আরজি কর কাণ্ডে নির্যাতিত তরুণীর পরিবার হাসপাতালের ঘটনাস্থল ঘুরে দেখার অনুমতি চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল। কিন্তু শিয়ালদহ আদালত সাফ জানিয়ে দেয়—তদন্তের সময় ‘ক্রাইম সিন’ পরিদর্শনের কোনও আইনি ছাড় নেই। বিচারক স্পষ্ট বলেন, যখন কোনও তদন্তকারী সংস্থা কাজ করছে, তখন ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ বা নিজস্ব বিশেষজ্ঞ দিয়ে তদন্ত চালানো আইনসম্মত নয়। এই রায়ে আদালত একটি স্পষ্ট বার্তা দেয়—সাংবিধানিক কাঠামোর বাইরে গিয়ে কোনও পদক্ষেপ বরদাস্ত করা হবে না।
পরিবারের আবেদন খারিজ, উচ্চ আদালতের দিকেই ইঙ্গিত বিচারকের
আবেদনের শুনানিতে বিচারক প্রশ্ন তোলেন, আপনারা কি সমান্তরাল তদন্ত করতে চাইছেন? তাহলে তো গোটা তদন্ত প্রক্রিয়াই প্রশ্নের মুখে পড়বে। এই মন্তব্য শুধু আবেদনের খারিজ নয়, বরং তদন্তে হস্তক্ষেপের যে কোনও প্রয়াসের বিরুদ্ধেও এক কঠিন বার্তা। বিচারক পরামর্শ দেন, এই বিষয়ে উপযুক্ত হলে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হওয়াই একমাত্র পথ।
সিবিআই-এর ‘নো অবজেকশন’ শংসাপত্র ঘিরে বিস্ময়, আদালতের কঠোর ভর্ৎসনা
শুনানির সময় আদালতের নজরে আসে, সিবিআই নিজেই নির্যাতিতার পরিবারকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের জন্য ‘নো অবজেকশন’ দিয়েছে। এই তথ্য সামনে আসতেই বিস্ময় প্রকাশ করেন বিচারক। তাঁর প্রশ্ন, সিবিআই কী করে এমন অনুমতি দিল? তাঁরা কি তদন্তের গুরুত্বই বুঝতে পারছেন না?’ এই মন্তব্য শুধু সিবিআই নয়, গোটা তদন্ত প্রক্রিয়ার উপরই এক বড় প্রশ্নচিহ্ন তৈরি করে।
তথ্যপ্রমাণ লোপাট তদন্তেও ত্রুটি? আদালতের প্রশ্নে চাপে সিবিআই
বিচারকের পর্যবেক্ষণ আরও তীব্র হয় যখন তিনি বলেন, তথ্যপ্রমাণ লোপাটের তদন্ত কীভাবে পরিচালিত হল, সেটাই এখন প্রশ্ন। ফরেনসিক এক্সপার্টরা কী করলেন? কোথায় গেলেন তারা? এই পর্যবেক্ষণ সিবিআই-এর দক্ষতা ও নিষ্ঠা নিয়েই এক গম্ভীর সংশয় প্রকাশ করে।
জামিন নিয়ে বিস্ফোরক পর্যবেক্ষণ: ‘এই কারণেই কি ছাড়া পেয়ে গেলেন অভিযুক্তেরা?’
সন্দীপ ঘোষ ও অভিজিৎ মণ্ডলের জামিন পাওয়া নিয়েও ক্ষোভ উগরে দেন বিচারক। তিনি বলেন, তদন্ত যদি দুর্বল হয়, আদালতের সামনে যদি তথ্য না থাকে, তাহলে আমরা কীভাবে চার্জশিটে আসতে পারি? এটাই কি জামিন পাওয়ার আসল কারণ? এই প্রশ্ন শুধু সিবিআই নয়, গোটা আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থার প্রতি এক কঠিন চ্যালেঞ্জ।
আরজি কর ধর্ষণ ও খুন মামলা: বছর পেরিয়ে প্রশ্নের পাহাড়, মিলছে না সঠিক উত্তর
২০২৪ সালের ৯ অগাস্ট, কলকাতার অন্যতম প্রাচীন মেডিক্যাল কলেজ RG Kar হাসপাতালের ভিতরে ঘটে যায় এক নারকীয় ঘটনা—ধর্ষণ ও খুন। অভিযোগের তীর তখনকার অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলের দিকে। একবছর পার হলেও, মামলার জট কাটছে না, বরং দিনে দিনে বাড়ছে প্রশ্ন। এদিন আদালতে ওঠা মন্তব্যগুলো স্পষ্ট করে দেয়—এই মামলা এখনও বহু অনুত্তর প্রশ্ন বয়ে বেড়াচ্ছে।