চুল পাকার সমস্যা এখন কমবয়সীদেরও
আজকের দিনে চুল পাকা আর বয়সের সম্পর্ক প্রায় হারিয়ে যাচ্ছে। অতিরিক্ত মানসিক চাপ, অস্বাস্থ্যকর খাবার, ধূমপান-অ্যালকোহলের অভ্যাস, অ্যানিমিয়া কিংবা অপুষ্টির কারণে অনেক তরুণ-তরুণীর মাথায় অকালেই দেখা দিচ্ছে সাদা চুল। বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীরে ভিটামিন বি-১২-এর ঘাটতি বা থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা থাকলেও অল্প বয়সেই চুল রঙ হারায়। ফলে কলেজ-স্কুল পড়ুয়াদের মাথায়ও এখন অকালপক্বতার ছাপ স্পষ্ট।
বংশগত কারণেও ধরা দেয় সমস্যা
শুধু জীবনযাত্রা নয়, অনেক ক্ষেত্রেই জিনগত কারণে চুল দ্রুত পেকে যায়। এই পরিস্থিতি সামলাতে অনেকেই হেয়ার কালার, কলপ বা কেমিক্যাল ডাইয়ের উপর নির্ভরশীল হন। কিন্তু তাতে সমস্যার সমাধান যেমন স্থায়ী হয় না, তেমনই মাথার ত্বক ও চুলের ক্ষতির আশঙ্কাও বেড়ে যায়। অ্যালার্জি, চুলকানি, রুক্ষতা এবং চুল পড়া—এসব বাড়িয়ে তোলে কৃত্রিম রং। তাই এখন অনেকেই ফিরছেন প্রাকৃতিক ঘরোয়া উপায়ে।
হোম শেফ দিলেন সহজ টিপস
সম্প্রতি হোম শেফ পূনম দেভনানি একটি সহজ টোটকা জানিয়েছেন, যা নিয়ে এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় হইচই। তাঁর মতে, মাত্র দু’টি উপাদান—পেঁয়াজের খোসা আর চা পাতা—ব্যবহার করলেই তৈরি করা যায় একেবারে প্রাকৃতিক হেয়ার কালার। এতে নেই কোনও কসমেটিকস, নেই কোনও ক্ষতিকর কেমিক্যাল। বরং চুলে রং আনতে ও গোড়া শক্ত করতে এই মিশ্রণ কার্যকরী।
কীভাবে বানাবেন এই প্রাকৃতিক রং
প্রথমেই একটি পাত্রে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল নিন। তাতে দিন কয়েকটি শুকনো পেঁয়াজের খোসা ও এক মুঠো চা পাতা। মাঝারি আঁচে বেশ কিছুক্ষণ ফুটতে দিন যতক্ষণ না জল খয়েরি রং ধরে। এবার সেই মিশ্রণ ছেঁকে নিন এবং ঘরের তাপমাত্রায় ঠান্ডা হতে দিন। এভাবেই তৈরি হয়ে গেল আপনার প্রাকৃতিক হেয়ার কালার।
ব্যবহার করার পদ্ধতি
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাতে শোওয়ার আগে গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত এই মিশ্রণ ভালোভাবে লাগিয়ে নিতে হবে। পুরো মাথা ভিজে গেলে শুয়ে পড়ুন। পরদিন সকালে হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। কয়েকদিনের মধ্যেই পরিবর্তন চোখে পড়বে।
নিয়মিত ব্যবহারেই মিলবে ফল
শুধু একদিন ব্যবহার করলেই যে সাদা চুল কালো হয়ে যাবে, তা নয়। সপ্তাহে অন্তত দুই থেকে তিনবার এই মিশ্রণ ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই পাকা চুলে কালো রং ফিরে আসবে। শুধু তাই নয়, গোড়া থেকে চুল শক্ত হবে এবং স্বাভাবিকভাবেই ঝলমল করবে।
পেঁয়াজ-চা পাতার গুণাগুণ
পেঁয়াজে রয়েছে এমন উপাদান যা মাথার ত্বককে ভেতর থেকে পুষ্টি জোগায়, ফলে গোড়া হয় আরও মজবুত, চুল পড়া কমে আসে এবং নতুন চুল গজানোর পথ প্রশস্ত হয়। অন্যদিকে, চা পাতার প্রাকৃতিক রং চুলে দেয় গাঢ় ছোপ, সঙ্গে বাড়ায় স্বাভাবিক জেল্লা ও উজ্জ্বলতা। এই দুটি উপকরণ একসঙ্গে ব্যবহার করলে শুধু চুল পাকার সমস্যা কমে না, বরং চুলের সার্বিক স্বাস্থ্যও অনেকটাই উন্নত হয়।
অন্য প্রাকৃতিক বিকল্পও আছে
শুধু পেঁয়াজ ও চা-পাতা নয়, আরও কিছু ঘরোয়া উপায়ে কালো চুল ফেরানো সম্ভব। যেমন—হেনা, চা পাতা ও কালোজিরে মিশিয়ে তৈরি পেস্ট মাথায় লাগালে চুল কালো হওয়ার পাশাপাশি হবে নরম ও মসৃণ। এই উপাদানগুলি চুলে অতিরিক্ত জেল্লাও আনে।
নারকেল ও কারি পাতার জুটি
আয়ুর্বেদে বহুদিন ধরেই ব্যবহৃত হচ্ছে নারকেল ও কারি পাতার মিশ্রণ। নারকেল তেলে ১০ মিনিট কারি পাতা ফুটিয়ে সেই তেল ঠান্ডা করে নিয়মিত মাথায় লাগালে অল্প বয়সে পাকা চুল কালো হয়ে যায়। একই সঙ্গে চুল পায় প্রাকৃতিক জেল্লা ও পুষ্টি।
শেষ কথা
চুল কালো করার দৌড়ে কেমিক্যাল পণ্য ব্যবহার না করে প্রাকৃতিক উপায়ে ভরসা রাখুন। পেঁয়াজের খোসা, চা পাতা, হেনা, কালোজিরে কিংবা কারি পাতা—এই সস্তা ও ঘরোয়া উপাদানেই সহজে মিলবে স্থায়ী সমাধান। নিয়মিত যত্ন আর সঠিক ডায়েটের মাধ্যমে খুব সহজেই সম্ভব অকালপক্ব চুল সামলানো।