রাখি বন্ধন ২০২৫: শুভ মুহূর্ত, নিয়ম ও পৌরাণিক তাৎপর্য

রাখি বন্ধন ২০২৫: শুভ মুহূর্ত, নিয়ম ও পৌরাণিক তাৎপর্য

এই বছর ৯ই অগাস্ট, ২০২৫ তারিখে রাখি বন্ধন উৎসব পালিত হবে। এই দিনটি ভাই-বোনের ভালোবাসা, সুরক্ষা এবং বিশ্বাসের প্রতীক। শুভ মুহূর্তে রাখি বাঁধার পাশাপাশি কিছু প্রথা ও সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। এই প্রবন্ধে রাখি বন্ধনের সঠিক নিয়ম, নিষেধ এবং এর সঙ্গে জড়িত কিছু মজার পৌরাণিক কাহিনী জানুন।

রাখি বন্ধন ২০২৫: হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে, রাখি বন্ধন উৎসব প্রতি বছর শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে পালিত হয়। এই বছর এই শুভ দিনটি শনিবার, ৯ই অগাস্ট, ২০২৫ তারিখে পড়েছে। সারা দেশে এই উৎসব অত্যন্ত আনন্দ ও ঐতিহ্যপূর্ণ ভাবে পালিত হয়। এই দিনে বোনেরা তাদের ভাইদের হাতে রাখি বেঁধে তাদের দীর্ঘায়ু ও সুরক্ষা কামনা করে, অন্যদিকে ভাইয়েরা বোনেদের উপহার দিয়ে তাদের সম্মান ও রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেয়।

রাখি বন্ধনের এই উৎসব শুধুমাত্র একটি সুতো নয়, বরং এটি এমন একটি বন্ধন যা আন্তরিকতা, বিশ্বাস ও ভালোবাসার ডোরে ভাই-বোনকে আজীবনকালের জন্য জুড়ে রাখে।

রাখি বন্ধন ২০২৫-এর শুভ মুহূর্ত

জ্যোতিষশাস্ত্রীয় গণনা অনুযায়ী, এই বছর রাখি বন্ধনের শুভ মুহূর্ত সকাল ৫:৪৭ থেকে দুপুর ১:২৪ পর্যন্ত থাকবে। এই সময়ের মধ্যে রাখি বাঁধা উত্তম বলে মনে করা হয়। ভদ্রা কালে রাখি বাঁধা উচিত নয়, কারণ এটিকে অশুভ মনে করা হয়।

রাখি বন্ধনের দিনে কী করা উচিত?

  • দিনটি শুরু করুন স্নান করে পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করে।
  • পূজার থালায় রাখি, চাল (অক্ষত), রোli, প্রদীপ এবং মিষ্টি অবশ্যই রাখুন।
  • রাখি বাঁধার আগে ভগবান গণেশ ও মাতা লক্ষ্মীর যথাযথ পূজা করুন।
  • বাড়ির ইষ্টদেব বা শ্রীকৃষ্ণকেও রাখি অর্পণ করুন।
  • রাখি বাঁধার সময় ভাইয়ের মুখ পশ্চিম দিকে এবং বোনের মুখ পূর্ব দিকে হওয়া উচিত।
  • রাখি তিনটি গিঁটে বাঁধা উচিত, যা সমর্পণ, সুরক্ষা এবং প্রেমের প্রতীক।
  • ভাইয়ের আরতি করুন, তিলক করুন, মিষ্টি খাওয়ান এবং শুভকামনা জানান।
  • ভাইয়ের হাতে রাখি বাঁধার সময় তার মাথায় পরিষ্কার কাপড় অবশ্যই রাখুন।
  • এই দিনে দান করা বিশেষ পুণ্যদায়ক বলে মনে করা হয়, তাই দরিদ্রদের অন্ন, বস্ত্র বা অর্থ দান করুন।
  • যদি ভাই দূরে থাকে, তাহলে রাখি ডাক বা অনলাইন মাধ্যমে পাঠাতে পারেন।

রাখি বন্ধনের দিনে কী করা উচিত নয়?

