জেন-জেড বিক্ষোভের পর নেপালে সক্রিয় প্রাক্তন রাজা জ্ঞানেন্দ্র, রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন

জেন-জেড বিক্ষোভের পর নেপালে সক্রিয় প্রাক্তন রাজা জ্ঞানেন্দ্র, রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন

নেপালে প্রাক্তন রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহ জেন-জেড বিক্ষোভের পর জনগণের সঙ্গে সংযোগ বৃদ্ধি করছেন। তিনি মন্দির ভ্রমণ করছেন এবং রাজতন্ত্রের সমর্থক কার্যকলাপগুলি সক্রিয় করছেন।

Nepal Proetst: নেপালে রাজতন্ত্রের সমর্থকদের আন্দোলনের প্রায় ছয় মাস পর প্রাক্তন রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহ আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। ২০০৮ সালে রাজতন্ত্রের অবসান হওয়ার পর জ্ঞানেন্দ্র শাহ সাধারণ নাগরিকের মতো জীবনযাপন করছিলেন। সম্প্রতি তিনি মন্দির এবং তীর্থস্থান ভ্রমণ শুরু করেছেন এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা করছেন।

রাজতন্ত্রের সমর্থক আন্দোলনের সময় জনগণ "রাজা ফিরে এসো, দেশ বাঁচাও" স্লোগান দিয়েছিল। এখন, জেনারেশন জেড-এর বিক্ষোভের পর প্রাক্তন রাজার সক্রিয়তা রাজনৈতিক মহলে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।

১৭ বছর পর রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিত

২০০৮ সালে নেপালে রাজতন্ত্র শেষ হওয়ার পর থেকে জ্ঞানেন্দ্র শাহ প্রায় ১৭ বছর ধরে শান্ত জীবনযাপন করছিলেন। তিনি কাঠমান্ডুর নির্মল নিবাসে থাকতেন এবং কিছু সময় তাঁর নাগार्जुन পাহাড়ের ফার্মহাউসেও কাটিয়েছেন। মার্চ ২০২৫-এ যখন তিনি কাঠমান্ডু ফিরে আসেন, তখন হাজার হাজার সমর্থক তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানায় এবং নির্মল নিবাস পর্যন্ত একটি শোভাযাত্রা বের করে।

মে ২০২৫-এ তিনি পরিবারের সাথে রাজকীয় প্রাসাদ পরিদর্শন করেন এবং সেখানে পুজো-অর্চনা করেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই কার্যকলাপগুলি তাঁর রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিত হতে পারে।

সম্প্রতি প্রাক্তন রাজা পোখরা সহ অন্যান্য অঞ্চলে মন্দির এবং তীর্থস্থান পরিদর্শন করেছেন। তাঁর প্রচেষ্টা ছিল সাধারণ মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা। বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে এই পদক্ষেপগুলি কেবল ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক নয়, বরং রাজনৈতিক ইঙ্গিতও বহন করে।

রাষ্ট্রীয় প্রজা পার্টি এবং রাজতন্ত্রের দাবি

রাষ্ট্রীয় প্রজা পার্টি (RPP) স্পষ্টভাবে রাজতন্ত্রের প্রত্যাবর্তন এবং নেপালকে হিন্দু রাষ্ট্র করার দাবি জানাচ্ছে। দেশে ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধি, দুর্নীতি এবং বেকারত্বের কারণে জনগণের অসন্তোষ বেড়েছে। এমন সময়ে প্রাক্তন রাজার প্রত্যাবর্তন এবং সক্রিয়তা প্রশ্ন তুলেছে যে নেপালে কি রাজতন্ত্র আবার ফিরে আসতে পারে।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে রাজতন্ত্রের সমর্থক কার্যকলাপ এবং জনগণের অসন্তোষের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা বর্তমান সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

নেপালের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক ঝলক

নেপালের রাজনীতি কয়েক দশক ধরে অনেক উত্থান-পতন দেখেছে। প্রধান ঘটনাগুলি নিম্নরূপ:

  • ১৯৫১: গণপ্রজাতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে রানা শাসন শেষ হয়।
  • ১৯৫৯: নেপালে প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
  • ১৯৬০: রাজা মহেন্দ্র সংসদ ভেঙে দিয়ে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা চালু করেন।
  • ১৯৯০: গণআন্দোলনের মাধ্যমে বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং সাংবিধানিক রাজতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়।
  • ১৯৯৬-২০০৬: মাওবাদী বিদ্রোহের সময় রাজতন্ত্র অবসানের দাবি জোরালো হয়।
  • ২০০১: রাজপ্রাসাদ হত্যাকাণ্ডে রাজা বীরেন্দ্র এবং রাজপরিবারের অনেক সদস্য নিহত হন, জ্ঞানেন্দ্র শাহ আবার রাজা হন।
  • ২০০৫: রাজা জ্ঞানেন্দ্র সমস্ত ক্ষমতা নিজের হাতে নেন এবং সংসদ ভেঙে দেন।
  • ২০০৬: গণআন্দোলনের মাধ্যমে সংসদ পুনরুদ্ধার হয় এবং রাজতন্ত্রের ক্ষমতা হ্রাস পায়।
  • ২০০৮: রাজতন্ত্রের অবসান এবং গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র ঘোষণা।
  • ২০১৫: নতুন সংবিধান গৃহীত হয়, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং ৭টি প্রদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • ২০২২: সাধারণ নির্বাচন এবং ঝুলে থাকা সংসদ, একটি অস্থির জোট সরকার গঠিত হয়।
  • ২০২৪: কেপি শর্মা ওলি চতুর্থবারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হন।
  • ২০২৫: সরকারের বিরুদ্ধে জেন-জির বিক্ষোভ, কেপি শর্মা ওলির পদত্যাগ।

Leave a comment