সূর্যের উপকার যেমন আছে, ক্ষতিও তেমন মারাত্মক
সকালে ১৫ মিনিট গায়ে রোদ লাগানো শরীরের জন্য উপকারী। এতে ভিটামিন-ডি এর ঘাটতি মেটে। কিন্তু যখন সূর্যের কড়া রশ্মি চামড়ায় সোজাসুজি লাগে, তখন উপকারের চেয়ে ক্ষতিই অনেক বেশি হয়। সানস্ক্রিন ছাড়া রোদে বেরোলে ট্যান তো হবেই, সঙ্গে ত্বক গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শীত, গ্রীষ্ম বা বর্ষা— যে ঋতুই হোক না কেন, সূর্যের ইউভি রশ্মি সারা বছর ত্বককে প্রভাবিত করে। তাই সানস্ক্রিন কেবল গরমের জন্য নয়, সারা বছরের সঙ্গী হওয়া উচিত।
সানবার্ন প্রতিরোধে প্রথম সুরক্ষা ঢাল
গরমে কিংবা মেঘলা দিনে বাইরে বেরোলেই অনেকের মুখ, হাত বা পায়ে লালচে র্যাশ দেখা দেয়। যাদের ত্বক সংবেদনশীল, তারা রোদে দাঁড়ালেই পুড়ে যায়। এটিই মূলত সানবার্ন। চিকিৎসকরা বারবার সতর্ক করে বলেছেন, ইউভিবি রশ্মি সরাসরি ত্বকের কোষে ঢুকে ক্ষয় ঘটায়। সানস্ক্রিন হল সেই প্রাথমিক সুরক্ষা ঢাল, যা ইউভিবি রশ্মিকে চামড়ায় প্রবেশ করতে দেয় না। নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে এই মারাত্মক সমস্যাকে সহজেই প্রতিরোধ করা যায়।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতেও কার্যকর সানস্ক্রিন
অনেক গবেষণা বলছে, অতিরিক্ত রোদে থাকার ফলে ত্বকের কোষ নষ্ট হতে থাকে। সেই ক্ষতির জেরেই অনেক সময় ত্বকের ক্যান্সার হতে পারে। যাদের ত্বক ফর্সা, মেলানিন কম, তারা সূর্যের সংস্পর্শে এলেই ঝুঁকিতে থাকেন বেশি। চিকিৎসা-বিজ্ঞানীদের মতে, প্রতিদিন সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে এই ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। সানস্ক্রিন তাই কেবল সৌন্দর্য রক্ষা নয়, বরং জীবন বাঁচানোরও এক গুরুত্বপূর্ণ উপায়।
অকাল বার্ধক্য আটকায়, রাখে তারুণ্য অটুট
অনেকেই অভিযোগ করেন, বয়স বাড়ার আগেই ত্বকে বলিরেখা, দাগছোপ আর কুঁচকানো দেখা দিচ্ছে। আসল দোষী হল সূর্যের ইউভি রশ্মি। এগুলো চামড়ার কোলাজেন ভেঙে দেয়, ফলে ত্বক ঢিলে হয়ে যায়। এর জেরে অকাল বার্ধক্যের ছাপ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহারে এই ক্ষয়প্রক্রিয়া অনেকটা ধীর হয়। তাই ‘অ্যান্টি-এজিং ক্রিম’ এর উপর ভরসা করার বদলে প্রতিদিন সানস্ক্রিন মাখলে তারুণ্য আরও দীর্ঘ সময় অটুট থাকে।
ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে সানস্ক্রিন
রোদে বেরোলে শরীরের জলশূন্যতা যেমন বাড়ে, তেমনই ত্বকও ডিহাইড্রেটেড হয়ে যায়। শুকনো, খসখসে আর নিস্তেজ ত্বক এভাবেই তৈরি হয়। আধুনিক সানস্ক্রিনে থাকে হায়ালুরনিক অ্যাসিড ও সেরামাইডের মতো উপাদান, যা ত্বকের ভেতরের আর্দ্রতা ধরে রাখে। ফলে সানস্ক্রিন একদিকে সূর্যের ক্ষতি আটকায়, অন্যদিকে প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজ়ারের ভূমিকা নেয়। যারা প্রতিদিন সানস্ক্রিন ব্যবহার করেন, তাদের ত্বক সাধারণত টানটান, উজ্জ্বল ও হাইড্রেটেড থাকে।
শুধু রোদ নয়, ছায়াতেও প্রয়োজন সানস্ক্রিন
অনেকের মনে ধারণা, সরাসরি রোদে না গেলে সানস্ক্রিন লাগানোর দরকার নেই। কিন্তু এ ধারণা একেবারেই ভুল। বাড়ির জানালা দিয়ে আসা সূর্যের আলো, এমনকি ল্যাপটপ বা মোবাইল স্ক্রিনের ব্লু লাইটও ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। তাই ঘরে থাকলেও বা ছায়ায় দাঁড়িয়েও সানস্ক্রিন মাখা জরুরি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিদিন সকালে মুখ ধোয়ার পর ময়েশ্চারাইজ়ারের সঙ্গে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। এটাই দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষার সহজ উপায়।
সৌন্দর্য নয়, সুরক্ষার প্রশ্ন
অতএব স্পষ্ট, সানস্ক্রিন শুধু ট্যান এড়ানোর উপকরণ নয়। এটি একদিকে সানবার্ন প্রতিরোধ করে, অন্যদিকে ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগের ঝুঁকি কমায়। পাশাপাশি অকাল বার্ধক্য আটকায়, ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে আর ঘরোয়া জীবনেও ত্বককে সুরক্ষা দেয়। তাই ঋতু নির্বিশেষে প্রতিদিন সানস্ক্রিন মাখা একেবারেই অপরিহার্য। স্বাস্থ্যকর, উজ্জ্বল ও নিরাপদ ত্বকের জন্য সানস্ক্রিনকে করুন আপনার প্রতিদিনের অভ্যাস।