শমিক ভট্টাচার্যকে বাংলা বিজেপির নতুন সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। RSS থেকে শুরু হওয়া তাঁর যাত্রা এবার প্রদেশের কমান্ড পর্যন্ত পৌঁছেছে। তিনি তৃণমূলকে সরানোর সংকল্প নিয়েছেন। দলে তাঁর গুরুত্ব ক্রমশ বেড়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ: পশ্চিমবঙ্গে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-র নতুন নেতৃত্ব এসেছে। দলের সিনিয়র নেতা এবং রাজ্যসভার সাংসদ শমিক ভট্টাচার্যকে প্রদেশ বিজেপি সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। কলকাতার সাইন্স সিটিতে আয়োজিত এক বিশাল অনুষ্ঠানে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশংকর প্রসাদ তাঁর নাম ঘোষণা করেন এবং শংসাপত্র প্রদান করেন। শমিককে সর্বসম্মতিক্রমে প্রদেশ সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে।
তৃণমূলকে সরানোর সংকল্প
সভাপতি পদের দায়িত্বভার গ্রহণ করেই শমিক ভট্টাচার্য আগামী বছর অনুষ্ঠিতব্য বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসকে ক্ষমতা থেকে সরানোর সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আসন্ন নির্বাচনে তৃণমূলের পরাজয় নিশ্চিত এবং এখন কোনো শক্তিই তাদের রক্ষা করতে পারবে না। সাইন্স সিটিতে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে হাজার হাজার বিজেপি কর্মী ও নেতারা তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান।
সিনিয়র নেতাদের উপস্থিতিতে সংবর্ধনা
এই অনুষ্ঠানে প্রাক্তন সভাপতি ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার, বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, বাংলা বিজেপির কেন্দ্রীয় ইনচার্জ সুনীল বনসল, প্রবীণ নেতা মঙ্গল পাণ্ডেসহ বহু সাংসদ, বিধায়ক এবং অন্যান্য দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সুকান্ত মজুমদার শমিককে দায়িত্ব অর্পণ করে বলেন, আমরা সবাই তাঁর নেতৃত্বে নির্বাচন লড়ব এবং তৃণমূলকে ক্ষমতাচ্যুত করব।
RSS থেকে রাজনৈতিক জীবন শুরু
শমিক ভট্টাচার্যের রাজনৈতিক জীবন একজন অনুগত কর্মী হিসেবে শুরু হয়েছিল। স্কুলের দিনগুলিতেই তিনি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (RSS)-এর শাখাগুলিতে অংশ নিতে শুরু করেন। এর পরে তিনি অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (ABVP)-এর সঙ্গে যুক্ত হন এবং এখান থেকেই তাঁর রাজনৈতিক যাত্রা আরও এগিয়ে যায়।
যুব মোর্চায় প্রভাব বৃদ্ধি
১৯৯০-এর দশকে শমিক ভারতীয় জনতা যুব মোর্চা (BJYM)-এর মাধ্যমে সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। এই সময়ে তাঁর সাক্ষাৎ হয় এবং ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে বিজেপির প্রভাবশালী নেতা রাহুল সিনহার সঙ্গে, যিনি পরে প্রদেশ বিজেপি সভাপতি হন। যুব মোর্চার দিনগুলিতেই তিনি দলের সাংগঠনিক কাঠামোতে তাঁর কঠোর পরিশ্রম ও ক্ষমতা দিয়ে পরিচিতি তৈরি করেন।
নির্বাচনী সংগ্রাম ও জয়
শমিক ভট্টাচার্য ২০০৬ সালে শ্যামপুকুর বিধানসভা কেন্দ্র এবং ২০১৪ সালে বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচন লড়েছিলেন, যদিও দুটিতেই তিনি পরাজিত হন। কিন্তু ২০১৪ সালেই অনুষ্ঠিত বসিরহাট দক্ষিণ বিধানসভা উপনির্বাচনে তিনি জয়লাভ করেন এবং প্রথমবারের মতো বিধায়ক হন। এই জয় তাঁর রাজনৈতিক জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় ছিল।
মন্ত্রী হতে অস্বীকার
জানা যায়, জয়ের পর তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে তাঁকে মন্ত্রী পদের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। এই পদক্ষেপ দলের প্রতি তাঁর আনুগত্য এবং আদর্শগত অঙ্গীকারকে তুলে ধরে।
শমিকের বিজেপিতে গুরুত্ব ক্রমশ বাড়তে থাকে। দলের মুখপাত্র হিসেবে তিনি তাঁর বক্তব্য শান্ত, সুষম ও যুক্তিপূর্ণভাবে উপস্থাপন করে সবসময় আলোচনায় এসেছেন। বিরোধী শিবিরেও তাঁকে একজন শান্ত ও স্থিতিশীল নেতা হিসেবে দেখা হয়। তাঁর ঘনিষ্ঠরা জানান, তিনি কখনও দলের অভ্যন্তরে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করেননি এবং সবসময় সংগঠনের প্রতি অনুগত ছিলেন।
রাজ্যসভার সদস্যপদ বৃদ্ধি
ভট্টাচার্যকে বিজেপি রাজ্যসভায় পাঠিয়ে তাঁর ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক গুরুত্বের স্বীকৃতি দেয়। এর মাধ্যমে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে দল তাঁকে বৃহত্তর দায়িত্বের জন্য প্রস্তুত করছে। প্রদেশ সভাপতি পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত থেকেও এটা স্পষ্ট হয় যে, দল আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে শমিক ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে একটি নতুন কৌশল নিয়ে নামতে চাইছে।