নবজাতকের জন্য মায়ের দুধ অমূল্য। এটি শুধু শিশুকে পুষ্টি দেয় না, বরং সংক্রমণ থেকেও রক্ষা করে। জন্মের পর প্রথম ছয় মাস পর্যন্ত শিশুর সম্পূর্ণ বৃদ্ধির জন্য শুধুমাত্র মায়ের দুধই যথেষ্ট। কিন্তু অনেক সময় মায়ের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে দুধ তৈরি হয় না, যা স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগের কারণ। তবে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। কিছু প্রাকৃতিক, নিরাপদ এবং বৈজ্ঞানিক উপায় অবলম্বন করে স্তন দুধের পরিমাণ বাড়ানো যেতে পারে।
স্তনপান করানোর সঠিক পদ্ধতি ও সময়ের দিকে খেয়াল রাখুন
ব্রেস্ট মিল্কের উৎপাদন বাড়ানোর সবচেয়ে প্রভাবশালী উপায় হল—বারবার স্তনপান করানো। বিশেষজ্ঞদের মতে, নবজাতক শিশুকে প্রতি ২ থেকে ৩ ঘণ্টা অন্তর দুধ পান করানো উচিত। শিশু যতবার স্তনপান করবে, শরীর তত বেশি দুধ তৈরি করবে। স্তনপান করানোর সময় সঠিক অবস্থানও গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক ভঙ্গিতে স্তনপান করালে শিশু পর্যাপ্ত পরিমাণে দুধ পাবে এবং স্তন খালি করতেও সুবিধা হবে, যা দুধ তৈরির প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।
ত্বকের সঙ্গে ত্বকের সংযোগ স্থাপন করুন
শিশুকে নিজের বুকের সঙ্গে জড়িয়ে রাখলে ত্বকের সঙ্গে ত্বকের সংযোগ হয়, যা ‘অক্সিটোসিন’ নামক হরমোনকে সক্রিয় করে। এই হরমোন দুধ নিঃসরণের প্রক্রিয়াকে (let-down reflex) বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি মা ও সন্তানের মধ্যে আবেগপূর্ণ সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে, যা মানসিকভাবে মাকে শান্তি দেয় এবং দুধের প্রবাহকে সহজ করে তোলে।
মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকুন, পর্যাপ্ত ঘুমান
মানসিক চাপ, ক্লান্তি এবং ঘুমের অভাব ব্রেস্ট মিল্কের উৎপাদনে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই নতুন মায়েদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং গভীর ঘুম প্রয়োজন। যদি বাচ্চা রাতে বারবার ওঠে, তাহলে দিনের বেলায় ছোট ছোট বিরতি নিয়ে ঘুম পূরণ করার চেষ্টা করুন। মেডিটেশন, হালকা যোগ ব্যায়াম এবং গভীর শ্বাস নেওয়ার কৌশল মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক।
পুষ্টিকর ও সুষম খাবার গ্রহণ করুন
ব্রেস্ট মিল্ক বাড়ানোর জন্য মায়ের পুষ্টিকর খাবার খাওয়া খুবই জরুরি। আপনার খাদ্যতালিকায় সবুজ শাকসবজি, মরশুমি ফল, শস্য, ডাল, দুধ, ঘি এবং শুকনো ফল অন্তর্ভুক্ত করুন। কিছু ঐতিহ্যবাহী খাবার যেমন মেথি, মৌরি, জোয়ান, জিরা, শতমূলী, রসুন ইত্যাদি স্তনদানকারী মহিলাদের দুধের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে বলে মনে করা হয়। এছাড়াও, প্রসবের পরে পঞ্চামৃত বা गोंদ के लड्डू-এর মতো आयुर्वेदिक বিকল্পগুলিও উপকারী।
পর্যাপ্ত জল পান করুন এবং শরীরকে हाइड्रेटेड রাখুন
স্তন্যপান করানোর সময় মায়ের শরীরে তরল পদার্থের চাহিদা বেড়ে যায়। তাই সারাদিনে কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস জল পান করা জরুরি। এছাড়াও ডাবের জল, ঘোল, স্যুপ এবং তাজা ফলের রস জাতীয় পানীয় শরীরকে হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করে এবং দুধ উৎপাদন বাড়ায়।
স্তনপান করানোর মাঝে মাঝে পাম্প করার অভ্যাস করুন
যদি শিশু বারবার স্তনপান না করে অথবা কিছু সময়ের জন্য মা তার থেকে দূরে থাকে, তাহলে ব্রেস্ট পাম্পের সাহায্যে দুধ বের করতে থাকুন। এর ফলে স্তন দুধ থেকে খালি হয়ে যাবে এবং শরীরকে আরও বেশি দুধ তৈরির সংকেত দেবে। এতে ব্রেস্ট মিল্কের সরবরাহ নিয়মিত এবং স্থিতিশীল থাকবে।
ডাক্তারের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না
উপরের সমস্ত উপায় চেষ্টা করার পরেও যদি দুধের পরিমাণ না বাড়ে, তাহলে আপনার স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ বা ল্যাকটেশন কাউন্সেলরের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। কিছু বিশেষ স্বাস্থ্য পরিস্থিতিতে ওষুধ বা সাপ্লিমেন্টের প্রয়োজন হতে পারে।
মা হওয়া একটি সুন্দর কিন্তু দায়িত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা। ব্রেস্ট মিল্কের অভাব একটি সাধারণ সমস্যা হতে পারে, তবে সময় মতো সঠিক পদক্ষেপ এবং তথ্যের মাধ্যমে এটি সহজেই সমাধান করা যেতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল মায়ের নিজের যত্ন নেওয়া উচিত, যাতে তিনি তার শিশুকে সুস্থ ও পুষ্ট রাখতে পারেন। মনে রাখবেন, একজন সুস্থ মা-ই একটি সুস্থ শিশুর ভিত্তি স্থাপন করেন।