সংসদে অচলাবস্থা: এসআইআর বিতর্ক এবং ক্রীড়া বিলের উপর সরকারের নজর

সংসদে অচলাবস্থা: এসআইআর বিতর্ক এবং ক্রীড়া বিলের উপর সরকারের নজর

সংসদের বাদল অধিবেশনে এসআইআর নিয়ে আলোচনার দাবি জানাচ্ছে বিরোধী দল। ক্রীড়া বিলগুলির উপর ফোকাস রাখছে সরকার। মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন বাড়ানোর প্রস্তাবও পেশ করা হবে।

Monsoon Session 2025: সংসদের বাদল অধিবেশন সম্ভবত ভেস্তে যেতে চলেছে। বিরোধী দল ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধনী (এসআইআর) নিয়ে আলোচনার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, অন্যদিকে সরকার ক্রীড়া প্রশাসন সংস্কার সংক্রান্ত বিলগুলি পাস করার উপর জোর দিচ্ছে। রাজ্যসভায় মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন বাড়ানোর প্রস্তাবও তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন ও বিরোধীদের মধ্যে বাকযুদ্ধ বেড়েছে। এসআইআর নিয়ে অচলাবস্থার মধ্যে আজ সংসদে ফের হট্টগোল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আজও সংসদে অচলাবস্থা বজায় থাকার সম্ভাবনা

সংসদের বর্তমান বাদল অধিবেশনে সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে সংঘাত ক্রমশ বাড়ছে। বিহার সহ বিভিন্ন রাজ্যে ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধনী (স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন - SIR) নিয়ে আলোচনার দাবি জানাচ্ছে বিরোধীরা। বিরোধীদের অভিযোগ, এই প্রক্রিয়া রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং এর মাধ্যমে তাদের সমর্থক ভোটারদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে সরকার এই বিষয়টিকে নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক অধিকার উল্লেখ করে আলোচনায় রাজি হচ্ছে না। এই বিতর্কের জেরে বারবার সংসদের কাজকর্ম স্থগিত করতে হচ্ছে।

ক্রীড়া প্রশাসন বিলের উপর সরকারের নজর

বিরোধীদের বিরোধিতা সত্ত্বেও সরকার লোকসভায় জাতীয় ক্রীড়া প্রশাসন বিলটি পাস করার পরিকল্পনা করছে। এই বিলের উদ্দেশ্য হল ক্রীড়া সংস্থাগুলির কাজকর্মের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। সরকারের বিশ্বাস, এই বিল ভারতীয় ক্রীড়া ক্ষেত্রে সংস্কারের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বিলে ক্রীড়া সংস্থাগুলির স্বায়ত্তশাসনের পাশাপাশি নজরদারি ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

রাজ্যসভায় মণিপুর নিয়ে আলোচনা

রাজ্যসভার কার্যসূচিতে মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন ১৩ অগাস্ট থেকে পরবর্তী ছয় মাসের জন্য বাড়ানো সংক্রান্ত প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই প্রস্তাব পেশ করবেন। মণিপুরে চলমান অস্থিরতা ও আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি বিবেচনা করে এই পদক্ষেপ জরুরি বলে জানানো হয়েছে।

দু'সপ্তাহ ধরে সংসদের কাজকর্ম বন্ধ

২১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া বাদল অধিবেশন এখনও পর্যন্ত গুরুতরভাবে প্রভাবিত হয়েছে। পহেলগাম জঙ্গি হামলা ও অপারেশন সিন্দুর ছাড়া কোনও বড় আলোচনা বা বিল পাস করানো সম্ভব হয়নি। এসআইআর নিয়ে আলোচনার দাবিতে সংসদের উভয় কক্ষে ক্রমাগত বিক্ষোভ দেখাচ্ছে বিরোধীরা।

বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ এসআইআর-এর বিরুদ্ধে एकजुटতা দেখিয়েছে। জোটের নেতাদের বক্তব্য, নির্বাচন কমিশনের এই পদক্ষেপ বিজেপির সমর্থনে ভোটার ভিত্তি প্রভাবিত করার কৌশল।

রাহুল গান্ধীর ভোট চুরির অভিযোগ

লোকসভায় বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচন কমিশন ‘ভোট চুরির’ সঙ্গে জড়িত এবং এসআইআর-এর মাধ্যমে নিরপেক্ষতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হচ্ছে।

জবাবে নির্বাচন কমিশন রাহুল গান্ধীর অভিযোগকে "পুরোপুরি ভিত্তিহীন, অপ্রমাণিত এবং বিভ্রান্তিকর" বলে অভিহিত করেছে। কমিশন আরও স্পষ্ট করেছে যে এই প্রক্রিয়া শুধুমাত্র যোগ্য ভোটারদের তালিকাতে ধরে রাখার জন্য করা হচ্ছে।

এসআইআর নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সাফাই

নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য, এসআইআর কোনও নতুন প্রক্রিয়া নয়। এর আগেও রাজ্যগুলিতে সময়ে সময়ে এই ধরনের সংশোধনী প্রক্রিয়া হয়েছে। কমিশনের আরও বক্তব্য, এসআইআর-এর উদ্দেশ্য হল শুধুমাত্র ভুয়ো ও অযোগ্য ভোটারদের সরানো, যাতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার স্বচ্ছতা বজায় থাকে।

নির্বাচন কমিশনের কাজকর্ম নিয়ে সংসদে বিতর্ক করা যায় না: রিজিজু

সংসদীয় কার্যমন্ত্রী কিরেন রিজিজু বলেছেন, নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক সংস্থা এবং এর কাজকর্ম নিয়ে সংসদে বিতর্ক করা যায় না। তিনি প্রাক্তন লোকসভার স্পিকার বলরাম জাখরের একটি রায়ের উল্লেখ করে বলেন, এ ধরনের বিতর্কের অনুমতি দেওয়া যায় না। এসআইআর এই প্রথমবার করা হচ্ছে না। নির্বাচন কমিশন তাদের অধিকারের আওতায় এই প্রক্রিয়া নিয়মিতভাবে করে থাকে। বিরোধীদের দাবি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া লোকসভা ও রাজ্যসভার স্পিকারের বিষয়।

সংসদে অপেক্ষমান অন্যান্য বিল

ক্রীড়া প্রশাসন বিল ছাড়াও লোকসভায় জাতীয় ডোপিং বিরোধী (অ্যান্টি-ডোপিং) সংশোধন বিলটিও বিবেচনার জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এই বিলটি ভারতে খেলার মধ্যে ডোপিং নিয়ন্ত্রণ এবং কঠোর নজরদারি ব্যবস্থা কার্যকর করার লক্ষ্যে আনা হয়েছে। সরকারের বক্তব্য, সংসদে অচলাবস্থা চলতে থাকলে তারা তাদের প্রধান বিলগুলি আলোচনা ছাড়াই পাস করানোর চেষ্টা করবে।

Leave a comment