শহরের ঘুম ভাঙাচ্ছে রাতের তাপ ২০৫০-এ ‘দুঃস্বপ্ন’ হয়ে উঠতে পারে মহানগরীগুলি

শহরের ঘুম ভাঙাচ্ছে রাতের তাপ ২০৫০-এ ‘দুঃস্বপ্ন’ হয়ে উঠতে পারে মহানগরীগুলি

রাতের শহরেই বাড়ছে উত্তাপ, উদ্বেগের তথ্য তুলে ধরল বিশ্বব্যাঙ্ক

রাত নামলেই যেন বেড়ে চলেছে উত্তাপের গ্রাফ। কলকাতা, দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই, সুরাট— দেশের একাধিক শহরে রাতের তাপমাত্রা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। পাশেই থাকা গ্রামাঞ্চলের তুলনায় এই তফাৎ কখনও ৩, কখনও বা ৫ ডিগ্রিতে গিয়ে ঠেকছে। বিশ্বব্যাঙ্কের সাম্প্রতিক রিপোর্টে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর এই তথ্য। অপরিকল্পিত নগরায়ন, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, কংক্রিটের জঙ্গল এই উষ্ণতার জন্য মূলত দায়ী।

‘Towards Resilient and Prosperous Cities’ রিপোর্টে উঠে এল নগরায়নের বিপদ

বিশ্বব্যাঙ্কের তরফে প্রকাশিত ‘Towards Resilient and Prosperous Cities in India’ রিপোর্টে ভারতীয় শহরগুলির তাপমাত্রা বিশ্লেষণ করে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, ভবিষ্যৎ দিনগুলিতে এই উষ্ণতা আরও ভয়ঙ্কর রূপ নেবে। গ্লোবাল ওয়ার্মিং তো আছেই, তার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে শহুরে অবকাঠামোর তাপ আটকে রাখার ক্ষমতা। তাপ বেরোতে না পারায় শহরের রাতগুলো হয়ে উঠছে অসহনীয়।

লখনৌ, সুরাট, চেন্নাইয়ে ভয়ঙ্কর অবস্থা, রাতের তাপমাত্রায় বড় তফাৎ

এই সমীক্ষায় দেশের ২৪টি শহরের উপর নজর দেওয়া হয়। চেন্নাই, লখনৌ, সুরাট, তিরুবনন্তপুরম, নয়াদিল্লি ও ইন্দোরের রাতের তাপমাত্রা নিয়ে বিশ্লেষণ চমকে দিয়েছে গবেষকদেরও। রিপোর্ট বলছে, লখনৌ শহরে রাতের তাপমাত্রা আশপাশের গ্রামাঞ্চলের থেকে প্রায় ৫ ডিগ্রি বেশি। চেন্নাই ও সুরাটেও একই চিত্র। শহরের ইট-কাঠ-কংক্রিট যেন তাপ ধরে রেখে রাতের শীতলতাকেই গ্রাস করছে।

সেই ২৫-এর নিচে যাচ্ছে না পারদ, ২০৫০-এ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ

বর্তমানে বছরে অন্তত ৬৫ দিন এমন হচ্ছে, যখন রাতের তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রির নিচে নামছে না। আর সেই সংখ্যাই ২০৫০ সালের মধ্যে বেড়ে দাঁড়াবে ১৬৫-তে! অর্থাৎ, বছরের প্রায় অর্ধেক রাতেই মানুষের ঘুম কেড়ে নেবে শহরের গুমোট তাপ।

শুধু গরম নয়, বিপদ ঘনাচ্ছে বন্যার দিক থেকেও— সাবধান করছে রিপোর্ট

শুধু উষ্ণতা নয়, বন্যার ভয়ও ক্রমেই বাড়ছে। সমীক্ষা অনুযায়ী, আগামী ৫০ বছরে শহরে বন্যার আশঙ্কা ৭৩ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে। তার মধ্যে সবচেয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থা দিল্লির। ২০৩০ সালের মধ্যে রাজধানীতে বন্যা প্রতিরোধে প্রয়োজন হতে পারে ৫ বিলিয়ন ডলার। আর ২০৭০ সালের মধ্যে সেই খরচ বেড়ে দাঁড়াতে পারে ১৪ থেকে ৩০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত।

হিট স্ট্রেসে জর্জরিত ১০টি বড় শহর, মৃত্যুর হার বাড়বে কয়েক গুণ!

কলকাতা, দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই, আমেদাবাদ, সুরাট, লখনৌ, বারাণসী, পুনে এবং ইন্দোর— দেশের এই ১০টি প্রধান শহরে দেখা যাচ্ছে প্রবল ‘হিট স্ট্রেস’। স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। রিপোর্ট বলছে, প্রতিবছর গরমে দেশে মারা যান প্রায় ১.৪ লক্ষ মানুষ। ২০৫০ সালে সেই সংখ্যাই হয়ে দাঁড়াবে ৩.২৮ লক্ষ!

সমাধান সম্ভব, তবে দরকার এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার— বলছে বিশ্বব্যাঙ্ক

তবে সমাধান অসম্ভব নয়। বিশ্বব্যাঙ্কের দাবি, সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া গেলে, বহু প্রাণ বাঁচানো সম্ভব। যেমন, বহুতলের ছাদে সোলার প্যানেল লাগানো, বজ্র পদার্থ নষ্ট করার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, পরিবেশবান্ধব নির্মাণে উৎসাহ দেওয়া— এই ছোট ছোট পদক্ষেপই শহরের উষ্ণতা রুখতে পারে অনেকটাই। বিনিয়োগ দরকার ঠিকঠাক জায়গায়, তখনই রক্ষা মিলতে পারে ভয়ঙ্কর ভবিষ্যতের হাত থেকে।

Leave a comment