রুশ কর্তৃক তালিবানকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরে, পাকিস্তান জানিয়েছে যে তারা কোনো তাড়াহুড়ো করবে না। ইসলামাবাদ স্পষ্ট করেছে যে সিদ্ধান্ত কেবল জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে নেওয়া হবে।
পাকিস্তান: আফগানিস্তানে তালিবানের ক্ষমতা দখলের তিন বছর পরেও, পাকিস্তান এখনো তাদের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি। সম্প্রতি রাশিয়া কর্তৃক তালিবান সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরে, পাকিস্তানের তরফেও এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া এসেছে। পাকিস্তানী কর্মকর্তাদের বক্তব্য হলো, তারা আফগান তালিবান সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো তাড়াহুড়ো দেখাবে না। সিদ্ধান্ত কেবল জাতীয় স্বার্থকে বিবেচনায় রেখে নেওয়া হবে।
রাশিয়া তালিবানকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে
রাশিয়া সম্প্রতি আফগান তালিবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত বিশ্বজুড়ে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ রাশিয়া প্রথম প্রধান দেশ হিসেবে তালিবান সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে। এই পদক্ষেপের পর থেকে আশা করা হচ্ছিল যে অঞ্চলের অন্যান্য দেশ, বিশেষ করে পাকিস্তান, দ্রুত তাদের অবস্থান স্পষ্ট করবে।
'আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই': পাকিস্তানী কর্মকর্তা
পাকিস্তানী কর্মকর্তারা এই বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে জানিয়েছেন যে রাশিয়ার সিদ্ধান্ত চমকপ্রদ নয়। কর্মকর্তাদের মতে, রাশিয়া আগেই স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছিল যে তারা তালিবানকে ক্ষমতায় মেনে নিতে চলেছে। এই সিদ্ধান্ত মূলত রাশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ এবং নিরাপত্তা উদ্বেগের উপর ভিত্তি করে নেওয়া হয়েছে। রাশিয়ার ধারণা, তালিবান সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক সন্ত্রাসবাদী হুমকি মোকাবিলায় সহায়ক হতে পারে।
পাকিস্তানের অবস্থান - 'দেশ-স্বার্থে সিদ্ধান্ত'
পাকিস্তান সরকার স্পষ্ট করেছে যে তারা আফগানিস্তানে তালিবান সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে কেবল দেশ-স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেবে। এক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা 'দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন'-এর সঙ্গে কথা বলার সময় জানান, ইসলামাবাদ আপাতত এই বিষয়ে কোনো তাড়াহুড়ো করবে না। তিনি বলেন, "আমরা আমাদের স্বার্থ বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। এতে কোনো তাড়াহুড়ো করা হবে না।"
আঞ্চলিক সমীকরণগুলির উপর নজর
যদিও পাকিস্তান এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি, তবে এটাও বলা হচ্ছে যে যদি অঞ্চলের অন্যান্য দেশ, যেমন ইরান, চীন বা মধ্য এশিয়ার দেশগুলি রাশিয়ার সিদ্ধান্ত অনুসরণ করে, তবে পাকিস্তানও আরো বাস্তবসম্মত অবস্থান নিতে বাধ্য হতে পারে। পাকিস্তানের নীতি-নির্ধারকদের ধারণা, আঞ্চলিক ভারসাম্য এবং কৌশলগত অংশীদারিত্বকে বিবেচনায় রেখেই যে কোনো দিকে পদক্ষেপ নিতে হবে।
তালিবানের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক
পাকিস্তান এবং তালিবানের সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে জটিল। কিছু বিশ্লেষক মনে করেন যে পাকিস্তান তালিবানকে সমর্থন করেছে, তবে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে তালিবানের আফগান সরকার এবং পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কও দেখা গেছে। বিশেষ করে, পাকিস্তানে ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাসী হামলার জন্য তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি)-কে দায়ী করা হয়, যারা তালিবানের প্রভাবাধীন অঞ্চলে সক্রিয়। এমন পরিস্থিতিতে তালিবানকে স্বীকৃতি দেওয়া পাকিস্তানের জন্য অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংক্রান্ত একটি গুরুতর সিদ্ধান্ত হয়ে দাঁড়ায়।