ঘুম না হলে শরীরে নানা সমস্যা
ব্যস্ত জীবনের টানাপোড়েন আজকের দিনে সাধারণ ব্যাপার হয়ে উঠেছে। কিন্তু এর সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়ে ঘুমের ওপর। রাতে ঘুম না হলে শুধু ক্লান্তিই নয়, শরীরের ভেতরে নানা জটিল সমস্যা জন্ম নেয়। হজমের গোলমাল থেকে শুরু করে মুড সুইং—সবকিছুর মূলে থাকতে পারে অপর্যাপ্ত ঘুম। চিকিৎসকেরা বলেন, যেমন করে শরীর টিকে থাকার জন্য খাবার আর জল অপরিহার্য, তেমনভাবেই ঘুমও আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।
কেন ঘুম এতটা গুরুত্বপূর্ণ
শরীর প্রতিদিনের ক্লান্তি ও পরিশ্রমের পর বিশ্রাম চায়। আর সেই বিশ্রামের সেরা মাধ্যম হল ঘুম। ঘুমের সময় শরীর শুধু বিশ্রামই নেয় না, বরং নিজেকে মেরামত করে, কোষ পুনর্গঠন হয়, মানসিক চাপ কমে যায়। তাই প্রতিদিন গড়ে অন্তত সাত থেকে আট ঘণ্টা গভীর ঘুম জরুরি। পর্যাপ্ত ঘুম মানেই শরীর ও মন দু’টোই থাকবে সতেজ।
আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করুন
ভালো ঘুম পেতে হলে প্রথমেই দরকার শান্ত পরিবেশ। শোবার ঘরে যতটা সম্ভব আলো কমিয়ে রাখতে হবে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, অন্ধকার ঘরে মেলাটোনিন হরমোনের নিঃসরণ বাড়ে, যা ঘুম আসতে সাহায্য করে। তাই রাতে জানালা-পর্দা টেনে রাখা উচিত। ঘরে যেন বাইরের শব্দ কম আসে, সেদিকেও নজর দিতে হবে। বিছানাও হতে হবে নরম, আরামদায়ক, যাতে শরীর পুরোটা জুড়ে শিথিলতা অনুভব করে।
শব্দ ও আলো থেকে দূরে থাকুন
রাতে আলো বা শব্দের সামান্যতম উপস্থিতিও ঘুমকে ব্যাহত করতে পারে। অনেক সময় বাইরের যানবাহনের আওয়াজ বা বাড়ির ভেতরে চলা টিভির শব্দ ঘুম ভেঙে দেয়। তাই ঘুমাতে যাওয়ার আগে নিশ্চিত করুন, দরজা-জানালা বন্ধ, পর্দা টানা এবং ঘর যথেষ্ট শান্ত। চাইলে হালকা সুগন্ধি মোমবাতি বা অ্যারোমা ডিফিউজার ব্যবহার করে ঘরে প্রশান্ত পরিবেশ তৈরি করা যেতে পারে।
ঘুমের আগে মোবাইল-টিভি নয়
আজকের দিনে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল মোবাইল আর টিভির নীল আলো। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নীল আলো চোখে পড়ে মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে, ফলে ঘুম আসতে দেরি হয়। তাই ঘুমানোর অন্তত এক ঘণ্টা আগে ফোন-টিভি একেবারে বন্ধ রাখা উচিত। ফোন সাইলেন্ট মোডে রাখলে অ্যালার্টের কারণে ঘুম ভাঙবে না।
মন শান্ত রাখতে ছোট্ট অভ্যাস
ঘুমানোর আগে মনকে শান্ত করার জন্য ছোট্ট কিছু অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। যেমন বই পড়া, হালকা গান শোনা বা প্রার্থনা করা। এগুলি মনকে প্রশান্ত করে এবং মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, এগুলো যেন শোবার আগে সীমিত সময়েই হয়, না হলে আবার দেরি হয়ে যেতে পারে।
ঘুমের নির্দিষ্ট সময় বজায় রাখুন
ঘুমানোর সময় যদি প্রতিদিন আলাদা হয়, শরীরের জৈবিক ঘড়ি বিগড়ে যায়। ফলে রাতে ঘুম আসতে দেরি হয় বা ভোরে অকারণে জেগে ওঠা শুরু হয়। তাই প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও সকালে একই সময়ে ওঠা জরুরি। এমনকি ছুটির দিনেও এই নিয়ম বজায় রাখলে শরীরের ঘুমের ছন্দ ঠিক থাকে। দীর্ঘমেয়াদে এটি ঘুমের মানও উন্নত করে।
খাদ্যাভ্যাসে সতর্কতা জরুরি
অনেক সময় খাওয়াদাওয়ার ভুল অভ্যাস ঘুমে সমস্যা তৈরি করে। বিকেল ও সন্ধ্যায় বেশি কফি, চা বা অ্যালকোহল খেলে ঘুম আসতে দেরি হয়। এগুলি স্নায়ুকে উদ্দীপিত করে শরীরকে জাগিয়ে রাখে। অন্যদিকে খালি পেটে শোওয়াও ঠিক নয়। আবার ঘুমানোর ঠিক আগে ভারী খাবার খেলেও অস্বস্তি হয়। তাই রাতে হালকা খাবার খাওয়াই সবচেয়ে ভালো।
ঘুম মানেই শরীর-মন সুস্থ রাখা
শুধু শরীর নয়, ভালো ঘুম মানসিক স্বাস্থ্যেরও মূল চাবিকাঠি। নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম পেলে একদিকে যেমন স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ বাড়ে, তেমনই স্ট্রেস কমে। তাই ব্যস্ত জীবনের নানা চাপের মধ্যেও তিনটি সহজ টিপস—শান্ত পরিবেশ তৈরি, ফোন-টিভি দূরে রাখা এবং নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানো—মেনে চললেই রাতের ঘুম হবে গভীর ও প্রশান্ত।