স্টক স্প্লিটের প্রধান উদ্দেশ্য হল কোম্পানির শেয়ারগুলিকে আরও সাশ্রয়ী করা এবং বাজারে তাদের তারল্য বৃদ্ধি করা। যখন কোনও কোম্পানির স্টক স্প্লিট হয়, তখন শেয়ারের মোট সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, তবে প্রতি শেয়ারের দাম কমে যায়, যার ফলে ছোট বিনিয়োগকারীদের জন্য সেগুলি কেনা সহজ হয়।
প্রতিরক্ষা খাতের সুপরিচিত কোম্পানি পারাস ডিফেন্স অ্যান্ড স্পেস টেকনোলজিস লিমিটেড শুক্রবার শেয়ার বাজারে দারুণ পারফর্ম করেছে। কোম্পানির শেয়ারে একদিনে ১০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি দেখা গেছে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য লাভজনক ছিল। এই উত্থানের কারণ হিসেবে কোম্পানি কর্তৃক সম্প্রতি ঘোষিত স্টক স্প্লিটকে বিবেচনা করা হচ্ছে।
কোম্পানি ১:২ অনুপাতে স্টক স্প্লিট করেছে
পারাস ডিফেন্স তাদের শেয়ার ১:২ অনুপাতে বিভক্ত করেছে। এর মানে হল, আগে যেখানে একটি শেয়ারের দাম ছিল ১০ টাকা, এখন সেটিকে দুটি অংশে ভাগ করা হয়েছে এবং প্রতিটি নতুন শেয়ারের ফেস ভ্যালু ৫ টাকা করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে শেয়ারের সংখ্যা বেড়েছে, কিন্তু প্রতিটি শেয়ারের দাম আগের চেয়ে অর্ধেক হয়ে গেছে, যা তাদের আরও সাশ্রয়ী করে তুলেছে।
রেকর্ড ডেট এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
কোম্পানি স্টক স্প্লিটের জন্য রেকর্ড ডেট হিসেবে ২০২৫ সালের ৪ জুলাই নির্ধারণ করেছিল। এর অর্থ হল, যে বিনিয়োগকারীদের ৩ জুলাই এর শেষ পর্যন্ত পারাস ডিফেন্সের শেয়ার ছিল, তারাই স্টক স্প্লিটের সুবিধা পাবেন। এরপর শেয়ার কিনলে এই সুবিধা পাওয়া যাবে না।
এই রেকর্ড ডেটের কারণে ৩ জুলাই পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক কেনাকাটা দেখা গেছে এবং ৪ জুলাই শেয়ারের দামে ১০ শতাংশ বৃদ্ধি দেখা যায়।
কোম্পানিগুলি কেন স্টক স্প্লিট করে
স্টক স্প্লিটের উদ্দেশ্য হল শেয়ারগুলিকে ছোট অংশে বিভক্ত করে তাদের দাম কমানো, যাতে সেগুলি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য আরও সহজলভ্য হয়। এর ফলে শেয়ারের তারল্য, অর্থাৎ বাজারে তাদের লেনদেন বৃদ্ধি পায় এবং কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগের সম্ভাবনা বাড়ে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, স্টক স্প্লিটের ফলে কোম্পানির মোট মূল্য বা বিনিয়োগকারীদের মোট হোল্ডিংয়ে কোনও পরিবর্তন হয় না, কেবল শেয়ারের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং তাদের একক মূল্য হ্রাস পায়।
ইসরায়েলের সঙ্গে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা নিয়েও আলোচনা
গত মাসে একটি বিজনেস চ্যানেলের সঙ্গে আলাপকালে কোম্পানির একজন কর্মকর্তা অমিত মহাজন জানিয়েছিলেন যে, পারাস ডিফেন্সের ইসরায়েলের সঙ্গে সহযোগিতা মূলত প্রযুক্তি স্থানান্তরের উপর কেন্দ্র করে। তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, ইসরায়েলে কোম্পানির রপ্তানি খুবই সীমিত, যা মোট ব্যবসার মাত্র ৫ শতাংশ।
তিনি আরও বলেন যে, প্রযুক্তি স্থানান্তরে কয়েক সপ্তাহের বিলম্ব হতে পারে, তবে এর সরবরাহ শৃঙ্খল বা প্রকল্পগুলির উপর কোনও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।
ছয় মাসে ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি
পারাস ডিফেন্সের শেয়ারে গত ছয় মাসে প্রায় ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি রেকর্ড করা হয়েছে। এই অসাধারণ পারফরম্যান্স এই স্টকটিকে বাজারে মাল্টিব্যাগার-এর পর্যায়ে এনে দিয়েছে।
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে এই শেয়ারের দাম প্রায় ₹৯৫০-এর কাছাকাছি ছিল, যেখানে জুনের শেষ পর্যন্ত এটি ₹১৬০০-এর উপরে ট্রেড করতে শুরু করে।
বৃহস্পতিবার বাজার বন্ধ হওয়ার সময় এই শেয়ারের দাম ছিল ₹১৬৯২.২০, এবং শুক্রবার এতে ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে এটি আরও বেড়ে যায়।
চতুর্থ ত্রৈমাসিকের ফলাফল শক্তিশালী ছিল
অর্থ বছর ২০২৫-এর চতুর্থ ত্রৈমাসিকে কোম্পানি চমৎকার ফলাফল পেশ করেছে।
কোম্পানির নেট মুনাফা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ₹১৯.৭ কোটিতে পৌঁছেছে।
রাজস্বে ৩৫.৮ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে এবং এটি ₹১০৮.২ কোটি হিসাবে রেকর্ড করা হয়েছে।
এই শক্তিশালী ফলাফলের কারণে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে এবং এর ফলস্বরূপ শেয়ারে ক্রমাগত বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে।
প্রতিরক্ষা খাতে ক্রমবর্ধমান চাহিদার প্রভাব
ভারতে প্রতিরক্ষা খাতে আত্মনির্ভরতা বাড়ানোর জন্য সরকার ক্রমাগত নতুন নীতি এবং পরিকল্পনা আনছে। এমন পরিস্থিতিতে পারাস ডিফেন্সের মতো দেশীয় কোম্পানিগুলি এর সুবিধা পাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।
দেশীয় প্রযুক্তি এবং আধুনিক প্রতিরক্ষা সিস্টেমের নির্মাণে পারাস ডিফেন্সের ভূমিকা ক্রমাগত বাড়ছে, যা বিনিয়োগকারীদের কোম্পানির ভবিষ্যতে বড় সুযোগের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
দীর্ঘ সময় ধরে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বজায় আছে
পারাস ডিফেন্স ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে শেয়ার বাজারে তাদের যাত্রা শুরু করে এবং তারপর থেকেই এটি বিনিয়োগকারীদের পছন্দের শেয়ারে পরিণত হয়েছে। কোম্পানির প্রযুক্তি-ভিত্তিক কর্মপদ্ধতি, সরকারি ও বেসরকারি খাতে গভীর সম্পর্ক এবং নতুন প্রকল্পের কারণে এই স্টক সম্পর্কে বাজারে ক্রমাগত ইতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে।