সোনার দামে বড় পতন: কারণ ও সম্ভাব্য প্রভাব

সোনার দামে বড় পতন: কারণ ও সম্ভাব্য প্রভাব

সোমবার সোনার দামে বড়সড় পতন দেখা গেছে। এই পতন এতটাই বেশি ছিল যে সোনার দাম সরাসরি দুই সপ্তাহের সর্বনিম্ন স্তরে নেমে এসেছে। বিনিয়োগকারীদের জন্য ধাক্কা আরও বেড়ে যায় যখন জানা যায় যে আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে একটি বড় বাণিজ্যিক চুক্তি হয়েছে। এই চুক্তির পর নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে সোনার চাহিদা কমেছে।

স্পট গোল্ডের কথা বললে, এটি ০.১% পতনের সাথে ৩,৩৩২.৩৯ ডলার প্রতি আউন্সে এসে দাঁড়িয়েছে। এই দাম ১৭ই জুলাইয়ের পর সর্বনিম্ন বলে মনে করা হচ্ছে।

US-EU বাণিজ্য চুক্তির কারণে কমেছে নিরাপদ আশ্রয়ের ঔজ্জ্বল্য

সোনার দাম কমার সবচেয়ে বড় কারণ হল আমেরিকা ও ইউরোপের মধ্যে হওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক চুক্তি। এই চুক্তি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান উরসুলা ভন ডের লেয়েনের মধ্যে গত সপ্তাহে আলোচনা হয়েছিল। দুই নেতার মধ্যে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখন আমেরিকা থেকে আসা অনেক পণ্যের উপর ১৫ শতাংশ শুল্ক ধার্য করবে। বিশেষ বিষয় হল অটোমোবাইল সেক্টরের উপর ধার্য করা ২৭.৫ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে এখন মাত্র ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।

এই চুক্তির পর বিশ্ব বাজারে স্থিতিশীলতার পরিবেশ তৈরি হয়েছে, যার ফলে বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত হয়েছেন। ফলস্বরূপ, নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত সোনার প্রতি তাদের আগ্রহ কমে গেছে।

COMEX-এর উপরও দেখা গেল প্রভাব, রুপোর দামে সামান্য বৃদ্ধি

COMEX অর্থাৎ কমোডিটি এক্সচেঞ্জেও সোনার দামে পতন দেখা গেছে। এখানে সোনার দাম ০.০৭ শতাংশ কমে ৩,৩৩৩.৭০ ডলার প্রতি আউন্সে এসে দাঁড়িয়েছে। তবে রুপোর কথা বললে, এতে সামান্য বৃদ্ধি দেখা গেছে। রুপোর দাম ০.১৭ শতাংশ বেড়ে ৩৮.৪৩ ডলার প্রতি আউন্সে পৌঁছেছে।

এই সপ্তাহে ফেড-এর বৈঠক থেকে নির্ধারিত হবে সোনার গতি

এই সপ্তাহে বাজারের নজর থাকবে আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের দুই দিনের বৈঠকের উপর। এই বৈঠক থেকে এটা নির্ধারিত হতে পারে যে সোনার পরবর্তী গতি কী হবে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ফেড তাদের বেঞ্চমার্ক সুদের হার ৪.২৫ থেকে ৪.৫০ শতাংশের মধ্যে বজায় রাখতে পারে।

ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল সম্প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে অর্থনীতির আরও ডেটা সামনে না আসা পর্যন্ত কোনও ধরনের সুদের হারে পরিবর্তন করা হবে না। পাওয়েলের এই কথা থেকে এটা স্পষ্ট যে ফেড এইবার সতর্ক অবস্থান নিতে পারে।

ট্রাম্প ও পাওয়েলের বৈঠকেও বেড়েছে চাঞ্চল্য

গত শুক্রবার ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের মধ্যে হওয়া সাক্ষাৎও বাজারে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। ট্রাম্প এই সাক্ষাৎকে ইতিবাচক বলেছেন। তিনি আরও বলেছেন যে পাওয়েল সুদের হার কমানোর বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন।

যদি সত্যিই সুদের হার কমানো হয়, তাহলে এর সরাসরি প্রভাব পড়বে ডলারের শক্তির উপর। সেক্ষেত্রে সোনার দামে আবারও বৃদ্ধি দেখা যেতে পারে। কিন্তু আপাতত বিনিয়োগকারীরা সতর্ক রয়েছেন এবং সোনায় নতুন করে বিনিয়োগ করা থেকে বিরত থাকছেন।

টাকার ওঠানামাতেও দেখা যাবে প্রভাব

দেশীয় বাজারে সোনার দামের উপর আরও একটি বড় প্রভাব ফেলে ভারতীয় টাকার গতি। ডলারের বিপরীতে টাকা দুর্বল হলে ভারতে সোনার দাম বাড়তে পারে। কিন্তু এই মুহূর্তে বিশ্ব বাজারে ডলারের শক্তি বজায় রয়েছে, যার ফলে দেশীয় বাজারেও সোনার দামে চাপ সৃষ্টি হতে পারে।

বিয়ে-বাড়ির মরশুমে চাহিদা কম

সোনার দাম কমার পেছনে আরও একটি কারণ হল দেশীয় বাজারে চাহিদার অভাব। জুলাই-আগস্ট মাসে সাধারণত সোনার চাহিদা কম থাকে কারণ এই সময়টা বিয়ের মরশুম নয়। যতক্ষণ না উৎসব বা বিবাহের মরশুম শুরু হচ্ছে, ততক্ষণ সোনার কেনাকাটা সীমিত থাকবে।

সোনার গতির উপর নজর থাকবে এই বিষয়গুলোর উপর

  • আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে ভবিষ্যতে কী চুক্তি হয়
  • ফেড সুদের হার নিয়ে কী ঘোষণা করে
  • ডলারের শক্তি বা দুর্বলতা কেমন থাকে
  • দেশীয় বাজারে উৎসবের চাহিদা কবে শুরু হয়

এই মুহূর্তে সোনার দামে যে পতন এসেছে, তা বেশ কয়েকটি বিশ্বব্যাপী কারণের ফল। আগামী সপ্তাহগুলোতেও যদি ফেডের নীতি, ডলারের গতি এবং বিশ্বব্যাপী চুক্তিগুলোর এই রকম প্রভাব বজায় থাকে, তাহলে সোনার বাজারে আরও অস্থিরতা দেখা যেতে পারে।

Leave a comment