শ্রাবণ মাস, অর্থাৎ সাवन মাস, ভগবান শিবের উপাসনার জন্য সবচেয়ে পবিত্র সময় হিসেবে বিবেচিত হয়। এই পুরো মাসে শিব ভক্তরা উপবাস, রুদ্রাভিষেক এবং বিশেষ পূজার মাধ্যমে মহাদেবের কৃপা লাভের চেষ্টা করেন। বিশেষ বিষয় হল, এই মাসে শিবলিঙ্গে কিছু বিশেষ সামগ্রী অর্পণ করার প্রথা রয়েছে, যা ছাড়া পূজা অসম্পূর্ণ বলে মনে করা হয়।
আপনি যদি কাওাড় যাত্রা না করেন, তাহলেও বাড়িতে শিব পূজা করার সময় কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস অন্তর্ভুক্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি এই সামগ্রীগুলি সম্পর্কে অবগত না হন, তবে এই প্রতিবেদনে আমরা আপনাকে সাভানে শিব পূজার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের একটি সম্পূর্ণ তালিকা জানাতে যাচ্ছি।
শিব পূজার প্রধান উপকরণ কি কি?
ভগবান শিবের পূজা সহজ বলে মনে করা হয়, তবে সাভানে পূজার পদ্ধতি কিছু বিশেষ হয়ে ওঠে। এই সময়ে, শিব ভক্তরা সকালে স্নান করে শুদ্ধ বস্ত্র পরিধান করে শিবলিঙ্গের অভিষেক করেন। অভিষেকের জন্য জল, দুধ, গঙ্গাজল, মধু, দই ইত্যাদি সামগ্রী ব্যবহার করা হয়।
সাভানে পূজার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর তালিকা
আপনি যদি বাড়িতে শিব পূজার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তবে এই সামগ্রীগুলো আগে থেকেই সংগ্রহ করে নিন:
- গঙ্গাজল – শিবলিঙ্গকে শুদ্ধ করার জন্য
- ঘি – পঞ্চামৃতের জন্য
- দই এবং মধু – পঞ্চামৃত বানানোর জন্য
- চিনি এবং মিশ্রি – নৈবেদ্য এবং পঞ্চামৃতের জন্য
- শমী পাতা – শুভ বলে মনে করা হয়
- বেল পাতা – শিবের অতি প্রিয়
- কাঁচা গরুর দুধ – অভিষেকের জন্য
- সাদা চন্দন – তিলক এবং শীতলতার জন্য
- ফুল এবং মালা – বিশেষ করে সাদা ফুল
- অপামার্গ পাতা – পূজায় বিশেষ গুরুত্ব
- দুর্বা ঘাস – মঙ্গলদায়ক মনে করা হয়
- ধুতুরা এবং ভাঙ – শিবের বিশেষ প্রিয়
- সুপারি, লবঙ্গ, এলাচ এবং পান পাতা – পূজার সামগ্রীর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত
- মিষ্টি ও নৈবেদ্য – ভোগ নিবেদনের জন্য
- ধূপ, দীপ ও কর্পূর – আরতির সময়
- রুইয়ের বাতি ও শুদ্ধ তেল – প্রদীপ জ্বালানোর জন্য
- শুদ্ধ কাপড় ও যজ্ঞোপবীত (জেনেউ) – পূজার সময়
- ভগবান শিবের প্রতিমা বা ছবি – ধ্যান ও অর্পণের জন্য
এই সমস্ত সামগ্রী যথাযথভাবে অর্পণ করলে শিব প্রসন্ন হন এবং ভক্তের মনোষ্কামনা পূরণ হয়।
পূজার আগে এই বিষয়গুলো মনে রাখুন
পূজার সময় ভক্তদেরও সম্পূর্ণরূপে শুদ্ধ ও পবিত্র থাকতে হবে। স্নানের পরেই পূজা শুরু করুন এবং পরিষ্কার কাপড় পরিধান করুন। চেষ্টা করুন, পূজার স্থানটিও যেন সম্পূর্ণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে এবং সেখানে একটি সাত্ত্বিক পরিবেশ বজায় থাকে।
শিবলিঙ্গে কোন জিনিসগুলো অর্পণ করা উচিত নয়
যেখানে এক দিকে সাভানে বিশেষ সামগ্রী শিবকে অর্পণ করার প্রথা রয়েছে, সেখানে এমন কিছু জিনিসও রয়েছে যা ভুল করেও শিবলিঙ্গে অর্পণ করা উচিত নয়।
- কেতকী ফুল – শাস্ত্রে এটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
- তুলসী পাতা – এটি বিষ্ণুকে উৎসর্গীকৃত, শিবলিঙ্গে অর্পণ করা উচিত নয়।
- ভাঙা বেল পাতা – শিবলিঙ্গে ভাঙা বেল পাতা দেওয়া উচিত নয়।
- সিঁদুর বা কুমকুম – এটি শিব পূজায় নিষিদ্ধ বলে মনে করা হয়।
ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, এই সামগ্রী অর্পণ করলে শিব রুষ্ট হতে পারেন এবং পূজা বিফল হতে পারে।
পূজার সময় কোন নিয়মগুলো পালন করা জরুরি
- সাভানে তামসিক খাবার, যেমন মাংস-মদ থেকে দূরে থাকতে হবে।
- উপবাস পালনকারী ভক্তদের ব্রহ্মচর্য পালন করা আবশ্যক।
- পূজার সময় মোবাইল বা কোনো প্রকার অপ্রয়োজনীয় কথোপকথন থেকে বিরত থাকতে হবে।
- শান্ত মনে ভগবান শিবের ধ্যান করতে হবে এবং সংকল্প করে পূজা করতে হবে।
শিব পূজায় পঞ্চামৃতের গুরুত্ব
পঞ্চামৃত – অর্থাৎ পাঁচটি পবিত্র পদার্থ – দুধ, দই, ঘি, মধু এবং চিনি – এগুলি দিয়ে শিবলিঙ্গের অভিষেক করা বিশেষ ফলদায়ক বলে মনে করা হয়। পঞ্চামৃত শিবলিঙ্গের অভিষেকের সময় ব্যবহার করা হয় এবং অবশেষে শুদ্ধ জল বা গঙ্গাজল দিয়ে অভিষেক সম্পন্ন করা হয়।