আরবিআই এমপিসি সদস্য নাগেশ কুমারের দাবি, ভারত বর্তমান পরিস্থিতিতে ৬.৫% এর বেশি জিডিপি গ্রোথ অর্জন করতে পারে। তিনি বিনিয়োগ, মূল্যবৃদ্ধি এবং বিশ্বব্যাপী মন্দা নিয়েও মন্তব্য করেছেন।
India Growth Forcast: ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মুদ্রা নীতি কমিটির (Monetary Policy Committee - MPC) সদস্য নাগেশ কুমার ভরসা রেখেছেন যে, ভারত অর্থনীতি বিদ্যমান বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ৬.৫% এর বেশি হারে বৃদ্ধি পেতে পারে। তিনি ভারতকে বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি "উজ্জ্বল স্থান" হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
ভারতের দৃঢ়তা অভ্যন্তরীণ চাহিদা
নাগেশ কুমার বলেছেন যে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মূলত অভ্যন্তরীণ চাহিদা (consumption) এবং বিনিয়োগের (investment) উপর নির্ভরশীল। এই কারণে বিশ্ব বাণিজ্য বা রপ্তানিতে মন্দা দেখা দিলেও ভারতের উপর তার প্রভাব সীমিত থাকে। তিনি জানান, যেখানে সারা বিশ্বের অনেক অর্থনীতি ঋণ সংকট ও মন্দার সম্মুখীন, সেখানে ভারত তার অভ্যন্তরীণ চাহিদার কারণে স্থিতিশীল রয়েছে।
বৃদ্ধির হার ৭% এর বেশি হওয়ার সম্ভাবনা
নাগেশ কুমার আশা প্রকাশ করেছেন যে ভারত শুধু ৬.৫% এর বৃদ্ধির হার বজায় রাখবে তাই নয়, আগামী বছরগুলোতে এই হার ৭% থেকে ৭.৫% পর্যন্তও পৌঁছতে পারে। এর পিছনে রয়েছে শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ পরিকাঠামো, সরকারের নীতি এবং বেসরকারি বিনিয়োগের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা।
মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে, তবে সুদের হারে তাড়াহুড়ো নয়
খুচরা মুদ্রাস্ফীতির হার (CPI) বর্তমানে আরবিআই-এর লক্ষ্য ৪% এর নিচে অর্থাৎ ২.১% এ রয়েছে। এটি মুদ্রানীতির সাফল্যকেই তুলে ধরে। যদিও, সুদের হার কমানোর বিষয়ে নাগেশ কুমার স্পষ্ট করে বলেছেন যে, শুধুমাত্র এক মাসের মুদ্রাস্ফীতির হারের উপর ভিত্তি করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। তিনি বলেন, রেট কাটের সিদ্ধান্ত ব্যাপক ম্যাক্রোইকোনমিক সূচকগুলির উপর ভিত্তি করে হওয়া উচিত।
পরবর্তী মুদ্রা পর্যালোচনা বৈঠক আগস্ট ২০২৫-এ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা, এবং বাজার আশা করছে যে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকলে সুদের হার কমানো হতে পারে।
ভারত-মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি থেকে নতুন সম্ভাবনা
ভারত ও আমেরিকার মধ্যে প্রস্তাবিত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি (Bilateral Trade Agreement - BTA) ভারতের জন্য একটি বড় সুযোগ হতে পারে। কুমার বলেন, এর ফলে ভারত শ্রম প্রধান ক্ষেত্র যেমন টেক্সটাইল, পাদুকা, আসবাবপত্র এবং অন্যান্য পণ্যের জন্য আমেরিকান বাজারে আরও বেশি সুবিধা পাবে। ভারতের সস্তা শ্রমশক্তির সহজলভ্যতা রয়েছে, যা এই ক্ষেত্রগুলোর প্রতিযোগিতামূলক ক্ষমতা আরও বাড়িয়ে দেবে।
তবে, তিনি এও বলেন যে কৃষি ও দুগ্ধ শিল্প নিয়ে ভারতের কিছু উদ্বেগ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তিনি পরামর্শ দিয়েছেন যে, সীমিত পরিমাণে বাজার সুবিধা দেওয়ার জন্য কোটা সিস্টেমের মতো বিকল্পগুলির উপর বিবেচনা করা যেতে পারে।
এফডিআই নিয়ে আশাবাদ, নেট এবং গ্রসের পার্থক্য ব্যাখ্যা
নাগেশ কুমার জানান যে ২০২৪-২৫ সালে গ্রস এফডিআই বেড়ে ৮১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যেখানে গত বছর এটি ছিল ৭১ বিলিয়ন ডলার। নেট এফডিআই কম দেখানোর কারণ হল বিদেশে করা বিনিয়োগ থেকে আসা অর্থ বাদ দিলে নেট সংখ্যা পাওয়া যায়। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে আসল চিত্রটি গ্রস ইনফ্লো থেকে পাওয়া যায়, যা বর্তমানে ভারতের দিকে শক্তিশালী।
তিনি ইউএনসিটিএডি-র রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন যে ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী এফডিআই প্রবাহে ১১% হ্রাস হয়েছে এবং এটি ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। তা সত্ত্বেও, ভারত-এর মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বজায় রয়েছে।
ভারত বিশ্ব বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণের কেন্দ্র
নাগেশ কুমারের মতে, ভারতের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, শক্তিশালী নীতি কাঠামো এবং উন্নয়নের অনুকূল পরিবেশ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করছে। এফডিআই-এর এই আগ্রহ আগামী বছরগুলোতে আরও বাড়তে পারে, বিশেষ করে ম্যানুফ্যাকচারিং, ইনফ্রাস্ট্রাকচার এবং টেকনোলজি-র মতো ক্ষেত্রগুলোতে।