গুজরাটে সেতু ভেঙে ভয়াবহ দুর্ঘটনা, ১৫ জনের মৃত্যু, নিখোঁজ আরও ৩

গুজরাটে সেতু ভেঙে ভয়াবহ দুর্ঘটনা, ১৫ জনের মৃত্যু, নিখোঁজ আরও ৩

বুধবার, ৯ই জুলাই, গুজরাতের ভাদোদরা এবং আনন্দ জেলাকে সংযোগকারী গম্ভীরা সেতু হঠাৎ মাঝখান থেকে ভেঙে পড়ায় একটি অত্যন্ত মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। এই দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৫ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে, যেখানে এখনো ৩ জন নিখোঁজ রয়েছেন।

Gujarat Bridge Collapsed: বুধবার গুজরাতের ভাদোদরা জেলার পাদরা অঞ্চলে ভয়াবহ সেতু দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, যেখানে তিনজন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে যখন ভাদোদরা এবং আনন্দকে সংযোগকারী গম্ভীরা নদীর উপর নির্মিত সেতুটি হঠাৎ মাঝখান থেকে ভেঙে যায়। দুর্ঘটনার সময় সেতুর উপর বেশ কয়েকটি যানবাহন চলাচল করছিল, যার মধ্যে কিছু সেতুর সাথে নদীতে পড়ে যায়।

ঘটনার পর থেকেই এনডিআরএফ (NDRF) এবং এসডিআরএফ (SDRF)-এর দল উদ্ধার ও ত্রাণকাজে নিয়োজিত রয়েছে। ভাদোদরার কালেক্টর অনিল ধামেলিয়া স্বয়ং ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উদ্ধার অভিযান তদারকি করেন এবং সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত করেন।

এখনও পর্যন্ত ১৫টি মৃতদেহ উদ্ধার, উদ্ধার অভিযান চলছে  

কালেক্টর অনিল ধামেলিয়া জানিয়েছেন যে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত নদী থেকে আরও তিনটি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, যার ফলে মৃতের সংখ্যা ১৫-তে পৌঁছেছে। তিনি জানান, এনডিআরএফ এবং এসডিআরএফ-এর দল প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে। দুর্ঘটনার সময় দুটি যানবাহনও সেতু থেকে নিচে পড়ে গিয়েছিল, যেগুলি এখন কাদা এবং ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকে আছে। ওই যানবাহনগুলিতে থাকা ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ ও তাদের খোঁজার চেষ্টা চলছে।

সেতুর উপর ঝুলে থাকা একটি ট্যাঙ্কার সমস্যা তৈরি করছে

দুর্ঘটনার পর থেকে একটি খালি ট্যাঙ্কার সেতুর অর্ধেক নিচে ঝুলে রয়েছে, যা উদ্ধারকারী দলের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কালেক্টর ধামেলিয়া জানিয়েছেন, ট্যাঙ্কারটিকে সরানো ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, কারণ এর ঠিক নিচে উদ্ধার কাজ চলছে। তাই সেটিকে স্থিতিশীল করার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে, যাতে নিচে কাজ করা দলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।

তিনি আরও জানান, বৃষ্টির কারণে নদীর জলস্তর বাড়ছে, যার ফলে ত্রাণকাজে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে দলকে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদেরও সাহায্য নেওয়া হচ্ছে

প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশেপাশের গ্রাম এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিচে পড়া যানবাহন এবং সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্তদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার সময় সেতুতে ৪-৫টি যানবাহন ছিল, যার মধ্যে কিছু গাড়ি, বাইক এবং এই ট্যাঙ্কারটি ছিল। এসডিআরএফ-এর একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সোনার এবং ড্রোন ক্যামেরার সাহায্যে পানির নিচে অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে, যার মাধ্যমে কাদার মধ্যে আটকে থাকা মৃতদেহ এবং যানবাহনের অবস্থান জানা যেতে পারে।

গুজরাট সরকারের পক্ষ থেকে দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের জন্য আর্থিক সহায়তা এবং ক্ষতিপূরণের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দুর্ঘটনার উপর শোক প্রকাশ করে বলেছেন যে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং সেতু নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত রিপোর্টও তলব করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে ৫ লক্ষ টাকা সহায়তা দেওয়া হবে এবং আহতদের চিকিৎসা সরকারি খরচে করা হবে।

প্রশাসন এই সেতু দুর্ঘটনার প্রযুক্তিগত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। জানা গেছে, গম্ভীরা নদীর উপর নির্মিত এই সেতু বহু বছর পুরনো ছিল এবং সম্প্রতি এর মেরামত করা হয়েছিল। এখন প্রশ্ন উঠছে নির্মাণকাজে কোনো গাফিলতি ছিল কিনা, নাকি এটি প্রাকৃতিক কারণে ভেঙে পড়েছে। সেতুর গুণমান, মেরামতের প্রক্রিয়া এবং তদারকি সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Leave a comment