হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়তে থাকে একের পর এক ছাত্রী, আতঙ্কে শিক্ষক-অভিভাবকরা | নদিয়ার একটি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার চলাকালীন হঠাৎ করেই একের পর এক ছাত্রী মাথা ঘোরা, বমি ও শ্বাসকষ্টের অভিযোগ করতে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রায় ১৫ জন ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে। ঘটনাকে ঘিরে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়ায় গোটা এলাকায়। শিক্ষক ও কর্মীরা ছাত্রীদের দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।
অভিযোগ, দীর্ঘক্ষণ গরমে ক্লাসে বসেই পড়ছিল ছাত্রীরা, ছিল না সঠিক বায়ু চলাচল
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সময় ক্লাসরুমে ভীষণ গরম ছিল এবং বাতানুকূল বা পর্যাপ্ত পাখার ব্যবস্থা ছিল না। প্রখর দুপুরে প্রচণ্ড গরমে ছাত্রীদের শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে। স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রাথমিক ধারণা, গরম ও অতিরিক্ত ঘামের কারণে হাইড্রেশনজনিত সমস্যাই এই অসুস্থতার মূল কারণ। তবে, খাবার বা জলের গুণমান নিয়েও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
স্কুল চত্বরে ভিড় অভিভাবকদের, প্রশাসনের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয় তৎপরতার
ছাত্রীদের অসুস্থতার খবর ছড়িয়ে পড়তেই স্কুলে ভিড় জমাতে থাকেন অভিভাবকরা। কেউ কেউ আতঙ্কে কান্নায় ভেঙে পড়েন। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দ্রুত পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রশাসনের সাহায্য চায়। স্থানীয় ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকদের একটি মেডিক্যাল টিম পাঠানো হয় স্কুলে। শিক্ষারত অবস্থায় এমন ঘটনা ঘিরে তৈরি হয় উদ্বেগের পরিবেশ।
হাসপাতালে ভর্তি ৭ ছাত্রী, বাকিদের ছাড়া হয়েছে পর্যবেক্ষণের পর
জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে জানানো হয়েছে, অসুস্থ ১৫ জনের মধ্যে ৭ জনকে হাসপাতালে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। বাকি ছাত্রীরা প্রাথমিক চিকিৎসার পর স্থিতিশীল হওয়ায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ছাত্রীরা ধীরে ধীরে সুস্থতার দিকে এগোচ্ছে। হাসপাতালে ভর্তি ছাত্রীরা এখন চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রয়েছে এবং তাদের অবস্থা স্থিতিশীল বলেই জানা গিয়েছে।
জেলায় এই প্রথম নয়, আগেও ঘটেছে এমন ‘মাস হিস্টিরিয়া’র ঘটনা
এই ধরনের ঘটনা নতুন নয় নদিয়া জেলায়। আগেও বেশ কয়েকবার বিদ্যালয়ে একসঙ্গে একাধিক ছাত্রছাত্রীর অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি 'মাস হিস্টিরিয়া' বা ‘গোষ্ঠীগত আতঙ্ক’ সংক্রান্ত ঘটনা হতে পারে। একের পর এক অসুস্থ হতে দেখলে অন্যদের মধ্যেও ভয় ঢুকে পড়ে এবং মানসিক প্রভাবে তারাও অসুস্থ বোধ করতে শুরু করে।
বিদ্যালয়ের পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন, তদন্তে নেমেছে শিক্ষা দফতর
এই ঘটনার পর শিক্ষাদফতরের পক্ষ থেকে স্কুলের পরিকাঠামো, শ্রেণিকক্ষের বায়ুচলাচল এবং পানীয় জলের ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আগামী দিনে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে, তার জন্য সব স্কুলেই পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যবিধি ও সতর্কতা মেনে চলার নির্দেশ জারি করা হতে পারে বলে সূত্রের খবর।
অভিভাবকদের আশ্বস্ত করল প্রশাসন, নিয়মিত নজরদারির প্রতিশ্রুতি
জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে অভিভাবকদের আশ্বস্ত করা হয়েছে যে, ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যের দিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আগামী দিনে স্বাস্থ্যপরীক্ষা, পুষ্টিকর মিড ডে মিল ও বায়ু চলাচল ব্যবস্থার দিকে নজরদারি আরও বাড়ানো হবে। বিদ্যালয়গুলিতে নিয়মিত হেলথ ক্যাম্প চালু করার কথাও ভাবছে জেলা শিক্ষা প্রশাসন।