কলকাতায় বৃষ্টির দাপট: কলকাতা শহর যেন জলমগ্ন এক সমুদ্র। মাত্র কয়েক ঘণ্টাতেই বৃষ্টির পরিমাণ ছুঁল ২০০ মিলিমিটারের বেশি। আবহবিদরা একে বলছেন ‘ক্লাউডবার্স্ট’ বা মেঘভাঙা বৃষ্টি। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের দাবি, এখনও থেমে নেই বিপদের আশঙ্কা।
আধি রাত থেকে প্রবল বর্ষণ, ভোরেই বানভাসি মহানগর
সোমবার গভীর রাত থেকেই শুরু হয়েছিল হালকা বৃষ্টি। কিন্তু রাত বাড়তেই মেঘের গর্জন, বিদ্যুতের ঝলকানি আর সঙ্গে বৃষ্টি যেন তীব্র হয়ে ওঠে। ভোর হতে না হতেই শহরের একাধিক জায়গায় হাঁটু-সমান জল জমে যায়। কয়েকটি এলাকায় দুই থেকে তিন ঘণ্টার মধ্যে বৃষ্টির পরিমাণ ছাড়িয়েছে ২০০ মিলিমিটার।
ক্লাউডবার্স্টের সাক্ষী সাতটি এলাকা
হাওয়া অফিস জানিয়েছে, অন্তত ৭ জায়গায় টানা এক ঘণ্টা ধরে ১০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। সাধারণত এ ধরণের বৃষ্টিকেই বলা হয় ক্লাউডবার্স্ট। এবার সেই অভিজ্ঞতা ঘটল কলকাতায়। আবহবিদদের দাবি, এমন পরিস্থিতি আগে হিমালয় বা পাহাড়ি এলাকায় দেখা গেলেও এবার তা নেমে এল সমতল শহরে।
বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপেই বিপর্যস্ত দক্ষিণবঙ্গ
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপের জেরেই দক্ষিণবঙ্গ ভাসছে বৃষ্টিতে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও কলকাতা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, হাওড়া ও হুগলির একাংশেও জল জমেছে। তবে মেদিনীপুর, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ায় তুলনামূলক কম বৃষ্টি হয়েছে।
পুজোর আগে ফের বৃষ্টির সম্ভাবনা
হাওয়া অফিসের আশঙ্কা, এই বৃষ্টিপাত এখনই থামবে না। মঙ্গলবার সকালে খানিকটা কমলেও, এটি আসলে বিরতি মাত্র। আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ফের ঝড়-বৃষ্টি নামতে পারে। পুজোর তৃতীয়া থেকেই আরও এক দফা বৃষ্টির খেলা শুরু হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
উৎসব মুখর শহরে উদ্বেগ, ভোগান্তি চরমে
মহালয়া শেষ হতেই উৎসবের আবহে ভাসছিল শহর। কিন্তু প্রবল বৃষ্টি মুহূর্তে নামাল বিপর্যয়। রাস্তার ধারে জমে থাকা জল, যানজট, বিদ্যুতের তারে শর্ট সার্কিট – সব মিলিয়ে ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে সাধারণ মানুষের। অফিসযাত্রী থেকে স্কুলপড়ুয়া, সকলকেই পড়তে হচ্ছে সমস্যায়।
কলকাতার বৃষ্টির ডবল সেঞ্চুরি শুধু আবহাওয়ার রেকর্ড ভাঙেনি, শহরবাসীর জন্য এনেছে এক ভয়াবহ চ্যালেঞ্জ। আবহবিদরা জানাচ্ছেন, নিম্নচাপের প্রভাব আগামী কয়েক দিন জারি থাকতে পারে। ফলে এখনই স্বস্তির সম্ভাবনা কম। নাগরিকদের সতর্ক থাকতে হবে এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকেও জোরদার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।