SIR শুরুতে দেরি, কেন জটিলতা বাড়ছে বাংলায়
অগস্টের শেষের দিকেই বাংলায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR) প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, তা পিছিয়ে যেতে পারে। মূলত পুরোনো নথি খুঁজে না পাওয়ার কারণে গোটা প্রক্রিয়াতেই জটিলতা তৈরি হয়েছে। ফলে আসন্ন ভোটার তালিকা সংশোধন এখন কার্যত অনিশ্চয়তার মুখে।
২০০২ সালের বুথ তালিকা নিখোঁজ, সমস্যায় কমিশন
সূত্রের দাবি, রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ২০০২ সালের ভোটার তালিকা মিলছে না। বিশেষত গাইঘাটা বিধানসভা এলাকার প্রায় ১০০ বুথের নথি উধাও। শুধু তাই নয়, বীরভূম ও হাওড়া জেলারও একাধিক বুথের ভোটার তালিকার খোঁজ মিলছে না। এ অবস্থায় কমিশনের পক্ষে SIR শুরু করা দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে।
২০০৩ সালের তালিকা দিয়ে সমাধান খুঁজছে নির্বাচন কমিশন
এই বিপাকে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক জাতীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে অনুমতি চেয়েছেন, যাতে ২০০২ সালের পাশাপাশি ২০০৩ সালের ভোটার তালিকাকেও রেফারেন্স ধরা যায়। পরিকল্পনা হল, দু’টি তালিকা মিলিয়ে প্রতিটি জেলার জন্য একটি নতুন তালিকা প্রকাশ করা হবে। কমিশনের এক কর্তা জানিয়েছেন, “পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা বাস্তবসম্মত সমাধান খুঁজছি।”
বিহারে ঝড়, বাংলার অপেক্ষা বাড়ছে
উল্লেখ্য, বিহারে ইতিমধ্যেই খসড়া ভোটার তালিকা থেকে প্রায় ৬৫ লক্ষ নাম বাদ পড়েছে। যদিও তা চূড়ান্ত নয়, যাঁদের নাম বাদ গেছে তাঁরা পুনরায় আবেদন করতে পারবেন। কিন্তু ওই ঘটনার জেরে জাতীয় রাজনীতিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, SIR আসলে নির্বাচনী কারচুপির হাতিয়ার। বাংলায় তাই আরও শঙ্কা বাড়ছে।
তৃণমূল সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের কটাক্ষ
তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় তীব্র সুরে আক্রমণ শানিয়ে বলেন, “SIR আসলে Scientific Invisible Rigging-এরই নামান্তর।” তাঁর অভিযোগ, বিহারে ভোটার লিস্ট থেকে নাম বাদ দিয়ে যেভাবে বিজেপি সুবিধা নিয়েছিল, বাংলাতেও ঠিক সেই একই কৌশল প্রয়োগ করার চেষ্টা করছে নির্বাচন কমিশন।
সিপিএমের অভিযোগ, কমিশন বিজেপির এজেন্ট
শুধু তৃণমূল নয়, সিপিএমও কমিশনের বিরুদ্ধে একই সুরে সরব। সুজন চক্রবর্তী অভিযোগ করেছেন, “নির্বাচন কমিশন শুরু থেকেই ভুল পথে হাঁটছে। আসলে তারা বিজেপির এজেন্টের মতো আচরণ করছে।” ফলে বিরোধীদের দিক থেকে চাপ আরও বাড়ছে কমিশনের ওপর।
২০০৯ সালের ডিলিমিটেশন ও নতুন সমস্যা
আরও একটি জটিলতা তৈরি হয়েছে ২০০৯ সালের ডিলিমিটেশন বা সীমা পুনর্নির্ধারণের কারণে। ওই সময় বহু বিধানসভা কেন্দ্রের সীমারেখা পাল্টে যায় এবং বুথের সংখ্যাও বাড়ে। ফলে পুরনো তালিকা ও নতুন কাঠামোর মধ্যে ফারাক তৈরি হয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে তাই অতীতের নথির সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতি মেলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
ভোটার তালিকার নির্ভুলতা নিয়ে প্রশ্ন
নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের মতে, ভোটার তালিকা গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি। সেখানে সামান্য ভুলও নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে। বিহারের ঘটনা দেখিয়ে দিয়েছে, একবার নাম বাদ পড়লে সাধারণ মানুষের হয়রানি কতটা হতে পারে। বাংলায় যদি তাড়াহুড়ো করে SIR শুরু হয়, তবে অনাবশ্যক বিভ্রান্তি ও বিতর্ক বাড়বে।
সুপ্রিম কোর্টের মন্তব্যে চাপ বাড়ল
এরই মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, “SIR ভোটারবান্ধব উদ্যোগ, আধার না থাকলেও ক্ষতি নেই।” আদালতের এই পর্যবেক্ষণ কমিশনের জন্য কিছুটা স্বস্তির হলেও রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, আদালত যখন ইতিবাচক সুর তুলছে, তখন বাস্তবে কেন বাংলায় এত দেরি?
আসন্ন নির্বাচনের আগে বড় পরীক্ষা কমিশনের
সব মিলিয়ে বলা যায়, বাংলায় SIR শুরু করা নিয়ে কমিশন এখন ধন্দে। একদিকে রাজনৈতিক চাপ, অন্যদিকে নথির অমিল—দুই মিলে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছে। অগস্টের শেষ নাগাদ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এখন তা পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল। আসন্ন নির্বাচনের আগে এটি নির্বাচন কমিশনের জন্য বড় পরীক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে।