রাজস্থানে আজ থেকে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR) শুরু হয়েছে। ৫.৪৮ কোটি ভোটারের গণনা কাজের জন্য ৫২,৪৬৯ জন বিএলও নিযুক্ত হবেন। এই প্রক্রিয়া ২০২৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। নির্বাচন কমিশনের ঘোষণার পর রাজ্যে রাজনৈতিক আলোড়ন তীব্র হয়েছে।
জয়পুর: নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে দেশের ১২টি রাজ্যে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR) করা হবে। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার এই কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করে বলেছেন যে এর উদ্দেশ্য হল ভোটার তালিকাগুলিকে আরও স্বচ্ছ ও ত্রুটিমুক্ত করা। তবে, নির্বাচন কমিশনের এই পদক্ষেপে রাজস্থানের রাজনীতিতে নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে, কারণ বিরোধী দলগুলি এটিকে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করেছে।
দেশের ১২টি রাজ্যে SIR-এর সূচনা
মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার প্রেস কনফারেন্সে জানিয়েছেন যে দেশের ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে SIR প্রয়োগ করা হবে। এর মধ্যে রাজস্থানও রয়েছে।
রাজস্থানের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক নবীন মহাজন বলেছেন যে রাজ্য এই প্রক্রিয়ার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। সমস্ত বুথ লেভেল অফিসার (BLOs), পর্যবেক্ষক এবং হেল্প ডেস্ক কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এই প্রক্রিয়া ২০২৫ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে ২০২৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। এই সময়ে প্রতিটি ভোটারের তথ্য যাচাই করা হবে এবং ভুয়া বা পুনরাবৃত্ত নামগুলি বাদ দেওয়া হবে।
৫২ হাজারের বেশি বিএলও গণনা কাজ করবেন

মহাজন-এর মতে, ২৮ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত প্রশিক্ষণ এবং গণনা ফর্ম মুদ্রণ করা হবে। ৪ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি সমীক্ষা ও ফর্ম বিতরণের কাজ চলবে। ৯ ডিসেম্বর ভোটার তালিকার খসড়া প্রকাশিত হবে।
এরপর ৯ ডিসেম্বর থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত দাবি ও আপত্তি নথিভুক্ত করা হবে, যার শুনানি চলবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। অবশেষে ২০২৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সংশোধিত ও চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশিত হবে। এই প্রক্রিয়ায় রাজ্যজুড়ে ৫২,৪৬৯ জন বিএলও ভোটারদের তথ্য যাচাই করবেন।
ভোটার যাচাইকরণের পাশাপাশি জনসচেতনতা অভিযান শুরু
মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক জানিয়েছেন যে বিএলও, স্বেচ্ছাসেবক এবং হেল্পডেস্ক কর্মীদের জন্য রিফ্রেশার সেশন আয়োজন করা হবে। তাদের কাজ প্রতিদিন নথিভুক্ত করা হবে যাতে জেলা নির্বাচন আধিকারিক এবং সিইও স্তরে অগ্রগতির মূল্যায়ন করা যায়।
একই সাথে, জনসচেতনতা অভিযানও চালানো হবে, যেখানে কলেজ, পঞ্চায়েত এবং স্কুলগুলিতে অনলাইন আবেদনের জন্য উৎসাহিত করা হবে। নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য স্বনির্ভর গোষ্ঠী এবং “রাজসখী” নেটওয়ার্ককে যুক্ত করা হবে। জেলা স্তরে মিডিয়া সেল গঠন করা হয়েছে এবং শুধুমাত্র জেলা নির্বাচন আধিকারিকই আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেবেন।
SIR নিয়ে রাজনৈতিক বাগবিতণ্ডা তীব্র
রাজস্থানে SIR ঘোষণার পর রাজনৈতিক তৎপরতা তীব্র হয়েছে। কংগ্রেস অভিযোগ করেছে যে এই প্রক্রিয়াটি ভোটার তালিকা থেকে দলিত, আদিবাসী, অনগ্রসর এবং সংখ্যালঘু ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট বলেছেন যে যখন বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন, তখন এই প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া অনুচিত। অন্যদিকে, পিসিসি প্রধান গোবিন্দ সিং ডোটাচরা এটিকে “গণতান্ত্রিক অধিকারের লঙ্ঘন” হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
অন্যদিকে, নির্বাচন কমিশন বলছে যে SIR-এর উদ্দেশ্য হল স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা, কোনো নির্দিষ্ট শ্রেণীকে লক্ষ্য করা নয়। আগামী মাসগুলিতে এই প্রক্রিয়া রাজস্থানের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠতে চলেছে।













