আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সেমিকন্ডাক্টর চিপের উপর 100 শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা করেছেন, যা বিশ্ব প্রযুক্তি বাজারে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এই সিদ্ধান্ত চীন, ভারত, জাপানের মতো দেশগুলির জন্য কঠিন হতে পারে এবং এটি ভারতের সেমিকন্ডাক্টর স্বনির্ভরতার গতিকেও প্রভাবিত করতে পারে।
Semiconductor Tariff: ওয়াশিংটন থেকে আসা খবর অনুযায়ী, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বজুড়ে আমদানি করা সেমিকন্ডাক্টর চিপের উপর 100 শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা করেছেন। এই সিদ্ধান্ত এমন সময়ে এসেছে যখন ভারত, চীন ও জাপানের মতো দেশ এই ক্ষেত্রে দ্রুত আত্মনির্ভর হওয়ার দিকে কাজ করছে। ট্রাম্প এই পদক্ষেপ আমেরিকান টেক ইন্ডাস্ট্রিকে বিদেশি নির্ভরতা থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে নিয়েছেন। এতে বিশ্বব্যাপী সাপ্লাই চেইন এবং প্রযুক্তিগত অংশীদারিত্বের উপর সরাসরি প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কেন 100 শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে?
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতি সবসময় আক্রমণাত্মক এবং আত্মনির্ভরতার উপর কেন্দ্র করে তৈরি। এইবার সেমিকন্ডাক্টর চিপের উপর এত ভারী শুল্ক আরোপের পিছনে তার উদ্দেশ্য হল আমেরিকান শিল্পগুলিকে চীন এবং অন্যান্য এশীয় দেশগুলির উপর নির্ভরতা থেকে মুক্ত করা।
ট্রাম্প প্রশাসন এই সিদ্ধান্ত ভারত, রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক ভারসাম্যহীনতার কারণে নিয়েছে। বিশেষ করে রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কেনা নিয়ে আমেরিকার অসন্তোষ প্রকাশ্যে এসেছে। এই অসন্তোষের কারণে আমেরিকা প্রথমে ভারতের উপর 25 শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল, যা এখন বাড়িয়ে 50 শতাংশ করা হয়েছে।
এখন ট্রাম্প চিপের উপর 100 শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা করে প্রযুক্তি ভিত্তিক বাণিজ্যিক সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছেন।
চিপ ইন্ডাস্ট্রির উপর বিশ্বব্যাপী প্রভাব
সেমিকন্ডাক্টর চিপস শুধুমাত্র মোবাইল বা কম্পিউটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি আজকের অটোমোবাইল, ডিফেন্স, এভিয়েশন, ইলেকট্রনিক্স এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মতো অনেক নতুন প্রযুক্তির মেরুদণ্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্বের চিপ ম্যানুফ্যাকচারিং-এর বড় অংশ তাইওয়ান, চীন ও জাপানের মতো দেশের দখলে। আমেরিকা এই দেশগুলি থেকে প্রচুর পরিমাণে চিপ আমদানি করে। 100 শতাংশ শুল্ক আরোপ করার ফলে এই দেশগুলির জন্য আমেরিকান বাজার আরও ব্যয়বহুল এবং জটিল হয়ে উঠবে।
এর সরাসরি প্রভাব প্রযুক্তি পণ্যের দাম, সাপ্লাই চেইন এবং উদ্ভাবনের গতির উপর পড়বে।
আত্মনির্ভরতার গতিতে লাগাম লাগতে পারে
ভারত সরকার যে গতিতে সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিংকে बढ़ावा দেওয়ার চেষ্টা করছে, তার উপর এই শুল্কের সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে। ভারত এখনও পর্যন্ত সেমিকন্ডাক্টর নির্মাণে আত্মনির্ভর হতে পারেনি, এবং এর জন্য তার অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, সরঞ্জাম এবং অংশীদারিত্বের প্রয়োজন।
ট্রাম্পের এই শুল্ক ভারতের আমেরিকান প্রযুক্তির উপর নির্ভরতাকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে, যার ফলে ভারতীয় কোম্পানিগুলোকে ইউরোপ, কোরিয়া, তাইওয়ানের মতো বিকল্পের দিকে ঝুঁকতে হতে পারে।
ভারতের জন্য কী কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে?
ভারত সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রির দিকে দ্রুতগতিতে এগিয়েছে। সরকার এই ক্ষেত্রকে উৎসাহিত করার জন্য অনেক উৎসাহমূলক প্রকল্প শুরু করেছে, যার মধ্যে ₹76,000 কোটির সেমিকন্ডাক্টর মিশন প্রধান।
ভারতের সেমিকন্ডাক্টর বাজার:
- 2022 সালে: প্রায় $23 বিলিয়ন ডলার
- 2025 সালে (অনুমানিত): $50 বিলিয়ন ডলারের বেশি
- 2030 সাল পর্যন্ত অনুমান: $100-110 বিলিয়ন ডলার
আমেরিকা কর্তৃক আরোপিত এই শুল্কের প্রভাব ভারতের এক্সপোর্ট পলিসি, বিদেশি বিনিয়োগ এবং গ্লোবাল পার্টনারশিপের উপর পড়তে পারে। ভারতের অনেক টেক কোম্পানি আমেরিকান কোম্পানির সঙ্গে অংশীদারিত্বে চিপ ডিজাইন বা প্রসেসিং-এর কাজ করে। এই শুল্কের কারণে আমেরিকান বাজারে প্রবেশ করা তাদের জন্য ব্যয়বহুল এবং ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে।
চীন ও জাপানের উপর প্রভাব
চীন আগে থেকেই আমেরিকার সঙ্গে ট্রেড ওয়্যার (Trade war) -এর শিকার। এমন পরিস্থিতিতে চিপসের উপর 100 শতাংশ শুল্ক তার অর্থনীতির উপর আরও চাপ সৃষ্টি করতে পারে। আমেরিকা চীন থেকে প্রচুর পরিমাণে ইলেকট্রনিক পণ্য আমদানি করে, যার মধ্যে বেশিরভাগেই সেমিকন্ডাক্টর চিপস লাগানো থাকে।
অন্যদিকে জাপান, যারা প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আমেরিকার কৌশলগত অংশীদার, তাদেরও এই সিদ্ধান্তে ক্ষতি হতে পারে। আমেরিকা ও জাপানের মধ্যে চিপ প্রযুক্তি নিয়ে অনেক যৌথ প্রকল্প চলছে, যা এই শুল্কের কারণে প্রভাবিত হতে পারে।