দেশে এবার বেসরকারি সংস্থাগুলির খেয়ালখুশি মতো ক্যাব পরিষেবাকে বড়সড় টক্কর দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। ভারতে এই প্রথম সমবায় ক্ষেত্রের উদ্যোগে জাতীয় স্তরের ক্যাব পরিষেবা শুরু হতে চলেছে। এই পরিষেবার নাম হবে ‘ভারত’ ক্যাব এবং দেশের ৮টি প্রধান সমবায় সমিতির সমর্থন এর পিছনে রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের সহকারিতা মন্ত্রকের তত্ত্বাবধানে এই প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে এবং ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ক্যাব পরিষেবার নেপথ্যে কোন কোন সংস্থা রয়েছে
এই ক্যাব পরিষেবা শুধুমাত্র একটি ব্যবসায়িক উদ্যোগ নয়, বরং সমবায় আন্দোলনের একটি বড় অংশ। এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত প্রধান সংস্থাগুলির মধ্যে রয়েছে জাতীয় সমবায় উন্নয়ন নিগম (NCDC), ইফকো, ক্রিবকো, নাবার্ড, এনডিডিবি, এনসিইএল, জিসিএমএমএফ (আমুল ব্র্যান্ড) এবং অন্যান্য বড় সমবায় সংস্থা। ৬ জুন এই প্রকল্পটিকে বহু-রাজ্য সমবায় ক্যাব কোঅপারেটিভ লিমিটেড হিসেবে রেজিস্টার করা হয়েছে। এই সংস্থাগুলি মিলিতভাবে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার অনুমোদিত মূলধন সংগ্রহ করেছে, যা দিয়ে এই পরিষেবা সারা দেশে চালু করা হবে।
এনসিডিসি-র উপ-মহাব্যবস্থাপক রোহিত গুপ্ত জানিয়েছেন যে, এই পরিষেবার মূল উদ্দেশ্য হল চালকদের বেসরকারি সংস্থাগুলির তুলনায় ভালো রোজগার দেওয়া এবং যাত্রীদের জন্য সুরক্ষিত, সাশ্রয়ী এবং নির্ভরযোগ্য পরিষেবা উপলব্ধ করা। এই প্রকল্পের বিশেষত্ব হল, এতে সরকারের কোনো অংশীদারিত্ব নেই এবং সম্পূর্ণভাবে সমবায় সংস্থাগুলি মিলে এটি পরিচালনা করবে।
চারটি রাজ্যে যুক্ত হয়েছেন প্রথমিক ২০০ জন চালক
আপাতত দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, গুজরাট এবং মহারাষ্ট্র থেকে প্রায় ২০০ জন চালক এই সমবায় ক্যাব পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। প্রতিটি রাজ্য থেকে ৫০ জন করে চালক নির্বাচন করা হয়েছে। এই চালকদের প্রশিক্ষণ এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি চলছে। এছাড়াও, দেশের অন্যান্য অংশ থেকেও চালকদের যুক্ত করার জন্য সদস্যপদ অভিযান চালানো হচ্ছে।
এই পরিষেবা পরিচালনার জন্য একটি বিশেষ মোবাইল অ্যাপ তৈরি করা হচ্ছে, যেমন ওলা বা উবেরের অ্যাপ থাকে। এর জন্য প্রযুক্তি সহযোগী (টেকনোলজি পার্টনার) নির্বাচন করার প্রক্রিয়া চলছে। রোহিত গুপ্ত জানিয়েছেন যে, টেক পার্টনার নির্বাচন খুব শীঘ্রই সম্পন্ন হবে এবং ডিসেম্বরের মধ্যে অ্যাপ তৈরি হয়ে যাবে। এই অ্যাপের মাধ্যমে যাত্রীরা ক্যাব বুক করতে পারবেন এবং চালকরাও একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম পাবেন।
আইআইএম ব্যাঙ্গালোরের সাহায্যে তৈরি হচ্ছে মার্কেটিং পরিকল্পনা
এই নতুন সমবায় ক্যাব পরিষেবার জন্য একটি শক্তিশালী মার্কেটিং প্ল্যান প্রয়োজন, যাতে মানুষের কাছে এর তথ্য সঠিক ভাবে পৌঁছানো যায়। এর জন্য আইআইএম ব্যাঙ্গালোর এবং একজন টেক উপদেষ্টাকে যুক্ত করা হয়েছে। এই দুটি সংস্থা মিলিতভাবে প্রচার এবং ব্র্যান্ডিংয়ের পরিকল্পনা তৈরি করছে। এই পরিষেবা সারা দেশে একই মডেলে চলবে এবং প্রতিটি রাজ্যে এর পরিষেবা পাওয়া যাবে।
কেমন হবে ভাড়া এবং মডেল
‘ভারত’ ক্যাব পরিষেবা সমবায় মূল্য নির্ধারণ মডেলে চলবে, অর্থাৎ এর ভাড়া সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যে রাখা হবে। যেখানে অন্যান্য কোম্পানিগুলি প্রায়শই চাহিদার ভিত্তিতে ভাড়া বাড়িয়ে দেয়, সেখানে এই পরিষেবাতে এমনটা হবে না। সমবায় সংস্থাগুলি এই বিষয়ে নজর রাখবে যাতে যাত্রীরা সবসময় একটি নির্দিষ্ট এবং সস্তা ভাড়া পান এবং চালকদেরও পর্যাপ্ত লাভ হয়।
চালক থাকবেন পরিষেবার মালিক
এই প্রকল্পের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এখানে চালকরা শুধুমাত্র কর্মচারী থাকবেন না, তাঁরা পরিষেবার সদস্য এবং মালিকও হবেন। তাঁরা লাভের অংশীদার হবেন এবং সমস্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাঁদের অংশগ্রহণ থাকবে। এতে তাঁদের আর্থিক অবস্থা মজবুত হবে এবং তাঁরা আরও বেশি স্বনির্ভর হয়ে উঠবেন।
সরকারি অংশীদারিত্ব ছাড়াই হবে পরিচালনা
এই পরিষেবা সম্পূর্ণভাবে অংশীদার সমবায় সমিতিগুলি পরিচালনা করবে। এতে সরকারের কোনো অংশীদারিত্ব থাকবে না, কোনো বেসরকারি বিনিয়োগকারীও থাকবে না। সম্পূর্ণ মূলধন সমবায় সংস্থাগুলি এবং তাদের সদস্যরা নিজেরা দেবেন। এর ফলে এই পরিকল্পনা সম্পূর্ণ স্বচ্ছ এবং জনগণের স্বার্থে তৈরি থাকবে।
দ্রুত বেড়ে চলা ক্যাব বাজারে নতুন চ্যালেঞ্জ
ভারতে ‘রাইড-হেলিং’ অর্থাৎ অনলাইন ক্যাব পরিষেবার বাজার দ্রুত বাড়ছে, যেখানে এখনও পর্যন্ত ওলা এবং উবেরের মতো কোম্পানিগুলির আধিপত্য রয়েছে। কিন্তু ‘ভারত’ ক্যাব পরিষেবা আসার ফলে এই বাজারে একটি নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে। এই পরিষেবা শুধুমাত্র সাধারণ মানুষকে ভালো বিকল্প দেবে তাই নয়, চালকদেরও বেসরকারি সংস্থাগুলির তুলনায় বেশি লাভ দেবে।