  • মুহূর্ত ছাড়া রাখি বাঁধবেন না। বিশেষ করে ভদ্রা কাল বা রাহুকালে রাখি বাঁধা থেকে বিরত থাকুন।
  • ভাইয়ের বাঁ হাতে রাখি বাঁধা উচিত নয়, শুধুমাত্র ডান হাতেই বাঁধুন।
  • এই দিনে ঝগড়া বা মিথ্যা বলা থেকে বিরত থাকুন। এই উৎসব প্রেম ও মিলনের প্রতীক।
  • বোনেরা আগে খাবার খাবেন না। প্রথমে পূজা ও রাখি বাঁধা আবশ্যক।
  • নেশা বা মাংসাহার থেকে দূরে থাকা উচিত, কারণ এই দিনটি সাত্ত্বিকতা ও পবিত্রতার প্রতিনিধিত্ব করে।
  • পূজা করার পরে থালিটিকে ফেলে রাখবেন না। সেটি ধুয়ে জল কোনো পবিত্র স্থানে বিসর্জন দিন।
  • একে অপরকে উপহার হিসেবে ধারালো জিনিস, রুমাল, তোয়ালে বা পারফিউম দেবেন না।
  • ভাঙা চাল বা অশুদ্ধ উপকরণ দিয়ে তিলক করবেন না।
  • কালো রঙের কাপড় পরা থেকে বিরত থাকুন, কারণ এই রং অশুভের প্রতীক বলে মনে করা হয়।

রাখি বন্ধনের পৌরাণিক তাৎপর্য এবং কাহিনী

রাখি বন্ধন শুধু সামাজিক প্রথা নয়, বরং গভীরভাবে ধর্মীয় এবং পৌরাণিক তাৎপর্যও বহন করে।

দ্রৌপদী এবং শ্রীকৃষ্ণের কাহিনী

কথিত আছে যে, একবার শ্রীকৃষ্ণের আঙুলে আঘাত লেগে রক্ত ​​বের হচ্ছিল। দ্রৌপদী তৎক্ষণাৎ তার শাড়ির একটি অংশ ছিঁড়ে কৃষ্ণের আঙুলে বেঁধে দেন। এই প্রেমপূর্ণ কাজের প্রতিদানে শ্রীকৃষ্ণ দ্রৌপদীকে বস্ত্রহরণের সময় অপমান থেকে বাঁচিয়েছিলেন।

ইন্দ্র এবং ইন্দ্রাণীর কাহিনী

ভবিষ্য পুরাণ-এ বর্ণিত আছে যে, যখন ইন্দ্র অসুরদের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হচ্ছিলেন, তখন তাঁর স্ত্রী ইন্দ্রাণী তাঁর হাতে একটি পবিত্র সুতো বেঁধেছিলেন, যার ফলে তিনি বিজয় লাভ করেন।

রাজা বলি এবং মাতা লক্ষ্মীর কাহিনী

ভগবান বিষ্ণু যখন বামন রূপে রাজা বলির থেকে তাঁর রাজ্য ভিক্ষা করে তাঁর সাথে বসবাস করতে শুরু করেন, তখন লক্ষ্মী মাতা চিন্তিত হয়ে পড়েন। তিনি বলিকে রাখি বেঁধে তাঁকে ভাই বানান এবং বিষ্ণুকে পুনরায় বৈকুন্ঠে ফিরিয়ে নিয়ে যান।

রানী কর্ণবতী এবং হুমায়ুনের ঐতিহাসিক কাহিনী

রাজস্থানের রানী কর্ণবতী মুঘল সম্রাট হুমায়ুনকে রাখি পাঠিয়ে সাহায্য চেয়েছিলেন। হুমায়ুন তা গ্রহণ করে রানীর রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

রাখি বন্ধন: অনুভূতির উৎসব

রাখি বন্ধন শুধুমাত্র রাখি বাঁধার উৎসব নয়, বরং এটি একটি সামাজিক এবং আবেগপূর্ণ সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করে তোলার উৎসব। এই দিনটি ভাই-বোনের সম্পর্কের মধ্যে বিশ্বাস, প্রেম এবং সুরক্ষার অনুভূতিকে বাঁচিয়ে রাখে। আজও এই উৎসবের ঐতিহ্যগুলি যেমন প্রাচীন, তেমনই প্রাসঙ্গিক এবং মূল্যবান রয়ে গেছে।

Leave a comment