ভারতের ঐতিহাসিক ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টায় আরও একটি সোনালী অধ্যায় যুক্ত হল। মারাঠা সাম্রাজ্যের বীর সেনাপতি রঘুজি ভোঁসলে প্রথমের ২০০ বছরের পুরনো তলোয়ার অবশেষে নিজের দেশে ফিরে এসেছে।
মুম্বই: মহারাষ্ট্র সরকার ইতিহাস ও সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত একটি বড় সাফল্য অর্জন করেছে। মারাঠা সাম্রাজ্যের মহান সেনাপতি রঘুজি ভোঁসলে প্রথমের বিখ্যাত তলোয়ারটি লন্ডনের নিলাম থেকে ফিরিয়ে এনে দেশে আনার কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। সোমবার সকালে এই অমূল্য সম্পদ মুম্বই পৌঁছেছে। মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিস এই উদ্যোগকে “ভারতের ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা” বলে অভিহিত করেছেন।
সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রী আশীষ শেলার জানিয়েছেন যে, তলোয়ারটি সকাল প্রায় ১০টা নাগাদ ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এরপর কড়া নিরাপত্তার মধ্যে এটিকে প্রভাদেবী স্থিত পি.এল. দেশপাণ্ডে অ্যাকাডেমিতে নিরাপদে রাখা হয়েছে।
তলোয়ারের মুম্বইয়ে আগমন
সোমবার সকাল প্রায় ১০টা নাগাদ এই তলোয়ার কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এরপর এটিকে প্রভাদেবী স্থিত পি.এল. দেশপাণ্ডে অ্যাকাডেমিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রী আশীষ শেলার জানান, প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী তলোয়ারটিকে বিমানবন্দর থেকে বাইক র্যালি করে অ্যাকাডেমি পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ভারী বৃষ্টি ও ট্রাফিকের কারণে এই কর্মসূচি বাতিল করতে হয়।
মুখ্যমন্ত্রী ফড়নবিস বলেছেন- 'শুধু অস্ত্র নয়, শৌর্যগাথার প্রতীক'
অ্যাকাডেমিতে আয়োজিত অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিস বলেন: এই তলোয়ার কেবল একটি যুদ্ধের সরঞ্জাম নয়, বরং মারাঠা সাম্রাজ্যের বীরত্ব ও শৌর্যগাথার প্রতীক। এটি আমাদের থেকে একভাবে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল, এবং এখন এটি আবার মহারাষ্ট্রের মাটিতে ফিরে এসেছে। আগামী প্রজন্মকে এই ঐতিহ্য আমাদের গৌরবময় ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত করবে।
ফড়নবিস আরও জানান যে, সরকার নিলামের খবর পাওয়া মাত্রই দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কথাও উল্লেখ করেন এবং বলেন যে, কেন্দ্র সরকারও বিগত বছরগুলোতে অনেক ঐতিহাসিক ঐতিহ্য বিদেশ থেকে ভারতে ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
৪৭ লক্ষ টাকায় কেনা হয়েছে ঐতিহাসিক ঐতিহ্য
এই তলোয়ারটিকে মহারাষ্ট্র সরকার লন্ডনে আয়োজিত একটি আন্তর্জাতিক নিলাম থেকে ৪৭.১৫ লক্ষ টাকায় কিনেছে। ঐতিহাসিকদের ধারণা, এই তলোয়ার ১৮১৭ সালের সীতাবুল্ডির যুদ্ধের সময় ভারত থেকে বাইরে চলে গিয়েছিল। সেই সময় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নাগপুরের ভোঁসলে শাসকদের পরাজিত করে এবং অনেক ঐতিহ্য ইংরেজদের দখলে চলে যায়।
রঘুজি ভোঁসলে প্রথম নাগপুর ভোঁসলে রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা এবং ছত্রপতি শাহু মহারাজের শাসনকালে একজন প্রধান সেনাপতি ছিলেন। মারাঠা সাম্রাজ্যের বিস্তারে তাঁর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাঁর নাম ইতিহাসে সাহস, যুদ্ধ কৌশল ও কৌশলগত দক্ষতার জন্য স্মরণ করা হয়। তাঁর তলোয়ারের প্রত্যাবর্তন শুধু মহারাষ্ট্র নয়, পুরো ভারতের জন্য গর্বের মুহূর্ত।
মারাঠা সাম্রাজ্যের মান-সম্মান-গৌরব
মুখ্যমন্ত্রী ফড়নবিস এই তলোয়ারকে “মারাঠা সাম্রাজ্যের মান-সম্মান-গৌরব” আখ্যা দিয়ে বলেন যে, এটি শুধু মহারাষ্ট্রের ঐতিহ্য নয়, বরং পুরো দেশের গৌরব। তিনি বলেন: এই মুহূর্ত আমাদের অনুপ্রাণিত করে যে আমরা আমাদের আরও ঐতিহাসিক ঐতিহ্য বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনি। এই তলোয়ার মারাঠা সাম্রাজ্যের সেই গৌরবগাথার কথা মনে করিয়ে দেয় যা ভারতীয় ইতিহাসে অমলিন ছাপ ফেলেছে।
ইতিহাসবিদ ও বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এই ধরনের ঐতিহ্য কেবল সংগ্রহশালার শোভা বাড়ানোর জন্য নয়, বরং এগুলি জাতির সাংস্কৃতিক পরিচয় ও গৌরবের অংশ।