ট্রাম্পের ব্রাজিলের উপর ৫০% শুল্ক বৃদ্ধি। লুলার পাল্টা জবাবের হুঁশিয়ারি। BRICS দেশগুলিও নিশানায়। বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কা বৃদ্ধি।
ট্রাম্পের শুল্ক নীতি: প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্রাজিল থেকে আগত পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপের ঘোষণা করেছেন। এর আগে তিনি আরও ৭টি দেশের উপরও ভারী শুল্ক বসিয়েছিলেন। এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি লুলার ডা সিলভা এবং আমেরিকাকে অর্থনৈতিকভাবে জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। লুলার স্পষ্ট বক্তব্য, ব্রাজিল কোনো বাইরের চাপ বা হস্তক্ষেপ মেনে নেবে না। এই বিতর্কের জেরে আমেরিকা ও ব্রাজিলের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ বাধার সম্ভাবনা বাড়ছে।
ট্রাম্পের ব্রাজিলের উপর ৫০ শতাংশ আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্রাজিল থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর সরাসরি ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর আগে তিনি আলজেরিয়া, ইরাক, লিবিয়া, শ্রীলঙ্কা (৩০ শতাংশ), ব্রুনাই, মলদোভা (২৫ শতাংশ) এবং ফিলিপাইন্স (২০ শতাংশ)-এর মতো দেশগুলির উপরেও ভারী আমদানি শুল্কের ঘোষণা করেছিলেন। এই নতুন শুল্কগুলি ১লা আগস্ট থেকে কার্যকর হবে।
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তকে আমেরিকার বাণিজ্যিক স্বার্থ রক্ষা এবং রাজনৈতিক বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, এই পদক্ষেপ ব্রাজিলে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জাইর বলসোনারোর সঙ্গে হওয়া আচরণের প্রতিবাদে নেওয়া হয়েছে। বলসোনারোর বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ রয়েছে এবং তার বিচার চলছে।
রাষ্ট্রপতি লুলার তীব্র জবাব
ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি লুইজ ইনাসিও লুলা ডা সিলভা আমেরিকার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, যদি আমেরিকা ব্রাজিলের সঙ্গে একতরফা বাণিজ্য নীতি গ্রহণ করে, তবে ব্রাজিলও পাল্টা শুল্ক আরোপ করবে।
লুলা তাঁর সরকারি বিবৃতিতে বলেন, “যদি কোনো দেশ একতরফাভাবে শুল্ক বৃদ্ধি করে, তবে ব্রাজিল তার অর্থনৈতিক পারস্পরিকতা আইনের (Reciprocity Law) অধীনে জবাব দেবে।”
সোশ্যাল মিডিয়ায় লুলার কড়া প্রতিক্রিয়া
ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি লুলা ডা সিলভা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম X-এও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ব্রাজিল একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র এবং কোনো বাইরের চাপ বা হস্তক্ষেপ তারা মেনে নেবে না।
তিনি আরও লিখেছেন, “আমাদের বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন এবং কোনো বিদেশি সরকারের চাপে আসবে না। বলসোনারোর বিরুদ্ধে যে মামলাগুলি চলছে, সেগুলি সম্পূর্ণরূপে ব্রাজিলের বিচার বিভাগের অধীনে।”
ট্রাম্পের অভিযোগকে মিথ্যা বলে দাবি
ট্রাম্প ব্রাজিলের বিরুদ্ধে এই অভিযোগও করেছেন যে তারা আমেরিকার সঙ্গে অন্যায্য বাণিজ্য করছে এবং আমেরিকায় নির্বাচনী হস্তক্ষেপ ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর আঘাত হানছে। এই অভিযোগের জবাবে লুলা বলেছেন, ট্রাম্পের সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর।
লুলার বক্তব্য, “গত ১৫ বছরে আমেরিকা ও ব্রাজিলের বাণিজ্য সম্পর্ক থেকে আমেরিকার ৪১০ বিলিয়ন ডলার লাভ হয়েছে। এই পরিসংখ্যান স্বয়ং আমেরিকার সরকারি রিপোর্টে স্পষ্ট। তবুও যদি আমেরিকা আমাদের ক্ষতি করতে চায়, তবে আমরা চুপ করে থাকব না।”
ট্রাম্পের BRICS-কে সরাসরি হুমকি
ট্রাম্প তাঁর শুল্ক নীতির বিস্তারের অংশ হিসেবে BRICS গোষ্ঠীকেও নিশানা করেছেন। তিনি বলেছেন, BRICS আমেরিকার বিরুদ্ধে কাজ করছে এবং এর উদ্দেশ্য হল ডলারের বিশ্বব্যাপী অবস্থানকে দুর্বল করা। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে BRICS-এর অন্তর্ভুক্ত দেশগুলির উপরেও দ্রুত ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করা হবে।
BRICS-এর মধ্যে ভারত, রাশিয়া, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ব্রাজিল অন্তর্ভুক্ত। ট্রাম্প বলেছেন, “যদি এই দেশগুলি ডলারের পরিবর্তে অন্য কোনো মুদ্রা আনার চেষ্টা করে, তবে তাদের চরম মূল্য দিতে হবে। যদি আমেরিকা তার মুদ্রার স্থান হারায়, তবে তা জাতীয় নিরাপত্তা এবং বিশ্ব স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হবে।”
দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের উপরেও শুল্ক
ট্রাম্পের শুল্ক নীতি শুধুমাত্র ব্রাজিলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর আগে তিনি দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপান থেকে আসা সমস্ত পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করেছেন। ট্রাম্প বলেছেন, এই সিদ্ধান্তগুলি আমেরিকার দীর্ঘদিনের বাণিজ্য ঘাটতিকে স্থিতিশীল করার জন্য প্রয়োজনীয়।
২০টির বেশি দেশ এখন নিশানায়
এ পর্যন্ত ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কবলে পড়েছে ২০টির বেশি দেশ। এর মধ্যে মায়ানমার, লাওস, দক্ষিণ আফ্রিকা, কাজাখস্তান, মালয়েশিয়া, তিউনিসিয়া, ইন্দোনেশিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, বাংলাদেশ, সার্বিয়া, কম্বোডিয়া এবং থাইল্যান্ড অন্তর্ভুক্ত।
ট্রাম্প স্পষ্ট করেছেন, যে দেশগুলি আমেরিকার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে শুল্ক এবং অশুল্ক বাধা তৈরি করছে, তাদের এবার জবাব দেওয়া হবে। তিনি বলেন, “বাণিজ্য ঘাটতি আমাদের অর্থনীতি এবং নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি। এখন সময় এসেছে আমেরিকার স্বার্থ রক্ষার।”