পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন যে, বাঙালিদের ওপর অত্যাচার করা হচ্ছে এবং নাম না থাকলে তাদের জেলে পাঠানো হবে।
মমতার প্রতিবাদ: পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবারও কেন্দ্র সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ করেছেন। কলকাতার তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে আয়োজিত এক বিশাল পদযাত্রায় তিনি বলেন, যাদের নাম ভোটার তালিকায় নেই, তাদের জেলে পাঠানো হবে। তিনি জনগণকে তাদের নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন জানান, এমনকি এর জন্য কাজ ছেড়ে দিতে হলেও।
বাঙালিদের উপর অত্যাচারের প্রতিবাদ
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলাভাষী অভিবাসীদের উপর কথিত অত্যাচারের তীব্র প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, বাঙালিদের বিদেশি এবং বাংলাদেশি বলে জেলে পোরা হচ্ছে। তিনি কেন্দ্র সরকারের কাছে প্রশ্ন করেন, বাংলা কি দেশের অংশ নয়? তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, তিনি বাঙালিদের উপর কোনো অত্যাচার বরদাস্ত করবেন না।
বিজেপির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ
মুখ্যমন্ত্রী মমতা অভিযোগ করেন যে, বিজেপির মদতে নির্বাচন কমিশন বাংলার মানুষের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, অন্য রাজ্য থেকে বসে বাংলার ভোটারদের নিশানা করা হচ্ছে। মমতা নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে বিজেপির এজেন্ডা বাস্তবায়নের অভিযোগ করে বলেন যে, এটি গণতন্ত্রের জন্য একটি বিপজ্জনক সংকেত।
তৃণমূলের প্রতিবাদ মিছিল
এই ইস্যুতে তৃণমূল কংগ্রেস কলকাতায় একটি প্রতিবাদ মিছিল বের করে, যার নেতৃত্ব দেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই মিছিলে তার ভাইপো এবং দলের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সহ বহু সিনিয়র নেতা উপস্থিত ছিলেন। পদযাত্রার শেষে এক জনসভায় ভাষণ দেওয়ার সময় মমতা স্পষ্ট করে বলেন যে, বাঙালিদের ভয় দেখানোর কোনো চেষ্টা সফল হবে না।
ভোটার তালিকা নিয়ে প্রশ্ন
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন যে, এটা স্পষ্ট যে ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধনীর (Special Intensive Revision) নামে লোকেদের হয়রানি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের কাজ নাগরিকত্ব নির্ধারণ করা নয়, বরং সুষ্ঠু নির্বাচন করা। তিনি জনগণকে নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে গিয়ে তাদের নামের অবস্থা পরীক্ষা করার আবেদন জানান এবং যদি নাম না থাকে তবে ফর্ম পূরণ করে তা অবিলম্বে যুক্ত করার কথা বলেন।
প্রতিটি রাজ্য, প্রতিটি ভাষার প্রতি সম্মান
মুখ্যমন্ত্রী তার ভাষণে আরও স্পষ্ট করেন যে, তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিটি রাজ্য এবং প্রতিটি ভাষার মানুষের প্রতি সম্মান জানায়। তিনি বলেন, "যখন মহারাষ্ট্র থেকে হিন্দিভাষী লোকেদের বের করে দেওয়া হয়েছিল, তখন আমরা সবার আগে প্রতিবাদ করেছিলাম। আমরা কেবল বাঙালিদের নয়, সকল ভারতীয়দের নিরাপত্তা ও সম্মানের কথা বলি।"
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবেগপূর্ণ আবেদন
মমতা সভায় উপস্থিত লোকজনের কাছে আবেগপূর্ণ আবেদন জানিয়ে বলেন, "এ সময় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। আমরা কাউকে এই দেশের নাগরিক হওয়া থেকে বঞ্চিত হতে দেব না। বাঙালিদের ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানোর ষড়যন্ত্র সফল হতে দেব না। বিজেপি যে ঘৃণার পরিবেশ তৈরি করছে, আমরা তাতে সঙ্গ দেব না।"
বিরোধী দলের প্রতিক্রিয়া ও সমর্থন
এই ইস্যুতে বেশ কয়েকটি বিরোধী দল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমর্থন করেছে। বিশেষ করে AIMIM প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়েইসি এবং কংগ্রেসের সিনিয়র নেতারাও এই ধরনের কার্যকলাপের উপর আগেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিহার, আসাম এবং আরও অনেক উত্তর-পূর্ব রাজ্যেও ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।