মহারাষ্ট্রে গ্রাম পঞ্চায়েতের নাম পরিবর্তনের দাবিতে রাজনৈতিক চাপ, মারাঠা ঐতিহ্যের পুনরুদ্ধার?

মহারাষ্ট্রে গ্রাম পঞ্চায়েতের নাম পরিবর্তনের দাবিতে রাজনৈতিক চাপ, মারাঠা ঐতিহ্যের পুনরুদ্ধার?

মহারাষ্ট্রের রায়গড় জেলায় গ্রাম পঞ্চায়েতের নাম পরিবর্তন নিয়ে আবারও রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বিধায়ক গোপীচাঁদ পাডলকর মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে এবং উপমুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিসকে চিঠি লিখে আবেদন করেছেন যে ছত্র নিজামপুর গ্রামের নাম পরিবর্তন করে রায়গড় ওয়াড়ি রাখা হোক। এই গ্রামটি ঐতিহাসিক রায়গড় দুর্গের পাদদেশে অবস্থিত, যেখান থেকে ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ এবং তাঁর পুত্র সম্ভাজী মহারাজ শাসনকার্য পরিচালনা করেছিলেন। পাডলকরের মতে, এই পবিত্র স্বরাজ্যভূমিতে কোনো ‘আগ্রাসকের’ নামে গ্রাম পঞ্চায়েতের নামকরণ করাটা মারাঠা স্বাভিমান এবং জনগণের ভাবাবেগের পরিপন্থী।

রায়গড় ওয়াড়ি নামের সঙ্গে যুক্ত হবে মারাঠা ইতিহাস

বিধায়ক পাডলকর স্পষ্ট করেছেন যে রায়গড় কেবল একটি দুর্গ নয়, বরং মারাঠা সাম্রাজ্যের আত্মা, এবং এর নিজামের মতো বিদেশি শাসকের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক ছিল না। তিনি প্রশ্ন করেন, রায়গড় দুর্গের সঙ্গে নিজামের সম্পর্ক কী? গ্রাম পঞ্চায়েতের নাম ‘নিজামপুর’ কীভাবে এবং কেন রাখা হয়েছিল? তাঁর মতে, গ্রামের নাম পরিবর্তন করে রায়গড় ওয়াড়ি করলে কেবল মারাঠা গৌরবকে যথাযথ সম্মান জানানো হবে না, বরং তরুণ প্রজন্মকে তাদের ইতিহাসের প্রতি গর্বিত হওয়ার সুযোগও দেওয়া হবে।

তিনি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এই দাবিটি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। একই সঙ্গে, এই বিষয়ে গ্রাম উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী যোগেশ কদম বলেছেন যে, যদি এই বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব আসে, তবে সরকার অবশ্যই তা বিবেচনা করবে। এটি স্পষ্ট যে, এটি কেবল নাম পরিবর্তনের বিষয় নয়, বরং মারাঠা ঐতিহ্য এবং সাংস্কৃতিক পরিচয়কে পুনরুদ্ধার করার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

নাম পরিবর্তনের জন্য আগেও উঠেছে দাবি

এর আগেও মহারাষ্ট্রে অনেক স্থানের নাম পরিবর্তনের দাবি উঠেছে। সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী এবং ছত্রপতি সম্ভাজীনগর জেলার অভিভাবক মন্ত্রী সঞ্জয় শিরসাট সম্প্রতি খুলতাবাদের নাম পরিবর্তন করে ‘রত্নপুর’ এবং পার্শ্ববর্তী দৌলতাবাদ-এর নাম পরিবর্তন করে ‘দেবগিরি’ করার দাবি জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, খুলতাবাদ, যেখানে মোগল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের কবর রয়েছে, একটি বিতর্কিত ঐতিহাসিক স্থানে পরিণত হয়েছে এবং সেখানকার মূল পরিচয় পুনরুদ্ধার করা জরুরি।

শিরসাট দাবি করেছিলেন যে, খুলতাবাদের আসল নাম ছিল রত্নপুর, যা মোগলদের শাসনামলে পরিবর্তন করা হয়েছিল। একইভাবে, দৌলতাবাদও ঔরঙ্গজেবের সময়ে নতুন নাম পায়। তিনি বলেন, যে স্থানগুলির নামের সঙ্গে ‘-বাদ’ যুক্ত রয়েছে, সেগুলিকে তাদের মূল ঐতিহাসিক নামে ফিরিয়ে আনা রাজ্যের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পুনরুদ্ধারের দিকে একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।

সংস্কৃতি এবং রাজনীতির মিলন

রাজ্যে নামকরণের বিষয়ে উঠা দাবিগুলি কেবল রাজনৈতিক বাগাড়ম্বর নয়, বরং গভীর সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক অনুভূতিগুলির সঙ্গে জড়িত। বিজেপি নেতারা এটিকে মারাঠা পরিচয় ও ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত করে দেখছেন, অন্যদিকে সরকারও এই বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করার ইঙ্গিত দিচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, ছত্র নিজামপুর কি সত্যিই রায়গড় ওয়াড়িতে রূপান্তরিত হয় এবং মহারাষ্ট্রে নাম পরিবর্তনের এই ধারাবাহিকতা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকে কিনা।

Leave a comment