প্রধানমন্ত্রী মোদীর জাপান-চীন সফর ভারতের অর্থনীতি ও কূটনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাপান থেকে বিনিয়োগ চুক্তি, চীনের সাথে সম্পর্কের উন্নতি এবং মার্কিন শুল্কের মধ্যে নতুন অর্থনৈতিক কৌশল প্রস্তুত করা এই সফরের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
প্রধানমন্ত্রী মোদী সফর: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এই এশিয়া সফর কেবল ভারতের জন্য নয়, বরং সমগ্র বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে। মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে বৈশ্বিক বাণিজ্য প্রভাবিত হচ্ছে, যেখানে ভারত তার কূটনীতি 'অন' করে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী প্রথমে জাপান এবং তারপরে চীনে সফরে রয়েছেন। এই সময়ে বেশ কয়েকটি অর্থনৈতিক ও কৌশলগত চুক্তি হওয়ার আশা করা হচ্ছে, যা ভারতের অর্থনীতিকে নতুন গতি দেবে।
জাপান সফরে বড় বিনিয়োগ প্যাকেজ
প্রধানমন্ত্রী মোদীর জাপান সফরের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হল বিনিয়োগ সংক্রান্ত চুক্তি। জানা গেছে যে ভারত ও জাপানের মধ্যে ১০০টিরও বেশি সমঝোতা স্মারক (MoUs) স্বাক্ষরিত হতে পারে। এই চুক্তিগুলির মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ, উচ্চ-মূল্যের উৎপাদন, সবুজ শক্তি, ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং পরিকাঠামো উন্নয়নে সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে।
ভারতের জন্য এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ মার্কিন শুল্ক নীতির কারণে বিশ্ব সরবরাহ শৃঙ্খলের উপর চাপ বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জাপানের মতো শক্তিশালী অংশীদারের সাথে ভারতের নতুন শক্তি সঞ্চার হবে।
সুজুকি মোটর-এর ৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ
জাপানের অন্যতম বড় কোম্পানি সুজুকি মোটর ভারতে আগামী ৬ বছরে ৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা করেছে। এই বিনিয়োগ ইলেকট্রিক যানবাহন, ব্যাটারি উৎপাদন এবং হাইব্রিড প্রযুক্তিতে হবে।
ভারত ইতিমধ্যেই বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অটোমোবাইল বাজারে পরিণত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জাপানি বিনিয়োগ ভারতের অটো শিল্পকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে এবং হাজার হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে পারে।
গুরুত্বপূর্ণ খনিজ এবং বিরল মৃত্তিকা (Rare Earth) খাতে ভারত-জাপান অংশীদারিত্ব
ভারতে বিরল মৃত্তিকা খনিজগুলির একটি বড় ভাণ্ডার রয়েছে, যা হাই-টেক শিল্পের জন্য অপরিহার্য। কিন্তু ভারত এখনও এগুলি নিষ্কাশন এবং প্রক্রিয়াকরণের জন্য উন্নত প্রযুক্তির অভাব রয়েছে।
জাপান এই খাতে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তিধারী দেশ। উভয় দেশের মধ্যে এবার বিরল মৃত্তিকা খাতে বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তি হস্তান্তরের উপর বড় সিদ্ধান্ত হওয়ার আশা করা হচ্ছে। এর ফলে ভারত কেবল একটি উৎপাদন কেন্দ্রই হবে না, বরং ইলেকট্রিক যানবাহন এবং সবুজ শক্তির জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর সরবরাহে স্বয়ংসম্পূর্ণও হতে পারবে।
গত পাঁচ বছরে সম্পর্ক শক্তিশালী হয়েছে
গত পাঁচ বছরে ভারত ও জাপানের মধ্যে জনসম্পর্কও শক্তিশালী হয়েছে। ২৫,০০০-এরও বেশি ভারতীয় পেশাদার জাপানের কর্মশক্তির অংশ হয়ে উঠেছেন। আইটি, ইঞ্জিনিয়ারিং, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষা খাতের ভারতীয় পেশাদাররা জাপানে নিজেদের একটি বিশেষ পরিচিতি তৈরি করেছেন।
এই সহযোগিতা এখন উভয় দেশের মধ্যে প্রযুক্তি এবং জ্ঞান ভাগ করে নেওয়াকেও বাড়িয়ে তুলবে।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর চীন সফর: ২০২০ সালের পর প্রথম সাক্ষাৎ
জাপান সফরের পর প্রধানমন্ত্রী মোদী চীনে যাবেন। তিনি সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (SCO) সম্মেলনে অংশ নেবেন। এই সাক্ষাৎ বিশেষ কারণ ২০২০ সালে गलवान উপত্যকায় ভারত-চীন সংঘাতের পর দুই দেশের সম্পর্ক অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ ছিল।
সাত বছর পর প্রধানমন্ত্রী মোদীর চীন সফর ইঙ্গিত দেয় যে উভয় দেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন সূচনা করতে প্রস্তুত। এই সাক্ষাৎ কেবল সীমান্ত বিরোধের উপর আলোচনার পথ খুলে দেবে না, বরং অর্থনৈতিক সহযোগিতার নতুন সুযোগও তৈরি করবে।
আমেরিকান শুল্ক যুদ্ধের মধ্যে ভারত-চীনের ঘনিষ্ঠতা
মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতি চীন এবং ভারত উভয়কেই প্রভাবিত করেছে। চীন ইতিমধ্যেই ভারতের সমর্থনে বিবৃতি দিয়েছে। এখন আশা করা হচ্ছে যে উভয় দেশ একত্রে মার্কিন চাপ মোকাবেলার জন্য বাণিজ্য ও বিনিয়োগের নতুন পথ খুঁজে বের করতে পারে।