পিরিয়ড মানেই শুধু রক্তস্রাব নয়, সঙ্গে পেট ফাঁপার যন্ত্রণাও
শরীর খারাপের তালিকায় পেট ফাঁপা যেন ঋতুস্রাবের নিয়মিত অনুচর। খাবার-দাবারের গণ্ডগোল ছাড়াও এই সময়ে হরমোনের উঠানামায় বহু কিশোরী ও তরুণী হঠাৎ করেই টের পান—পেটটা ভারী, অস্বস্তিকর, ফোলা ফোলা লাগছে। ঠিক যেন পেটের মধ্যে জমে আছে অদৃশ্য কোনও বাতাস! হ্যাঁ, এটিই হল ব্লোটিং। আর এর প্রধান কারণ, ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের ভারসাম্যহীনতা।
শরীর জমিয়ে রাখে জল-নুন, তাই ফুলে যায় পেট
ঋতুস্রাবের আগে ও চলাকালীন শরীরের বিভিন্ন কোষে জল ও সোডিয়ামের অতিরিক্ত সঞ্চয় হয়, যার ফলে পেট ফাঁপা বা ব্লোটিং-এর সৃষ্টি হয়। শরীর হাইড্রেটেড না থাকলে এই সমস্যা আরও প্রকট হয়। কারও ক্ষেত্রে এর সঙ্গে কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়ারিয়ার মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তাই নিয়মিত ডায়েট ও জল পানের সঙ্গে চাই কিছু ঘরোয়া কৌশল, যা এনে দেবে স্বস্তি।
লেবু জল: প্রদাহ কমিয়ে শরীর রাখে হালকা
লেবু জল যেন ঋতুস্রাবের অস্বস্তির বিরুদ্ধে এক প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষাবর্ম। এক গ্লাস কুসুম গরম জলে অর্ধেক লেবুর রস মিশিয়ে দিনে দু’বার পান করুন। লেবুর মধ্যে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং হজমশক্তিকে উন্নত করে। এর পাশাপাশি জলীয় ভারসাম্যও বজায় রাখে। তাই শরীর হালকা লাগে, পেটও ভারমুক্ত।
আদা: প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি যোদ্ধা
পেটের অস্বস্তি হোক বা গ্যাস, আদার চেয়ে ভালো দাওয়াই মেলে না। আদা চা, আদার রস বা কেবল কাঁচা আদা চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস পেট ফাঁপা থেকে মুক্তি দেয়। আদার মধ্যে থাকা জিঞ্জারল নামক উপাদান শরীরের ভিতরের প্রদাহ কমিয়ে পেটের কোষগুলোকে শান্ত করে তোলে। হরমোন পরিবর্তনের সময়েও এটি বেশ কার্যকর।
জোয়ান ভেজানো জল: গ্যাস ও জলধারণ প্রতিরোধে কার্যকর
রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে এক চামচ জোয়ান জলে ভিজিয়ে রাখুন, সকালে খালি পেটে সেই জল পান করুন। জোয়ান শরীরের বিপাক হার বাড়ায় এবং হজমশক্তি উন্নত করে। এর মধ্যে থাকা কার্ভাক্রল ও থাইমল উপাদান গ্যাস নিরসনে দারুণ কার্যকর। এটি শরীরের কোষে অতিরিক্ত জল জমার প্রবণতাও কমিয়ে দেয়, যার ফলে পেট ফাঁপা কমে যায়।
মৌরি ও মিছরি: হজমের পথ মসৃণ করে হরমোনের ভারসাম্য রাখে
ঋতুস্রাবের সময় বারবার পেটের সমস্যা দেখা দিলে খাবারের পর চিবিয়ে খান এক চামচ মৌরি ও মিছরির মিশ্রণ। মৌরি অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং হরমোনাল ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে। মিছরি শরীর ঠান্ডা রাখতে সহায়ক, ফলে এই সময়ের উত্তাপ ও অস্বস্তি কিছুটা হলেও কমে।
কলা: অতিরিক্ত সোডিয়াম বার করে দেয় শরীর থেকে
পিরিয়ডের সময় কলা খাওয়ার গুরুত্ব অনেকেই বুঝতে পারেন না। কলায় থাকে ভিটামিন B6 ও পটাশিয়াম—দু’টি উপাদানই শরীরের জলধারণ ক্ষমতা কমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি হজমশক্তি বাড়িয়ে কোষ্ঠকাঠিন্যও রোধ করে। সকালের জলখাবারে একটি কলা থাকলেই সারা দিন পেট ফাঁপার ঝুঁকি অনেকটাই কমে।
পর্যাপ্ত জল ও হালকা শরীরচর্চা: পিরিয়ডের মূখ্য অস্ত্র
এই সমস্ত ঘরোয়া টোটকার পাশাপাশি দিনে অন্তত ৮ গ্লাস জল পান করা এবং ২০-৩০ মিনিট হালকা হাঁটা বা স্ট্রেচিং করলে পিরিয়ডের অস্বস্তি অনেকটাই কমানো সম্ভব। শরীরচর্চা রক্তসঞ্চালন বাড়ায় ও গ্যাস-পেট ফাঁপা দূর করতে সহায়ক।ঋতুস্রাবের সময় পেট ফাঁপার সমস্যা নিয়ে ওষুধের দিকেই প্রথম নজর না দিয়ে বরং এই ঘরোয়া উপায়গুলির দিকে হাত বাড়ান। সহজলভ্য এই উপাদানগুলো ব্যবহার করে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন—পিরিয়ডের যন্ত্রণাও সামলানো যায় যত্ন আর সচেতনতার সঙ্গে।