অতিরিক্ত প্রোটিনে বাড়ছে কিডনির ঝুঁকি তরুণদের মধ্যে ছড়াচ্ছে নীরব ঘাতক সতর্ক করলেন চিকিৎসকেরা

অতিরিক্ত প্রোটিনে বাড়ছে কিডনির ঝুঁকি তরুণদের মধ্যে ছড়াচ্ছে নীরব ঘাতক সতর্ক করলেন চিকিৎসকেরা

ফিটনেসের নামে বাড়ছে প্রোটিন-আসক্তি, তরুণদের কিডনি চাপে!

আজকের তরুণ প্রজন্ম ফিটনেসের পেছনে ছুটছে এক দৌড়ে। ওয়ার্কআউট মানেই এখন প্রোটিন শেক, সাপ্লিমেন্ট আর হেভি ডায়েট। কিন্তু সেই 'হেলদি' লাইফস্টাইলই অজান্তে ডেকে আনছে কিডনির ভয়ঙ্কর সমস্যা।

চিকিৎসকের হুঁশিয়ারি: “প্রয়োজনের চেয়েও বেশি প্রোটিন, কিডনি ধ্বংসের দিকেই এগোচ্ছে”

ডঃ সন্তোষের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ১-৩ বছর বয়সীদের জন্য দৈনিক ০.৮৫-১.০৫ গ্রাম/কেজি প্রোটিন যথেষ্ট, অথচ অনেক ক্ষেত্রেই শিশুরাও পাচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ। এই অতি-প্রোটিন গ্রহণ শরীরের পক্ষে বিষাক্ত হয়ে দাঁড়াতে পারে। কিডনির ফিল্টারিং ফাংশন ক্রমাগত চাপে পড়ছে, আর তার ফলেই বাড়ছে ক্রিয়েটিনিন লেভেল, যা পরবর্তীতে কিডনি বিকল হয়ে যাওয়ার দিকে ঠেলে দিতে পারে।

“১.২ mg/dL হলেও চিন্তার কারণ”— বলছেন সিনিয়র নেফ্রোলজিস্ট

মুম্বাইয়ের জেন মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালের সিনিয়র নেফ্রোলজিস্ট ডঃ বিশ্বনাথ বিল্লার মতে, অনেক সময় ১.২ mg/dL ক্রিয়েটিন লেভেলও উচ্চ বলে ধরা হয়, বিশেষ করে পূর্ব-বিদ্যমান কিডনি সমস্যা থাকলে। তাঁর কথায়, ডায়েটই হোক বা প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট— দুই ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত প্রোটিন শরীরে জমা হয়ে কিডনিকে চাপে ফেলে।

জল না খেলেই সর্বনাশ, প্রোটিনের সঙ্গে জলপান অত্যন্ত জরুরি

থানে-র কিমস হাসপাতালের ডঃ মহেশ প্রসাদ জানাচ্ছেন, কেবল প্রোটিন খেলেই হবে না— পর্যাপ্ত জলপান না করলে কিডনির ওপর চাপ আরও বাড়ে। জলই হল প্রাকৃতিক ফিল্টার। এটি কম হলে প্রোটিনের অবশিষ্টাংশ কিডনির ভিতর জমে থেকে স্ট্রেস তৈরি করে, ফলস্বরূপ বাড়ে ক্রিয়েটিনিন। তরুণদের উচিত প্রতিদিন অন্তত ২.৫-৩ লিটার জল পান করা।

শুধু প্রোটিন নয়, চাই নিয়মিত কিডনি চেকআপও

ডঃ প্রসাদ আরও বলেন, “কিডনি রোগের সমস্যা অনেক সময় উপসর্গহীন থেকে যায়। তাই নিয়মিত ফলোআপ, ইউরিন রিপোর্ট ও সিরাম ক্রিয়েটিনিন টেস্ট করা উচিত।” শুধু শরীরচর্চা করলেই হবে না, শরীরকে বোঝার অভ্যাসও গড়ে তুলতে হবে। অতিরিক্ত প্রোটিন খেলে যেমন উপকার হতে পারে না, তেমনি হিতে বিপরীত হওয়ার ঝুঁকিও প্রবল।

চিকিৎসকদের ৪টি সোনার পরামর্শ, মানলে দূরে থাকবে কিডনি সমস্যা

প্রতিদিন শরীরের ওজন অনুযায়ী সর্বোচ্চ ১.৮ গ্রাম/কেজি প্রোটিন গ্রহণের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকুন।

১৪ বছর বয়সের আগে কোনও অবস্থাতেই প্রোটিন পাউডার ব্যবহার করবেন না।

সাপ্লিমেন্ট কেনার আগে অবশ্যই লেবেল পড়ে দেখে নিন— ক্যাফেইন, কৃত্রিম সুইটেনার, অতিরিক্ত সুগারযুক্ত হলে তা এড়িয়ে চলুন।

জল পান করুন পর্যাপ্ত এবং অন্তত বছরে একবার কিডনি পরীক্ষা করিয়ে নিন।

কিডনির ক্ষতি হয় চুপিসারে, তাই সময় থাকতেই হোন সতর্ক!

সবচেয়ে চিন্তার বিষয়, কিডনির সমস্যার অনেক সময়ই কোনও লক্ষণ প্রকাশ পায় না। অজান্তেই ধীরে ধীরে ক্রিয়েটিনিন লেভেল বেড়ে গিয়ে কিডনি ড্যামেজ করতে পারে। চিকিৎসকদের মতে, ডায়েট সাপ্লিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রির আরও বেশি স্বচ্ছতা, মান নিয়ন্ত্রণ এবং থার্ড-পার্টি টেস্টিং বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন।

এই প্রতিবেদন চিকিৎসকদের মতামত এবং ক্লিনিক্যাল পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে প্রস্তুত। 

কোনও ওষুধ বা সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের আগে অবশ্যই রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নিজে সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছু ব্যবহার করলে তার জন্য News18 বা লেখক কোনওভাবে দায়ী নয়।

Leave a comment