ভারত-মার্কিন সম্পর্ক শক্তিশালী করতে জয়শঙ্কর ও গোয়েলের আমেরিকা সফর: শুল্ক ও কৌশলগত চুক্তি নিয়ে আলোচনা

ভারত-মার্কিন সম্পর্ক শক্তিশালী করতে জয়শঙ্কর ও গোয়েলের আমেরিকা সফর: শুল্ক ও কৌশলগত চুক্তি নিয়ে আলোচনা

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং পীযূষ গোয়েল আমেরিকা সফরে রয়েছেন। দুই নেতা শুল্ক (ট্যারিফ) এবং বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করবেন। এই বৈঠক ভারত-মার্কিন সম্পর্ককে শক্তিশালী করতে এবং কৌশলগত অংশীদারিত্বকে নতুন দিশা দিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণিত হতে পারে।

বাণিজ্য চুক্তি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল বর্তমানে আমেরিকার এক গুরুত্বপূর্ণ সফরে রয়েছেন। এই সফর এমন সময়ে হচ্ছে যখন ভারত-মার্কিন বাণিজ্য আলোচনা (trade talks) দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে এবং দুই দেশের মধ্যে শুল্ক (tariff) সংক্রান্ত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অমীমাংসিত রয়েছে। মার্কিন রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে ভারতের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের পর এই প্রথম জয়শঙ্কর তার মার্কিন প্রতিপক্ষ মার্কো রুবিওর সাথে দেখা করতে যাচ্ছেন। এই বৈঠকটি শুধুমাত্র বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, দ্বিপাক্ষিক কৌশলগত অংশীদারিত্ব (bilateral strategic partnership) এর দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

জয়শঙ্কর-রুবিওর গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক

ভারতীয় সময় অনুযায়ী আজ সকাল ১১টায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সাথে দেখা করবেন। দুই নেতার মধ্যে এই আলোচনা এমন এক পরিস্থিতিতে হচ্ছে যখন বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে এবং অনেক দেশের মধ্যে শুল্ক (ট্যারিফ) বিরোধ গভীর হচ্ছে। ভারত ও আমেরিকার মধ্যে এই আলোচনা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন মাত্রা দিতে পারে। এই বৈঠকে বাণিজ্য সম্পর্কিত বিষয়গুলির পাশাপাশি নিরাপত্তা সহযোগিতা (security cooperation), প্রযুক্তিগত অংশীদারিত্ব (technology partnership) এবং জ্বালানি ক্ষেত্র (energy sector) নিয়েও আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে।

কেন এই সফর গুরুত্বপূর্ণ

এই বছর এই নিয়ে তৃতীয়বারের মতো ভারত ও আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা মুখোমুখি আলোচনা করছেন। লাগাতার বৈঠকগুলো ইঙ্গিত দেয় যে উভয় দেশই পারস্পরিক মতপার্থক্য কমাতে এবং সহযোগিতা বাড়াতে গুরুতর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট কর্তৃক আরোপিত ৫০ শতাংশ শুল্ক ভারতের রপ্তানি (exports) উপর প্রভাব ফেলেছে। বিশেষত স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম এবং ফার্মা পণ্যগুলিতে এর সরাসরি প্রভাব দেখা গেছে। এমন পরিস্থিতিতে জয়শঙ্করের এই সফর ভারতের জন্য একটি সুযোগ যে তিনি আমেরিকাকে বোঝাতে পারেন যে কঠোর শুল্ক উভয় দেশের জন্যই ক্ষতিকারক প্রমাণিত হতে পারে।

পীযূষ গোয়েলের ভূমিকা

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পাশাপাশি বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলও আমেরিকা পৌঁছেছেন। তাঁর এজেন্ডা স্পষ্ট—ভারত-মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি (trade agreement) চূড়ান্ত করা। ওয়াশিংটন ডিসিতে তিনি তার মার্কিন প্রতিপক্ষদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করবেন। পাশাপাশি নিউইয়র্কে তার ইউএসটিআর (USTR) জেমিসন গ্রিয়ারের সাথে দেখা করারও কর্মসূচি রয়েছে। ভারত দীর্ঘকাল ধরে চায় যে দুই দেশের মধ্যে যে অমীমাংসিত বাণিজ্যিক বিষয়গুলি রয়েছে, সেগুলি দ্রুত সমাধান করা হোক যাতে বিনিয়োগ (investment) এবং বাণিজ্যে নতুন গতি আসতে পারে।

বাণিজ্য বিরোধ এবং সম্ভাব্য সমাধান

ভারত ও আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্য বিরোধ নতুন নয়। গত কয়েক বছরে শুল্ক (ট্যারিফ) এবং বাজার প্রবেশাধিকার (market access) নিয়ে দুই দেশের মধ্যে একাধিকবার মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। ভারত মার্কিন কৃষি পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, অন্যদিকে আমেরিকা ভারতীয় আইটি পরিষেবা এবং ওষুধ নিয়ে কঠোর নিয়ম প্রয়োগ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে এই সফর এই সম্ভাবনা বাড়ায় যে উভয় দেশ একটি ভারসাম্যপূর্ণ পথ খুঁজে বের করবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, যদি এই বৈঠকে শুল্ক নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তাহলে এটি ভবিষ্যতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে।

কৌশলগত অংশীদারিত্ব নিয়েও আলোচনা হবে

এই সফর শুধুমাত্র বাণিজ্য পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়। ভারত ও আমেরিকার মধ্যে প্রতিরক্ষা (defense), ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল (Indo-Pacific strategy), প্রযুক্তিগত সহযোগিতা এবং জলবায়ু পরিবর্তন (climate change) এর মতো বিষয়গুলি নিয়েও গভীর আলোচনা হতে পারে। চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। জয়শঙ্কর ও রুবিওর বৈঠকে এই আন্তর্জাতিক বিষয়গুলি নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হওয়ার পূর্ণ সম্ভাবনা রয়েছে।

Leave a comment