শান্তিনিকেতনের শিক্ষা স্থানে বেআইনি দখলদারির অভিযোগ
শিক্ষার তীর্থভূমি শান্তিনিকেতনে এবার চরম অশান্তির সুর। গোয়ালপাড়া তনয়েন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের জমি বেআইনিভাবে দখল করে রেখেছেন স্থানীয় এক রিসর্ট মালিক—এই গুরুতর অভিযোগে উত্তাল বোলপুর মহকুমা। অভিযোগ উঠেছে, প্রায় সাড়ে চার কাঠা জমি জবরদখল করে সেখানে প্রাচীর তুলে গড়ে তোলা হয়েছে দোকানঘর। সরকারি বিদ্যালয়ের জমিতে এইরকম অনাধিকার প্রবেশে রীতিমতো বিস্মিত স্থানীয়রা।

অভিযোগ জানালেও প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অনাথবন্ধু মণ্ডল জানিয়েছেন, জেলা শাসক থেকে বিদ্যালয় পরিদর্শক, এমনকি শ্রীনিকেতন-শান্তিনিকেতন উন্নয়ন পর্ষদ পর্যন্ত একাধিকবার চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবুও জমি উদ্ধারে কোনও দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই। সরকারি সম্পত্তি রক্ষায় প্রশাসনের এই নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বহু মানুষ।

‘দিদিকে বলো’-তেই নড়ে বসে প্রশাসন, বরাদ্দ আসে সাংসদ তহবিল থেকে
প্রথমে বিদ্যালয়ের চারপাশে প্রাচীর নির্মাণের আবেদন নানা সরকারি দপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছিল। ফল না মেলায় শিক্ষকরা ‘দিদিকে বলো’ নম্বরে অভিযোগ করেন। এরপরেই সাংসদ অসিত মাল তাঁর তহবিল থেকে ৩৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেন। সেই অর্থেই শুরু হয় চারদেওয়াল নির্মাণের কাজ, যার মধ্যেই ফাঁস হয়ে যায় বহুল চর্চিত জমি কেলেঙ্কারি।
সীমানা নির্ধারণেই ধরা পড়ে চাঞ্চল্যকর সত্য, স্কুলজমির সাড়ে চার কাঠা বেহাত!
বিদ্যালয়ের তরফে প্রায় ২৮ হাজার টাকা খরচ করে জমির সীমানা নির্ধারণ করা হয়। তখনই রিপোর্টে উঠে আসে বিস্ফোরক তথ্য—তিনটি পৃথক খতিয়ান নম্বরের আওতায় থাকা স্কুলের জমির একটি বড় অংশ ইতিমধ্যেই দখল করে নিয়েছেন ভরত ঘোষ নামে এক রিসর্ট মালিক। তবে অভিযুক্ত এখনো মুখে কুলুপ এঁটেছেন। ফোনে যোগাযোগ করেও কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

অভিযুক্তের নীরবতা ও জমি মাফিয়ার দাপট—অবনমিত প্রশাসনিক কর্তৃত্ব
স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, শান্তিনিকেতনে সরকারি হোক বা ব্যক্তিগত, জমি দখলের ঘটনা নতুন নয়। বিভিন্ন জায়গায় আদিবাসী জমি কিংবা ফাঁকা সরকারি প্লটে একের পর এক নির্মাণ কাজ চলছে। তবে এবার যখন একটি স্কুলের জমিই বেহাত হয়ে গেল, তখন প্রশ্ন উঠছে—কোন মাপকাঠিতে কাজ করছে প্রশাসন?
জমি বাঁচাতে মরিয়া স্থানীয়রা, উঠছে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক
বিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী ও স্থানীয়রা মিলে জমি উদ্ধারে সরব হচ্ছেন ধাপে ধাপে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়াচ্ছে এই ঘটনার খবর। অনেকে বলছেন, প্রয়োজনে বিক্ষোভ কর্মসূচি ও আইনগত লড়াইয়ের পথে হাঁটতে প্রস্তুত তাঁরা। কেননা, বিদ্যালয়ের জমি শুধু স্থানের অধিকার নয়, তা ভবিষ্যতের শিক্ষার ভিত।

জমি রক্ষায় প্রশাসনের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপের দিকেই চেয়ে সকলের চোখ
এই ঘটনায় প্রশাসন এখন কী ভূমিকা নেয়, তা নিয়েই রয়েছে প্রবল কৌতূহল। সরকারি জমি রক্ষা করা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব হলেও এক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয়তা স্পষ্ট। প্রশ্ন উঠছে, যদি সরকারি বিদ্যালয়ের জমিও নিরাপদ না থাকে, তবে অন্য জমিগুলোর ভবিষ্যৎ কী হবে?
শিক্ষার ভবিষ্যৎ কি বাণিজ্যের থাবায় পিষ্ট হবে? প্রশ্ন উঠছে সর্বত্র
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষার জন্য যে প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল, তার জমিতেই যদি বেআইনি দখলদারি চলে, তবে তা শুধুমাত্র আইনি নয়, নৈতিক প্রশ্নও তোলে। শিক্ষা আর উন্নয়নের ভারসাম্য বজায় রাখতে হলে প্রশাসনকে এখনই কঠোর পদক্ষেপ করতে হবে, নয়তো শান্তিনিকেতনের শিক্ষার গর্ব ধুলোয় মিশবে।













