ভারত ও আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্যিক চুক্তি (BTA) নিয়ে আলোচনা আবার জোরদার হয়েছে। নয়াদিল্লিতে মার্কিন প্রধান মধ্যস্থতাকারী ব্রেন্ডন লিঞ্চ এবং ভারতীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠকে উভয় পক্ষই ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। নভেম্বরের মধ্যে চুক্তির প্রথম পর্যায় সম্পন্ন করার বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। কৃষি ও দুগ্ধজাত বাজারগুলির মতো সংবেদনশীল বিষয়গুলিতে আলোচনা এখনও চলছে।
বাণিজ্যিক চুক্তি: নয়াদিল্লিতে মঙ্গলবার ভারত ও আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্যিক চুক্তি নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে মার্কিন প্রধান মধ্যস্থতাকারী ব্রেন্ডন লিঞ্চ এবং ভারতীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা অংশ নেন। এই বৈঠকটি ষষ্ঠ আনুষ্ঠানিক দফার আলোচনার প্রস্তুতির অংশ ছিল। আলোচনায় উভয় দেশ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য অংশীদারিত্বের গুরুত্বের উপর জোর দিয়ে নভেম্বরের মধ্যে চুক্তির প্রথম পর্যায় সম্পন্ন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। কৃষি ও দুগ্ধজাত বাজারগুলির মতো সংবেদনশীল বিষয়গুলিতে এখনও ঐকমত্য হওয়া বাকি রয়েছে, তবে উভয় পক্ষই ইতিবাচক পরিবেশে আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উপর জোর দিয়েছে।
আলোচনার নতুন দফা শুরু
দিল্লিতে এই সাক্ষাতে আমেরিকার পক্ষ থেকে প্রধান মধ্যস্থতাকারী ব্রেন্ডন লিঞ্চ এবং তাঁর দল উপস্থিত ছিল। ভারতের পক্ষ থেকে শিল্প মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব রাজেশ আগরওয়াল এবং তাঁর দল অংশ নেয়। বৈঠকে বাণিজ্যিক অংশীদারিত্ব এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক চুক্তি সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করা হয়। উভয় দেশ স্পষ্ট করেছে যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক তাদের অগ্রাধিকার এবং শীঘ্রই একটি ठोस সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য প্রচেষ্টা জোরদার করা হবে।
আলোচনা পূর্বেও স্থগিত ছিল
কিছুদিন আগে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে চলমান আলোচনায় বাধা সৃষ্টি হয়েছিল। এর একটি বড় কারণ ছিল আমেরিকার এই দাবি যে ভারত তার কৃষি ও দুগ্ধজাত বাজারগুলিতে মার্কিন কোম্পানিগুলির জন্য আরও বেশি প্রবেশাধিকার দেবে। ভারত এই দাবি মানতে অস্বীকার করায় আলোচনা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এখন উভয় পক্ষই পুনরায় আলোচনা শুরু করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে নভেম্বরের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক চুক্তির প্রথম পর্যায় সম্পন্ন করার চেষ্টা করা হবে।
মোদী ও ট্রাম্পের ইতিবাচক ভূমিকা
আলোচনার পরিবেশ উন্নত করতে দুই দেশের শীর্ষ নেতাদের সাম্প্রতিক বিবৃতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি বলেছেন যে ভারত ও আমেরিকা তাদের মধ্যকার বাণিজ্যিক বাধা দূর করার জন্য নিরন্তর আলোচনা করছে। তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে তাঁর খুব ভালো বন্ধু বলে অভিহিত করেছেন। অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী মোদীও বলেছেন যে ভারত ও আমেরিকা ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং স্বাভাবিক অংশীদার। এই বিবৃতিগুলি উভয় পক্ষের মধ্যে আস্থার পরিবেশকে শক্তিশালী করেছে।
ষষ্ঠ দফার প্রস্তুতি
যদিও এই বৈঠকটি ষষ্ঠ দফার আনুষ্ঠানিক আলোচনা ছিল না, তবে এতে স্পষ্ট করা হয়েছে যে পরবর্তী আলোচনায় কোন বিষয়গুলির উপর জোর দেওয়া হবে। কৃষি ও দুগ্ধজাত পণ্যের মতো সংবেদনশীল বিষয়গুলি এখনও আলোচনার অধীনে রয়েছে। ভারতীয় কর্মকর্তারা স্পষ্ট করেছেন যে ষষ্ঠ দফার আলোচনার আগে কৌশল নির্ধারণ করাই এই বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল, যাতে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হলে তা আরও ফলপ্রসূ হয়।
নভেম্বর পর্যন্ত প্রথম পর্যায়ের আশা
মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই ঐকমত্য হয় যে উভয় দেশ নভেম্বরের মধ্যে চুক্তির প্রথম পর্যায় সম্পন্ন করার চেষ্টা করবে। এর জন্য আলোচনার আলোচ্যসূচি তৈরি করা হচ্ছে। মার্কিন পক্ষ ভারতের বাজারগুলিতে আরও বেশি প্রবেশাধিকারের তাদের পুরানো দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছে, অন্যদিকে ভারতও স্পষ্ট করেছে যে সংবেদনশীল ক্ষেত্রগুলিতে আলোচনায় সতর্কতা অবলম্বন করা হবে। এতদসত্ত্বেও, উভয় দেশের মনোভাব এবার আগের চেয়ে বেশি ইতিবাচক দেখা গেছে।
ভারত ও আমেরিকার মধ্যে চলমান এই আলোচনা উভয় দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। যেখানে আমেরিকা ভারতের মতো বড় বাজারে আরও বেশি সুযোগ চায়, সেখানে ভারত চায় যে তার রপ্তানি সম্ভাবনা শক্তিশালী হোক এবং মার্কিন বাজারে তার আরও সহজে প্রবেশাধিকার থাকুক। এই কারণেই আলোচনায় উভয় পক্ষ ক্রমাগত ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করছে।