নালন্দা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সিভিল বিভাগের এক ছাত্রী হোস্টেল থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে যে সময়মতো চিকিৎসার জন্য গাড়ি সরবরাহ করা হয়নি, যার ফলে ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে।
নালন্দা: বিহারের নালন্দা জেলার চণ্ডীতে অবস্থিত নালন্দা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে বুধবার রাতে একটি মর্মান্তিক ঘটনায় পুরো ক্যাম্পাস স্তব্ধ হয়ে গেছে। দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সোনম কুমারী ছাত্রাবাসের তৃতীয় তলা থেকে ঝাঁপ দেয়, যার ফলে সে গুরুতর আহত হয়। ছাত্রীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা না থাকায় তার মৃত্যু হয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অধ্যক্ষ গাড়ি সরবরাহ করেননি এবং বাইকে করে নিয়ে যাওয়ার অনুমতিও দেননি, যার ফলে এই দুর্ঘটনা আরও বেদনাদায়ক হয়ে ওঠে।
কলেজে ছাত্রীর মৃত্যু
ঘটনার সময় কলেজ ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়। ছাত্রী হোস্টেলের তৃতীয় তলা থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে এবং গুরুতর আহত হয়। ছাত্র-ছাত্রীরা জানিয়েছে যে সে প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে ছটফট করছিল, কিন্তু তাৎক্ষণিক চিকিৎসার সাহায্য মেলেনি। এই উদাসীনতা ক্যাম্পাসে উপস্থিত সকলের জন্য একটি হতবাক পরিস্থিতি তৈরি করে।
ছাত্রীর অবস্থা গুরুতর হওয়া সত্ত্বেও, কলেজ প্রশাসন তাকে অবিলম্বে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এই অবহেলার কারণে ছাত্রীর জীবন চলে যায়। আশেপাশের ছাত্ররা অধ্যক্ষের কাছে বারবার গাড়ির দাবি জানায়, কিন্তু তাদের আবেদন ব্যর্থ হয়। এই পুরো ঘটনা ছাত্র এবং অভিভাবকদের মধ্যে গভীর ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছে যে অধ্যক্ষ গোপাল নন্দন গুরুতর পরিস্থিতিতেও কোনো সংবেদনশীলতা দেখাননি। ছাত্ররা জানায় যে যখন তারা আহত ছাত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি চেয়েছিল, তখন অধ্যক্ষ গাড়ি সরবরাহ করেননি এবং বাইকে করে নিয়ে যাওয়ার অনুমতিও দেননি। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে তুমুল বিক্ষোভ করে।
অনেক ছাত্র-ছাত্রী এও বলছে যে, যদি দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হতো, তবে ছাত্রীর জীবন বাঁচানো যেত। ক্ষুব্ধ ছাত্ররা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে এবং ভাঙচুর চালায়। এই ঘটনা প্রশাসনের উদাসীনতা এবং জরুরি ব্যবস্থাপনার ত্রুটিগুলোকে তুলে ধরে।
র্যাগিং নিয়ে প্রশ্ন
ঘটনার পেছনে সম্ভাব্য কারণগুলো নিয়ে আলোচনা চলছে। ছাত্রীর সহপাঠীরা জানিয়েছে যে সোনম দীর্ঘদিন ধরে র্যাগিং এবং মানসিক চাপে ভুগছিল। অনেক ছাত্র দাবি করেছে যে মানসিক চাপের কারণেই সে আত্মঘাতী পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে, পুলিশ এখনও এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেনি।
পুলিশ কর্মকর্তা এবং কলেজ প্রশাসন এই ঘটনার পেছনের প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনে ব্যস্ত রয়েছে। প্রাথমিক তদন্ত অনুযায়ী, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এবং শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদের পরেই স্পষ্ট হবে আত্মহত্যার কারণ কী ছিল। এরই মধ্যে ছাত্র ও অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ ও ক্ষোভ বাড়ছে।
পুলিশ ও প্রশাসনের পদক্ষেপ
ঘটনার খবর পেয়েই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পদক্ষেপ নেয়। চণ্ডী থানা এবং হিলসা এসডিএম ছাত্রদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। পুলিশ জানিয়েছে যে কলেজ ক্যাম্পাসে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি বিবেচনা করে সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাশাপাশি, হোস্টেলে থাকা অন্যান্য ছাত্রদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে যাতে ঘটনার প্রতিটি দিক উন্মোচন করা যায়। প্রশাসন জানিয়েছে যে কলেজে এমন ঘটনা মোকাবেলায় জরুরি ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন। ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে উত্থাপিত প্রশ্নগুলোর সমাধান খুঁজে বের করা এখন অগ্রাধিকার হয়ে দাঁড়িয়েছে।