আমেরিকান সিনেটর এবং ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ লিন্ডসে গ্রাহাম এই বিল পেশ করেছেন। তাঁর বক্তব্য, রাশিয়ার মোট তেল রপ্তানির প্রায় ৭০% যায় ভারত এবং চীনে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি পদের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও আলোচনায়, এবার কারণ হল রাশিয়াকে অর্থনৈতিকভাবে কোণঠাসা করার তাঁর নতুন পরিকল্পনা। ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তিনি সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহামের পেশ করা একটি বিল, Sanctioning Russia Act 2025-কে গুরুত্ব সহকারে সমর্থন করতে পারেন। এই আইনের অধীনে, যে দেশগুলো রাশিয়া থেকে তেল, গ্যাস বা অন্যান্য শক্তি উৎপাদন ক্রয় চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের উপর কড়া অর্থনৈতিক জরিমানা আরোপ করা যেতে পারে। এই তালিকায় ভারত এবং চীন সবার উপরে রয়েছে।
ক্যাবিনেট মিটিংয়ে ট্রাম্পের বড় মন্তব্য
ট্রাম্প সম্প্রতি একটি ক্যাবিনেট মিটিংয়ে বলেছেন, “এই আইনটি কার্যকর করা হবে কিনা, তা সম্পূর্ণভাবে আমার এখতিয়ারের মধ্যে। আমি বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছি।” ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে তাঁর অবস্থান আগের চেয়ে আরও কঠোর দেখা যাওয়ার কারণে ট্রাম্পের এই মন্তব্য এসেছে।
তিনি আরও স্পষ্ট করেছেন যে, মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রককে ইউক্রেনকে আরও বেশি প্রতিরক্ষামূলক অস্ত্র সরবরাহ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে ট্রাম্প এখন ইউক্রেন সংকট নিয়ে কৌশলগতভাবে আক্রমণাত্মক অবস্থান নিচ্ছেন।
আসলে কী এই Sanctioning Russia Act 2025?
এই প্রস্তাবিত আইনের সূচনা হয় এপ্রিল ২০২৫-এ, সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহামের মাধ্যমে, যিনি ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। এই আইনে বলা হয়েছে, যে দেশ রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল, গ্যাস, ইউরেনিয়াম বা অন্যান্য পেট্রোলিয়াম পণ্য কিনবে, তাদের উপর আমেরিকা ৫০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করতে পারে।
বিলে আরও বলা হয়েছে, রাশিয়ার সরকারি সংস্থা, প্রতিষ্ঠান এবং শীর্ষ কর্মকর্তাদের উপর ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে, যাতে পুতিনের অর্থনৈতিক কার্যকলাপের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলা যায়। সিনেটর গ্রাহাম বলেছেন, “এই বিল পুতিনের সঙ্গে ভবিষ্যতের আলোচনার পথ খুলে দেবে এবং ট্রাম্পের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।”
ভারত ও চীন কেন নিশানায়?
গ্রাহাম স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, এই আইন সেই দেশগুলোকে নিশানা করে, যারা রাশিয়া থেকে শক্তি উৎপাদন কেনে এবং ইউক্রেনকে সাহায্য করে না। তিনি বলেন, “যদি আপনি রাশিয়া থেকে তেল কেনেন এবং তার যুদ্ধাভিযানকে পরোক্ষভাবে অর্থনৈতিক সমর্থন দেন, তাহলে আমেরিকায় আপনার পণ্যের উপর ৫০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হবে।”
তিনি আরও জানান যে, ভারত এবং চীন মিলিতভাবে রাশিয়ার প্রায় ৭০ শতাংশ তেল রপ্তানির জন্য দায়ী। এমতাবস্থায়, এই আইনের সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে এই দুই দেশের উপর।
অন্যান্য দেশগুলোর প্রতিও কঠোর মনোভাব
ট্রাম্পের নীতি শুধু ভারত বা চীনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। সম্প্রতি তিনি আরও সাতটি দেশ—ফিলিপাইন, ব্রুনাই, মলদোভা, আলজেরিয়া, লিবিয়া, ইরাক এবং শ্রীলঙ্কাকে চিঠি পাঠিয়ে জানিয়েছেন যে, তাদের পণ্যের উপর আমেরিকা শুল্ক বাড়াতে চলেছে। এই দেশগুলো আমেরিকার বড় বাণিজ্যিক অংশীদার নয়, তবে এটি ট্রাম্পের নীতির বিস্তারকে প্রতিফলিত করে।
এর আগে ট্রাম্প সার্বিয়ার উপরও ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। তিনি বলেছেন, শুল্ক আরোপের এই কৌশল বাণিজ্য আলোচনা এবং বৈশ্বিক স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করার একটি উপায়।
আফ্রিকার দেশগুলোর জন্য আপাতত স্বস্তি
ট্রাম্পকে যখন আফ্রিকার দেশ—লাইবেরিয়া, সেনেগাল, গ্যাবন, মৌরিতানিয়া এবং গিনি-বিসাউ-এর নেতাদের মার্কিন সফর নিয়ে প্রশ্ন করা হয়, তখন তিনি বলেন, “এরা এখন আমার বন্ধু। আমি এদের উপর কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছি না।” এই মন্তব্য এটাও দেখায় যে ট্রাম্প ব্যক্তিগত কূটনীতিকে কীভাবে গুরুত্ব দেন।
ভারতের জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি
ভারতের জন্য এই পরিস্থিতি বেশ সংবেদনশীল বলে মনে করা হচ্ছে। একদিকে, ভারতের জ্বালানি চাহিদা মেটানোর জন্য রাশিয়া থেকে সস্তা তেল আসছে, অন্যদিকে, আমেরিকার সঙ্গে তার কৌশলগত সম্পর্কও গভীর হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে, যদি এই আইন পাস হয় এবং কার্যকর করা হয়, তাহলে ভারতকে তার বাণিজ্য বিষয়ক সিদ্ধান্তগুলো পুনর্বিবেচনা করতে হতে পারে।
যদিও, ভারত এখনো রাশিয়া থেকে তেল আমদানি নিয়ে কোনো প্রকাশ্যে মন্তব্য করেনি এবং এটাও স্পষ্ট নয় যে, এই বিল কার্যকর হলে ভারত কী ধরনের কৌশল নেবে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের উপর প্রভাব
যদি আমেরিকা সত্যিই ৫০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের নীতিতে এগিয়ে যায়, তাহলে এর প্রভাব শুধু ভারত বা চীনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। বিশ্বব্যাপী তেল বাণিজ্য, লজিস্টিক্স, সরবরাহ শৃঙ্খল এবং কাঁচামালের দামের উপর এর সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে। সেই সঙ্গে, এটি নতুন বাণিজ্য যুদ্ধের সূচনাও করতে পারে।