সোমবার বিকেলে ধূপগুড়ির এশিয়ান হাইওয়েতে হঠাৎ চাঞ্চল্য। শিলিগুড়ির পথে কোচবিহার থেকে ফেরার সময় আচমকাই নিজের কনভয় থামিয়ে রাস্তায় নামেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। অভিযোগ, এক যুবক সাদা পোশাকে দাঁড়িয়ে তাঁর কনভয়ের ছবি তুলছিলেন। তৎক্ষণাৎ সন্দেহ দানা বাঁধে শুভেন্দুর মনে।ছবিতোলা যুবককে সামনে পেয়েই ক্ষুব্ধ হন শুভেন্দু। রীতিমতো চেপে ধরেন তাঁকে, জানতে চান তাঁর পরিচয়। শুরু হয় জেরা, রাস্তার মধ্যেই উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়। পরে জানা যায়, ওই যুবক একজন সিভিক ভলেন্টিয়ার, যিনি ওই সময় ডিউটি করছিলেন সাধারণ পোশাকে।
‘স্যার ভুল হয়ে গিয়েছে’—পায়ে পড়ে ক্ষমা প্রার্থনা, ভাইরাল ভিডিও
প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে শুভেন্দুকে বারবার ক্ষমা চাইতে দেখা যায় ওই যুবককে। হাতজোড় করে, এমনকি বিরোধী দলনেতার পা ধরেও ক্ষমা চান তিনি। বলতে শোনা যায়— “স্যার, ভুল হয়ে গিয়েছে, দয়া করে ক্ষমা করে দিন।” সেই ভিডিও ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। এই দৃশ্য ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা, শাসক ও বিরোধী শিবিরে উত্তেজনার পারদ চড়ছে।শুধু সিভিক নয়, রাজ্য পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। শুভেন্দুর কটাক্ষ, “আজ পুলিশের কাজ যেন গাড়ি থামিয়ে টাকা আদায় করা, আর সেই টাকা পৌঁছে দেওয়া আইসি-র টেবিলে। এটাই এখন বাস্তব ছবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।” তাঁর দাবি, এই ধরনের ‘ছায়া গোয়েন্দাগিরি’ আর প্রশাসনিক অপব্যবহার মেনে নেওয়া যায় না।
‘চিরদিন কারও সমান যায় না’, স্পষ্ট বার্তা মমতা সরকারকে
শুভেন্দুর বক্তব্যে ছিল রাজ্য সরকারের উদ্দেশে কটাক্ষের সুরও। তিনি বলেন, “চিরদিন কারও সমান যায় না। এভাবে আর বেশিদিন চলবে না।” তাঁর মতে, তৃণমূল সরকারের পুলিশ বাহিনী আইন ভেঙে কাজ করছে, সিভিকদের দিয়ে রাজনীতির কাজ করানো হচ্ছে। রাজ্যজুড়ে বিরোধীদের উপর নজরদারি চালাতে এই ভুয়ো “আইবি”-র ব্যবহার হচ্ছে বলে তাঁর অভিযোগ।
জেলাশাসকের পাশে জেলা পুলিশ, সিভিকের পক্ষে সাফাই
তবে শুভেন্দুর এই অভিযোগকে খারিজ করেছে জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশ। জেলা পুলিশ সুপার উমেশ গণপত জানান, “যে যুবককে নিয়ে অভিযোগ উঠেছে, তিনি সিভিক হলেও আইবি শাখার অন্তর্গত। তাঁর কাজই তথ্য সংগ্রহ। ফলে তিনি সাদা পোশাকে কর্তব্যরত ছিলেন, যা সম্পূর্ণ বৈধ।” এর পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনের দাবি, কোনও অনৈতিক কাজ করেননি ওই সিভিক ভলেন্টিয়ার।
শুভেন্দুর আচরণ ঘিরে প্রশ্ন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত?
ঘটনার ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই নেটমাধ্যমে বিতর্ক তুঙ্গে। বিরোধী দলনেতার প্রকাশ্যে এভাবে একজন সরকারি কর্মীর সঙ্গে ব্যবহার কতটা শোভন, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। কেউ কেউ বলছেন, এটি রাজনৈতিক নাটক ছাড়া কিছু নয়। আবার অন্যপক্ষ বলছে, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত ইস্যুতে শুভেন্দুর উদ্বেগ ন্যায্য।
নতুন বিতর্কে শুভেন্দু, ভোটের আগে উত্তাপ বাড়াল ধূপগুড়ি কাণ্ড
২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচন সামনে রেখে রাজ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে। ঠিক সেই সময়েই ধূপগুড়ি কাণ্ড বিরোধী শিবিরে এনে দিল নতুন আলোচনার রসদ। তৃণমূল শিবির এই ঘটনাকে দেখছে জনমত ঘোরানোর কৌশল হিসেবে, অন্যদিকে বিজেপি নেতারা বলছেন, “আইনের অপব্যবহার আর নজরদারির রাজনীতি চলছে রাজ্যে।” ধূপগুড়ির রাস্তায় যতটা না ট্র্যাফিকের জট, তার চেয়েও বেশি যেন রাজনৈতিক ধোঁয়াশা ছড়াল এই ঘটনার পর।