ভারত-আমেরিকা বাণিজ্য আলোচনা: ভুট্টা আমদানি নিয়ে টানাপোড়েন

ভারত-আমেরিকা বাণিজ্য আলোচনা: ভুট্টা আমদানি নিয়ে টানাপোড়েন

ভারত ও আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্য আলোচনা ফের শুরু হয়েছে, যেখানে ভুট্টা আমদানি একটি প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমেরিকা চীন থেকে তাদের বিক্রি কমে যাওয়ার কারণে ভারতের উপর চাপ সৃষ্টি করছে, অন্যদিকে ভারত শুল্ক এবং জিএম ভুট্টার নিষেধাজ্ঞার কারণে আমেরিকান ভুট্টা আমদানি করতে চায় না।

India-US Trade: ভারত ও আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্য আলোচনা ফের শুরু হয়েছে, যেখানে শুল্ক এবং জিএম ভুট্টা আমদানি প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমেরিকা চীন থেকে তাদের বিক্রি কমে যাওয়ার পর ভারতকে ভুট্টা বিক্রির জন্য চাপ সৃষ্টি করছে, কিন্তু ভারত অভ্যন্তরীণ বাজার এবং আমদানি নিয়মের কারণে আমেরিকান ভুট্টা আমদানি করবে না।

ভারতের ভুট্টা আমদানি

অর্থবর্ষ ২০২৪-২৫-এ ভারত মাত্র ১,১০০ টন আমেরিকান ভুট্টা আমদানি করেছে। এটি ভারতের মোট ০.৯৭ মিলিয়ন টন ভুট্টা আমদানির মধ্যে একটি নগণ্য পরিমাণ। ভারত মূলত মায়ানমার এবং ইউক্রেন থেকে ভুট্টা আমদানি করে। অন্যদিকে, আমেরিকা ভারতের কাছে ভুট্টা বিক্রির জন্য মরিয়া। আমেরিকান কর্মকর্তারা মনে করেন যে ভারতের আমেরিকার কাছ থেকে ভুট্টা কেনা উচিত।

আমেরিকার উদ্দেশ্য

আমেরিকা আগে তার ভুট্টার বৃহত্তম ক্রেতা ছিল চীন। কিন্তু চীন ২০২২ সালে ৫.২ বিলিয়ন ডলারের আমেরিকান ভুট্টা আমদানি কমিয়ে ২০২৪ সালে মাত্র ৩৩.১ কোটি ডলার করেছে। এই কারণে আমেরিকার মোট ভুট্টা রপ্তানিও ২০২২ সালের ১৮.৫৭ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে ২০২৪ সালে ১৩.৭ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। এই হ্রাসের কারণে আমেরিকা ভারতের মতো একটি বড় বাজারের সন্ধান করছে।

আমেরিকা চায় যে ভারত তাদের ভুট্টা কিনুক, তাই তারা ভারতের উপর চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে।

ভারতে ভুট্টার বর্তমান দাম

ভারত আমেরিকান ভুট্টা কেনার ব্যাপারে একাধিক কারণে দ্বিধা করছে। প্রথম কারণ হল শুল্ক। ভারত প্রতি বছর ৫ লক্ষ টন ভুট্টা আমদানির উপর ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। এর উপরে অতিরিক্ত আমদানির উপর ৫০ শতাংশ ভারী শুল্ক লাগানো হয়।

দ্বিতীয় কারণ হল জিএম (জেনেটিক্যালি মডিফাইড) ভুট্টার উপর নিষেধাজ্ঞা। ভারত জেনেটিক্যালি মডিফাইড ভুট্টার আমদানি নিষিদ্ধ করে। যেখানে আমেরিকায় ৯৪ শতাংশ ভুট্টা জিএম-ভিত্তিক। এটি ভারতের জন্য একটি বড় বাধা।

ভারত আমেরিকান ভুট্টা আমদানি করতে অস্বীকার করেছে

যদি আমেরিকান ভুট্টা ভারতে আসে, তাহলে অভ্যন্তরীণ বাজারের উপর এর গুরুতর প্রভাব পড়তে পারে। ভারতে ভুট্টার দাম ২২-২৩ টাকা প্রতি কেজি এবং সরকারের এমআরপি ২৪ টাকা প্রতি কেজি নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে, আমেরিকান ভুট্টা ১৫ টাকা প্রতি কেজি-রও কম দামে উপলব্ধ। এত সস্তা দরে আমেরিকান ভুট্টা এলে দেশীয় ভুট্টা চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।

এই পরিস্থিতিতে ভারত স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তারা আমেরিকান ভুট্টা আমদানি করবে না।

ভারত-আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্যিক আলোচনা চলছে

বর্তমানে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্যিক আলোচনা চলছে। আমেরিকা তাদের ভুট্টা বিক্রি বাড়ানোর জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। ভারত স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তারা অভ্যন্তরীণ বাজার এবং কৃষকদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই কোনও সিদ্ধান্ত নেবে। শুল্ক এবং জিএম ভুট্টার নীতিতে কোনও পরিবর্তন ভারত আপাতত করবে না।

দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক চুক্তিতে কৃষি আমদানি সবসময়ই একটি সংবেদনশীল বিষয় থেকেছে। আমেরিকার জন্য ভারত একটি বড় সম্ভাব্য বাজার, কিন্তু ভারত তার খাদ্য নিরাপত্তা এবং দেশীয় উৎপাদকদের সুরক্ষার প্রতি কঠোর অবস্থান নিয়েছে।

Leave a comment