সিন্ধুর পর এবার গঙ্গা নিয়েই কড়া সিদ্ধান্ত
পাকিস্তানের সঙ্গে বহু পুরনো সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত করে একপ্রকার বার্তা দিয়েছিল ভারত। এবার সেই জলকূটনীতির ধারাবাহিকতায় নজর ঘুরল পূর্বের প্রতিবেশী বাংলাদেশের দিকে। ফারাক্কা ব্যারাজ হয়ে প্রবাহিত গঙ্গার জল কীভাবে ভাগ হবে, কতটা জল যাবে ওপারে, কতটা থাকবে এপারে—সেই হিসেবনিকেশই এবার নতুন করে টেবিলে আনতে চাইছে নয়াদিল্লি। ১৯৯৬ সালে স্বাক্ষরিত গঙ্গা চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৬-এ। তার আগেই প্রস্তুতি শুরু ভারতের।
দিল্লি-ঢাকা চুক্তির ইতিহাসে নাম শেখ হাসিনার
এই চুক্তির শিকড় খোঁজ নিলে পৌঁছাতে হয় ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বরের শেখ হাসিনা সরকারের প্রথম ইনিংসে। সেবারই প্রথমবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি, আর ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছিলেন এই গঙ্গা চুক্তির মাধ্যমে। তবে চুক্তির শুরু থেকেই এক বিষণ্ণ প্রশ্ন ছিল—এই চুক্তিতে পশ্চিমবঙ্গের মতামত কীভাবে নেওয়া হয়েছিল?
ফারাক্কার স্রোতে বারবার ভেসেছে রাজ্য-সীমান্ত রাজনীতি
গঙ্গা জল বণ্টনের মূল উদ্দেশ্য ছিল—শুষ্ক মরসুমে জল সরবরাহের ভারসাম্য রক্ষা। চুক্তি অনুসারে মার্চ থেকে মে পর্যন্ত ১০ দিন অন্তর ৩৫,০০০ কিউসেক করে জল ভাগাভাগি করবে ভারত ও বাংলাদেশ। কিন্তু বাস্তবে এই ভাগাভাগি ঘিরে কখনও অভিযোগ, কখনও চাপানউতোর অব্যাহত থেকেছে। বিশেষত ফারাক্কা ব্যারাজকে কেন্দ্র করে দক্ষিণবঙ্গের বহু অঞ্চলে জলসংকট বারবার প্রকট হয়েছে।
ভারতের বাড়তি জল-চাহিদার জোরালো যুক্তি
কেন্দ্রীয় সরকার সূত্রে খবর, এবার অতিরিক্ত ৩০ থেকে ৩৫ হাজার কিউসেক জল দাবি করতে চাইছে ভারত। কারণ, কৃষি সেচ, নদীপথে নাব্যতা বজায় রাখা এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বর্তমান জলবণ্টন যথেষ্ট নয়। এই অবস্থানকে সমর্থন করছে রাজ্যও। কারণ, বরাদ্দকৃত জলের পরিমাণে রোজকার প্রয়োজনীয়তা মিটছে না বলেই দাবি করেছেন সেচ ও জলসম্পদ দফতরের একাধিক আধিকারিক।
বারবার উপেক্ষিত রাজ্যের অবস্থান, তবু প্রতিবাদ অব্যাহত
১৯৯৬ সালের চুক্তির আগে তৎকালীন কেন্দ্র রাজ্যের সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় যায়নি—এই অভিযোগ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গ সরকার বারবার তুলেছে। শুধু গঙ্গাই নয়, তিস্তা চুক্তির ক্ষেত্রেও একইরকম বিরোধিতা রয়েছে রাজ্যের। মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্যে বলেছেন, রাজ্যের জল-স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে কোনও আন্তর্জাতিক চুক্তি মেনে নেওয়া হবে না।
ফারাক্কা এখন কূটনীতির নতুন জলসীমা
পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর সিন্ধু চুক্তি স্থগিত করে কড়া বার্তা দেয় ভারত। এবার বাংলাদেশের সঙ্গেও জলের সমীকরণ নতুনভাবে সাজাতে চাইছে কেন্দ্র। ফারাক্কা ব্যারাজ তাই এখন শুধু জল নিয়ন্ত্রণের কেন্দ্র নয়, হয়ে উঠছে ভারতীয় কূটনীতির এক নতুন পরীক্ষাক্ষেত্র।