র জানিয়ে দিয়েছেন, শাসকদলের ভাবমূর্তি নষ্ট হলে সাধারণ মানুষে আস্থা হারাবে, যা মেনে নেওয়া যায় না। তিনি বলেন, একটা ঘটনার জন্য পুরো দলকে কাঠগড়ায় তুলতে দেওয়া হবে না। তবে দোষীদের প্রশ্রয়ও দেওয়া হবে না। রাজনীতিতে নৈতিকতা ফিরিয়ে আনতেই হবে।

Leave a comment